কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তানের দশম কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের শুভেচ্ছা বার্তা

প্রিয় কমরেড ইমদাদ কাজি

সাধারণ সম্পাদক

সিপিপি

১৩ জুন, ২০২৩                     

ইসলামাবাদে আপনাদের পার্টির দশম কংগ্রেসে (১৬-১৮ জুন) আমাদের দলের দু’জন প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও ভিসা না পাওয়ায় আমরা যেতে পারলাম না। দুঃখজনক হলেও এ ঘটনা আমাদের মেনে নিতেই হল।।

পাকিস্তানে চূড়ান্ত নিপীড়নমূলক শাসন বহাল থাকার ফলে যেখানে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ চালানোই প্রায় অসম্ভব, সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তান সাহসের সঙ্গে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের পতাকা উর্ধ্বে তুলে রেখেছে। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

প্রিয় কমরেড, এমন একটা সময়ে আপনারা আপনাদের পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দশম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করছেন যখন ভারত ও পাকিস্তান সহ সমগ্র বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গভীর অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকটে নিমজ্জিত। অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকট মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। উন্নত ও অনুন্নত পুঁজিবাদী দেশ নির্বিশেষে সর্বত্র জনগণ সমস্যা সংকটে জেরবার হয়ে রাস্তায় শাসকের লাঠি-গুলির মুখেও বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে।

নানা অংশের মেহনতি জনগণের বিক্ষোভের ঢেউ একের পর এক প্রায় রোজই কোথাও না কোথাও আছড়ে পড়ছে। বিক্ষুব্ধ জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বত্রই শাসক শ্রেণিগুলি জনগণকে উগ্র জাতীয়তাবাদ, জাতিবাদ, ধর্মীয় ও ভাষাগত বিভাজন ইত্যাদির ফাঁদে ফাঁসিয়ে দিয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত করতে চাইছে এবং বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ উত্তেজনা ও আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু শাসক শ্রেণিগুলির এই চক্রান্ত সত্ত্বেও এমনকি আমেরিকা ও ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতেও প্রায় প্রতিদিন গণবিক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। কিন্তু সংগঠিত কমিউনিস্ট পার্টি বা শক্তি যারাই একমাত্র এই সব আন্দোলনগুলিকে যুক্তিসঙ্গত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তারা অনুপস্থিত থাকার ফলে আন্দোলনগুলি কিছু দূর গিয়ে থিতিয়ে পড়ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং মহান স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েট ইউনিয়নের বিজয় পরবর্তী দুনিয়ায় এশিয়া আফ্রিকা ল্যাটিন আমেরিকার ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হয় এবং পুঁজিবাদী দেশগুলিতে শুরু হয় শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন। মহান মাও সে-তুংয়ের নেতৃত্বে চিন বিপ্লবের সাফল্য বিশ্বের সকল কমিউনিস্ট পার্টি ও শক্তিগুলিকে আরও প্রেরণা দেয়। এই পটভূমিতেই ১৯৫৩ সালে মহান স্ট্যালিনের জীবনাবসান ঘটে যায়। তারপরই আসে ১৯৫৬ সালে রেনিগেড ত্রুশ্চেভের নেতৃত্বে সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতি কংগ্রেস– যেখানে ব্যক্তিপূজাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নামে মহান স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে আক্রমণ হানা হয়। সেই সময়ই আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং এ যুগের বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ত্রুশ্চেভের নেতৃত্বে এই স্ট্যালিনবিরোধী আক্রমণের দ্বারা সাম্যবাদী আন্দোলনে স্ট্যালিনের অথরিটিকেই খাটো করা হচ্ছে, যা কার্যত লেনিনকেই অস্বীকার করা হয়ে দাঁড়াবে, লেনিনবাদের বিপ্লবী শিক্ষাগুলিকে ধ্বংস করবে, যা কালক্রমে আদর্শগত ভাবে শোধনবাদের জোয়ার সৃষ্টিতেই সাহায্য করবে। এই শোধনবাদী জোয়ারই শেষ পর্যন্ত সোভিয়েট ইউনিয়ন ও চিনে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের পার্টির উপযুক্ত শক্তি না থাকার জন্য বিশ্বের কমিউনিস্টদের এই হুঁশিয়ারি আমরা শোনাতে পারিনি।

এখন আমরা সকলেই জানি, শোধনবাদী আক্রমণের পরিণামে বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনে কী বিপর্যয় নেমে এসেছে, কী ভাবে তা বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। কিন্তু আশার কথা এই যে, বিশ্বের বহু দেশেই আবার কমিউনিস্ট পার্টি ও নানা গোষ্ঠী নতুন করে উঠে দাঁড়াচ্ছে। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের সঠিক উপলব্ধি ও বর্তমান পরিস্থিতিতে তার সঠিক প্রয়োগের ভিত্তিতে মেহনতি মানুষকে সঠিক দিশা ও পথনির্দেশ দেখানোর মধ্য দিয়ে একটি শক্তি হিসাবে এরাই উঠে দাঁড়াবে।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা দুই পার্টি একত্রে কাজ করতে চাই। আমাদের মধ্যে মতবিনিময় চলতে থাকুক। আপনাদের পুস্তক-পুস্তিকা, বিবৃতি এবং দশম কংগ্রেসে গৃহীত দলিলগুলি আমাদের পাঠাবেন। আমরাও আমাদের পত্রপত্রিকা ও প্রকাশনা আপনাদের পাঠাব।

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ জিন্দাবাদ। সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ জিন্দাবাদ।

বিপ্লবী অভিনন্দন সহ

প্রভাস ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)