এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য, কুলতলির ৯ বারের বিধায়ক কমরেড প্রবোধ পুরকাইত ২৬ মার্চ সকাল ৬.১৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জয়নগরের দক্ষিণাঞ্চল স্বাস্থ্যসদনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
গত শতকের ৬০-এর দশকে কৃষক আন্দোলন, বেনাম জমি উদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি মহান মাক্সর্বাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার সংস্পর্শে আসেন। হাইস্কুলের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি এসইউসিআই(সি) দলে যুক্ত হন এবং ১৯৬৭ সালে কুলতলি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে হাজার হাজার বিঘা বেনাম জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি করা হয়। বিধায়ক থাকা অবস্থায় তৎকালীন সিপিএম পরিচালিত সরকার সুন্দরবনে পরিবেশ বিনষ্টকারী বহুজাতিক সংস্থার ইকো ট্যুরিজম চালু করার চেষ্টা করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে তা প্রতিহত করেন। সুন্দরবনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন।
ওই দিন দুপুরে তাঁর মরদেহ লেনিন সরণির রাজ্য অফিসে আনার পর নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানিয়ে মাল্যার্পণ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ, পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য, কমরেড মানিক মুখার্জী ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যের পক্ষে মাল্যদান করা হয়। পলিটবুরো সদস্য ও কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক কমরেড স্বপন ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মানব বেরা, কমরেড অশোক সামন্ত, কমরেড সুভাষ দাশগুপ্ত সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ এবং বহু কর্মী সমর্থক মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দও মাল্যদান করেন। মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণ সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উপস্থিত কমরেডরা তাঁকে বিদায় জানান। মরদেহ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পৌঁছলে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাল্যদান করেন স্পিকার বিমান বন্দে্যাপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং তাপস রায়।
এরপর তাঁর মরদেহ জয়নগরে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে শত শত মানুষ বারুইপুর, গোচরণ, দক্ষিণ বারাসাত, বহড়ূ প্রভৃতি স্থানে গাড়ি থামিয়ে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। জেলা অফিসে কয়েকশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মাল্যদান করেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বারুইপুর জেলা সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক নন্দ কুণ্ডু, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সুজাতা ব্যানার্জীর পক্ষেও মাল্যদান করা হয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড তরুণ কান্তি নস্কর, রাজ্য অফিস সম্পাদক কমরেড রবি বসু, ডায়মন্ডহারবার সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক কমরেড মাদারালি নস্কর, ক্যানিং জেলা সম্পাদক কমরেড বাদল সর্দার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বহু মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
পরদিন কুলতলির চুপড়িঝাড়াতে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পথে বহু জায়গায় শত শত মানুষ সমবেত হয়ে চোখের জলে তাঁদের প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান। চুপড়িঝাড়াতে এই সংগ্রামী জননেতাকে শেষবার দেখার জন্যযেন জনপ্লাবন ঘটে। কয়েক হাজার মানুষের লাল সেলাম ধ্বনির মধ্য দিয়ে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কমরেড প্রবোধ পুরকাইত লাল সেলাম