উনিশে ডিসেম্বরের দুপুর। ঘড়ির কাঁটা তখন ১টা পেরিয়েছে। কলকাতার ব্যস্ত এসপ্ল্যানেড চত্বরের ওয়াই চ্যানেলে ভিড় করেছে অসংখ্য ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও তাদের বাবা-মায়েরা। এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের কিশোর সংগঠন কমসোমলের উদ্যোগে চলছে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান।
প্যালেস্টাইনের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে দশ হাজারেরও বেশি শিশু। প্রতি দশ মিনিটে একজন করে শিশু এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেপ্রতিদিন। সমবয়সীদের এই অকালমৃত্যুর প্রতিবাদেই পথে নেমেছে এই স্কুলপড়ুয়ারা। কলকাতা সহ এসইউসিআই(সি) দলের চোদ্দটি সাংগঠনিক জেলা থেকে এসেছে তারা। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে শতাধিক শিশু বাস ভাড়া করে এই জমায়েতে সামিল হয়েছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সবাই শিয়ালদা থেকে মিছিল করে পৌঁছেছে ধর্মতলায়। পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগণা, হুগলি, হাওড়া– সব মিলিয়ে জমায়েত হাজার পেরিয়েছে। ওরা রঙ-তুলি-কালি নিয়ে শৈশবের কোমল চিন্তার ছোঁয়ায় কাগজে ফুটিয়ে তুলছে সৃষ্টির ছবি– যে ছবি বলছে ধ্বংস নয়, মৃত্যু নয়। কেউ লিখে এনেছিল হাতে লেখা যুদ্ধবিরোধী পোস্টার। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়, নাচ-গান-কবিতা-নাটকে বার বার ধ্বনিত হয়েছে ধ্বংসের বিরুদ্ধে সৃজনশীল সুর। শিশু-কিশোররাই সংগ্রহ করেছে যুদ্ধবিরোধী সাক্ষর। রাজপথে চক দিয়ে লিখে দিয়েছে যুদ্ধবিরোধী স্লোগান।
ভারতবর্ষ এই প্রথম সাক্ষী থাকল, যুদ্ধবিরোধী কর্মসূচিতে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের। এই অবস্থানের গুরুত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন কমসোমলের রাজ্য ইনচার্জ সপ্তর্ষি রায়চৌধুরী। অবস্থানে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের ডাক্তাররা। তাঁদের পক্ষে ডাঃ দীপক গিরি অবস্থানে আগতদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। বর্ণনা করেন প্যালেস্টাইনে আক্রান্ত মানুষদের ভয়ঙ্কর অবস্থা, যুদ্ধের ভয়াবহতা। এস ইউ সি আই (সি) দলের পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড অমিতাভ চ্যাটার্জী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সান্টু গুপ্ত এবং কমরেড অনুরূপা দাস এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও এভাবেই শিশু-কিশোররা সামিল হয়েছিল প্রতিবাদী পথে। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের শহিদ মোড়ে যুদ্ধবিরোধী পোস্টার লিখে, যুদ্ধবিরোধী সঙ্গীত পরিবেশন করে তারা। শিলিগুড়িতেও ওই দিন অনুরূপ কর্মসূচি হয়। শিলিগুড়িতে যুদ্ধবিরোধী মানবতার গান ও কবিতার মাঝে যখন তাদেরই এক কর্মী মাইক্রোফোনে গাজার শিশুদের অবস্থা বলছিল, তখন দেখা গেল কিছু শিশুর চোখে জল। সেই চোখের জল রাস্তার ব্যস্ত মানুষকে থামিয়ে দিল তাদের অবস্থানের সামনে। ভাবালো তাঁদের। তাঁরাও জানালেন সহমর্মিতা।
জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কোচবিহার ও বীরভূমে এই কর্মসূচি পালিত হয়। দু’হাজার শিশু এবং অভিভাবক যুদ্ধের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।