‘আগে উপযুক্ত পুনর্বাসন, পরে খনি নির্মাণ’– এই দাবিতে সোচ্চার হল ‘অল ইন্ডিয়া জনঅধিকার সুরক্ষা কমিটি’র বীরভূম জেলা শাখা। জেলার মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা খনি তৈরির যে প্রকল্প রাজ্য সরকার নিয়েছে তাতে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিয়ে নানা অস্বচ্ছতা রয়েছে। কোথায় পুনর্বাসন দেবে, কী মাপের ঘর দেবে, সেখানে আলো-বাতাস ঢুকবে কি না, রোজগারের ব্যবস্থা কী হবে, খনিতে চাকরি মিলবে কি না, কয়লা তোলা শেষ হয়ে গেলে তখন কাজ থাকবে কি না, আর্থিক প্যাকেজ কতটুকু দেবে, তার দ্বারা লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ও সুদ হ্রাসের এই পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে সুরক্ষা কোথায় গিয়ে নামবে– ইত্যাদি আশঙ্কা এই এলাকার সাধারণ মানুষ বিশেষ করে আদিবাসী ও গরিব মানুষকে ভাবাচ্ছে। কারণ তাদের সামনে রয়েছে অতীতের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা।
পাঞ্চেত, মাইথন, সুবর্ণরেখা জলাধার নির্মাণের জন্য যে পরিবারগুলি উচ্ছেদ হয়েছে, তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, বিশেষ করে আদিবাসীদের। কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে কয়লাখনির জন্য উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলির পুনর্বাসনের জন্য চুক্তি হলেও কোম্পানি পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করেনি।
কমিটি সঙ্গতভাবেই দাবি করেছে, আগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তার পর কয়লা খাদানের কাজ শুরু করা যেতে পারে। কমিটির পক্ষে মার্শাল হেমব্রম জানান, তাঁরা ৩ ডিসেম্বর বীরভূম জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁদের দাবি– ১) প্রতি পরিবারে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে, ২) খনির জন্য যে পরিবারগুলি উচ্ছেদ বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে (ভূমিহীন পরিবার সহ) তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে, ৩) আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে আদিবাসী সমাজের সংগঠনের প্রধানের সুপারিশ অনুযায়ী এই তালিকা তৈরি করতে হবে এবং প্রকাশ্যে টাঙাতে হবে, ৪) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দুর্নীতিমুক্তভাবে জমি, বাড়ি সহ স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্থির করতে হবে, ৫) সরকারি জমিতে বসবাসকারী প্রত্যেককে বাড়ি সহ উপযুক্ত পুনর্বাসন দিতে হবে, ৬) বাড়ি-বিদ্যুৎ-শৌচালয়-পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও যোগাযোগের ব্যবস্থা সহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে খনির কাজ শুরু করা চলবে না।