এ বছর দেশের ১০টা রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাড়েনি এক টাকাও৷ পাঁচ রাজ্যে বেড়েছে দৈনিক মাত্র দু’টাকা৷ আর এই বছরেই ‘গরিব’ সাংসদদের মাইনে ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক ধাক্কায় এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় ওই টাকায় তাঁরা নাকি কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না, তাই মাইনে দ্বিগুণ করা হয়েছে যদিও এই সাংসদদের ৫৪১ জনের মধ্যে ৪৪২ জনই কোটিপতি৷ শুধু তাই নয়, এই কোটিপতিরাই নাকি সংসদে দেশভরা গরিব–গুর্বোদের প্রতিনিধি
যে বাজারদর হিসাব করে সাংসদদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই বাজারদর অনুযায়ী খেতমজুরের দৈনিক মজুরি অন্তত ছশো টাকায় দাঁড়ায়৷ কিন্তু সেটাও দিতে নারাজ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার৷ তবে কি সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিতে খেতমজুররা দারুণ ধনী!
খেতমজুরদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বাজারদরের আলাদা সূচক (কনজিউমার প্রাইস ইন্ডেক্স ফর এগ্রিকালচারাল লেবার) তৈরি করেছে৷ কংগ্রেস আমলে তৈরি হওয়া এই সূচক ধরে বিজেপি সরকার মজুরি নির্ধারণ করেছে৷ যদিও এর মধ্যেও গরমিল রয়েছে৷ ১০০ দিনের কাজের মজুরি নির্ধারণ করা হয় শিক্ষা–স্বাস্থ্য–পরিবহন-বিনোদন ও অন্যান্য নানা বিষয় ধরে, যা রাজ্য সরকারগুলি ঠিক করে৷ সেই হিসাবে মজুরির অঙ্ক বৃদ্ধি হওয়ার কথা৷ অথচ তা সেই অনুপাতে বাড়ানো হয় না৷ খেতমজুরদের ন্যূনতম মজুরি মেলে না৷ সুপ্রিম কোর্ট সহ নানা আদালত বারেবারে বলছে, ন্যূনতম মজুরির কম দিলে তা ‘ফোর্সড লেবার’ বা দাস–শ্রম৷ কিন্তু আইন–আদালতের ধার ধারে কে? ফলে ভয়াবহ অবস্থা খেতমজুরদের৷ সুখে–স্বচ্ছন্দে জীবন কাটানো দূর অস্ত, খাদ্য–বস্ত্র–ওষুধ–সন্তানের শিক্ষার ব্যয় বহন করা– এগুলির কোনওটাই এই মজুরিতে সম্ভব কি? কোনওরকমে বাঁচার চেষ্টা করে তারা৷ রাজ্য সরকারের কর্ণধাররাও চুপ৷ তারা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এত বিষোদগার করেন, অথচ এই অতি দরকারি বিষয়টি নিয়ে দরবার করতে পারেন না!
২০১৮–১৯ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ মাসে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে গড়ে ৫২ দিন কাজ করেছে ৩৭ লক্ষ পরিবার– এই ঘোষণা করে ‘উন্নয়নের’ জয়গান গাইছেন তৃণমূল সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রী৷ আবার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মজুরি বকেয়া পড়ে রয়েছে ৪২১ কোটি টাকা৷ মানে যারা কাজ করেছে, তারাও সকলে বেতন পায়নি৷ অথচ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই এই প্রকল্পের বরাদ্দ সরকারি অর্থ নাকি প্রায় শেষ৷ এই হল ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পের অবস্থা মন্ত্রী একেই উন্নয়ন বলছেন!
সত্যিকারের উন্নয়ন হলে, সত্যিই মানুষের হাতে সারা বছর কাজ থাকলে সরকারকে বিপুল ব্যয়ে বারবার চোখ ঝলসানো উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিতে হত না৷ মানুষ তাদের সাদা চোখে এবং জীবনের অভিজ্ঞতাতেই উন্নয়নের সুফল টের পেতেন৷ ১০০ দিনের কাজ গ্রামীণ জনজীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন রাজ্যে নাকি বেকারি কমেছে ৪০ শতাংশ এবং সেটা ১০০ দিনের প্রকল্পের জন্যই এমনিতেই বহু মানুষ এই প্রকল্পের বাইরে রয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, কাজের চাহিদা যত তার থেকে ৩২ শতাংশ কম কাজ পাচ্ছে মানুষ৷ তাতেও কীভাবে বেকারি কমে গেল তার ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না৷ তার উপর যাঁরাও ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত, তাঁরা বছরের বাকি ২৬৫ দিন কী কাজ করবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, তাই নিয়ে সরকারের কোনও মাথা ব্যথা নেই৷ খেতমজুরদের দাবি, বছরে অন্তত ২০০ দিনের কাজ চাই৷ চাই বাঁচার মতো মজুরি৷ কেন্দ্র–রাজ্য দুই সরকারের ভূমিকায় এই প্রকল্প ধুঁকছে৷ ক্ষোভ বাড়ছে খেটে–খাওয়া মানুষের৷ আগামী ৩০ জানুয়ারি এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর ডাকে হাজারে হাজারে তাঁরা আসবেন কলকাতায় মহামিছিলে৷