তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার অভাব নিয়ে কেন্দ্রীয় শক্তিমন্ত্রী হঠাৎ যে শোরগোল তুলেছেন তাতে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করে এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত ১৬ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে যেখানে ২০ দিনের কয়লা মজুত থাকার কথা, সেখানে মাত্র ৪-৫ দিনের মতো কয়লা রয়েছে বলে মন্ত্রী যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে আমরা বিস্মিত।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের সংকটগ্রস্ত পুঁজিপতি শ্রেণি বর্তমানে কয়লা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সহ গোটা শক্তিক্ষেত্রটিকে নিয়ন্ত্রণে এনে তার ওপর আধিপত্য কায়েমের জন্য প্রতিযোগিতায় রত। তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত আজ্ঞাবাহক হিসাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বেসরকারিকরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সালে ‘কয়লায় আত্মনির্ভরতা’-র নামে কয়লা খনিগুলির বেসরকারিকরণ করেছিল এবং ‘ক্যাপটিভ’ খনিগুলি বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিয়েছিল। অভিজ্ঞতা বলছে, কয়লা ক্ষেত্রের সামনের সারির শিল্পপতিরা ক্যাপটিভ খনিগুলি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য পুঁজি বিনিয়োগে রাজি নয়। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে তারা কয়লা আমদানি করছে এবং তার দাম বেশি করে দেখিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা লুট করছে। ইতিমধ্যে কৃত্রিম সংকটের সুযোগ নিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দাবিতে টাটারা গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে গুজরাটে তাদের ৪০০০ মেগাওয়াটের মুন্দ্রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে রেখেছে।
কমরেড দাশগুপ্ত আরও বলেন, বাড়তি প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন বাড়ানোর বদলে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা উৎপাদক সংস্থা কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড ২০১৭-১৮ সাল থেকে তাদের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি টন কমিয়ে দিয়েছে। বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থে বিজেপি সরকারের নির্দেশেই কোল ইন্ডিয়ার এই পদক্ষেপ। ২০১৬ সালে কোল ইন্ডিয়ার উদ্বৃত্ত ৫০ হাজার কোটি টাকায় সংস্থাটির সম্প্রসারণ, নতুন খনির ব্যবহার ইত্যাদি শুরু না করে বিজেপি সরকার তা কেন্দ্রীয় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যবহার করছে এবং এর দ্বারা কোল ইন্ডিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে সাধারণ মানুষের সামনে সংস্থাটির ভাবমূর্তি নষ্ট করে বেসরকারিকরণের দরজা হাট করে খুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, এআইইউটিইউসি দৃঢ়ভাবে মনে করে, আমাদের দেশে কয়লাসঙ্কটের কোনও অস্তিত্ব নেই। একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থে সর্বাত্মক বেসরকারিকরণের জন্য এ হল একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। এই অবস্থায় সংগঠনের দাবি– কয়লা ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাহার করুক, কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি মালিকদের প্রয়োজনমাফিক কয়লা উত্তোলনের নির্দেশ দিক এবং এই কঠিন পরিস্থিতিতে মাশুল বৃদ্ধির দাবিতে যে সব বেসরকারি মালিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।