করোনার অজুহাতে ‘সবাই পাশ’ ঘোষণা শিক্ষাস্বার্থ বিরোধী


সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলে পরীক্ষা-পর্বে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বোর্ড তাদের পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবং আর কতদিন এই পরিস্থিতি চলবে তা নির্ধারণ করতে না পারায় গত ১ এপ্রিল ওই বোর্ড ঘোষণা করে যে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু রাজ্যের সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ঠিক পরদিনই শিক্ষক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন বা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত তেমন কাররও সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে পশ্চিমবঙ্গে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘সবাই পাশ’ ঘোষণা করে দিলেন।
প্রশ্ন হল, যেখানে এই শিক্ষাবর্ষ আগামী ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে, সেখানে ২ এপ্রিলই ‘সবাই পাশ’ ঘোষণার কী দরকার ছিল? শিক্ষার অধিকার (সংশোধিত) আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী পাশ বা ফেল করানোর কথা। আর জনগণের দাবি প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ ফেল ব্যবস্থা চালু করা। রাজ্য সরকার জনগণের দাবি তো উপেক্ষা করছেই, এমনকি পাশ ফেলের প্রশ্নে আইনি অধিকারটাও প্রয়োগ করতে তারা টালবাহানা করে চলেছে। আর করোনার অজুহাতে সেই অধিকারটুকুও জলাঞ্জলি দিতে তাঁদের তর সইল না।
অন্যান্য বছর স্কুলে যেমনই ক্লাস হোক না কেন, তাতে কমবেশি যতটুকুই পড়াশুনা হত বা ছাত্রছাত্রীরা যতটুকুই শিখত, এ বছর করোনার কারণে ছুটি ও লকডাউনের জেরে তার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে স্কুল খোলার পর ‘রেমেডিয়াল মেজার’ বা ক্ষতিপূরণের পদক্ষেপ হিসাবে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কয়েক বছর আগে যখন এপ্রিল-মার্চ শিক্ষাবর্ষকে জানুয়ারি-ডিসেম্বরে ফিরিয়ে আনা হল, সেই বছর শিক্ষাবর্ষ তিনমাস কমে গিয়েছিল। তার জন্য সিলেবাস শেষ করতে স্কুলগুলি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিল।
এবারও সময় ও পরিস্থিতি বুঝে সেরকম কিছু করা যেতে পারত। কিন্তু রাজ্য সরকার সেসব কিছুই না ভেবে করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার ন’মাস আগেই সকলকে ‘পাশ’ ঘোষণা করে দিল। এই পদক্ষেপ শিক্ষার ভালোর জন্য নয়।
সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলগুলি মূলত বেসরকারি মালিকানাধীন। সেগুলি সবটাই ব্যবসার ক্ষেত্র। নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রভর্তি, ফি-আদায়, ডোনেশন আদায় ইত্যাদি কর্মকাণ্ড হয় এই এপ্রিলে। করোনার কারণে পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় ব্যবসা যাতে মার না খায়, তাই ‘সবাই পাশ’ ঘোষণা করে ব্যবসাটা মসৃণভাবে চলতে দেওয়াটা সিবিএসই বোর্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেসব স্কুলে যারা পডে, তাদের বেশিরভাগই সচ্ছল পরিবারের। তারা বাড়িতে টিউটর রেখে এবং অনলাইনে পড়াশোনা করে পুষিয়ে নিতে পারবে।
ফলে সিবিএসই-র সাথে রাজ্য সরকার যদি ‘পাশ’ ঘোষণার প্রতিযোগিতায় নামে তা হলে সিবিএসই-র ছাত্রছাত্রীরা শিখতে শিখতেই উঁচু ক্লাসে উঠবে, আর আমাদের রাজ্যে ‘মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়’ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী সাধারণ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবেন।