পূর্ব মেদিনীপুরে ভগবানপুরের বিভীষণপুরে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ২০০৮ সালে বন্যার পর কৃষকদের কৃষিঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে দেখিয়ে প্রতি কৃষককে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি প্রায় ৪৭ হাজার টাকা তাদের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করিয়ে তার রসিদ ব্যাঙ্ক নিজের কাছে রেখে দেয়। জানানো হয়, এ টাকা আর ফেরত দিতে হবে না। ফলে চাষিরা নিশ্চিন্তে সেই টাকা খরচ করেন।
এরপর ২০১৭ সালে ওই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ঋণ-খেলাপি বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা দাবি করে কৃষকদের নোটিশ পাঠান। পরে চাষিদের বাড়িতে বাড়িতে এজেন্ট পাঠিয়ে চাপ দেওয়া হয় এবং তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া কৃষক-বন্ধু বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা কেটে নেওয়া হয়। চাপ সৃষ্টি করতে বহু গ্রাহকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়।
এই অন্যায়ের প্রতিবাদ চেয়ে তিনশোরও বেশি কৃষক এলাকার নাগরিক সংগঠন ‘ভগবানপুর প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গ্রামে গ্রামে গ্রাহকদের প্রতিবাদী গণকমিটি গড়ে ওঠে। ব্যাঙ্কের বিভীষণপুর শাখার সামনে একাধিক বার বিক্ষোভ দেখানো হয়। তিন মাস আগে সেখানে প্রতারিত চাষিরা বিক্ষোভ অবস্থান করেন। শেষে ব্যাঙ্কের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সমস্যা সমাধানে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরেও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও এজেন্টরা নানা ভাবে কালহরণ করে চাষিদের হয়রান করতে থাকেন। লাগাতার বিক্ষোভ চলতে থাকে। আন্দোলনের চাপে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ নামমাত্র টাকায় ঋণ মকুব করতে বাধ্য হন। সমস্ত এপ্রিল মাস জুড়ে এই প্রক্রিয়া চলেছে এবং প্রত্যেকের হাতে ঋণ মকুবের শংসাপত্র তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ।
ভগবানপুর প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন অজিত ভুঁইয়া, বুদ্ধদেব রায়চৌধুরী, আজিজুর রহমান, অশোক মাইতি, রঞ্জিত গিরি, শক্তি মান্না, শচীন মান্না, এআইকেকেএমএস-এর জেলা সম্পাদক জগদীশ সাউ। আন্দোলনে সহযোগিতা করেন ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরামের রাজ্য সম্পাদক গৌরীশঙ্কর দাস।