ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব, পরবর্তীকালে চাষি-মজুরের বহু দাবি আদায়ে সফল আন্দোলনের বলিষ্ঠ ও প্রবীণ নেতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এস ইউ সি আই (সি)-র পূর্বতন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কমরেড রবীন মণ্ডল গত ১ নভেম্বর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার নগেন্দ্রপুরের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি বেশ কয়েক বছর প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন।
মৃত্যুসংবাদ পেয়েই জেলা নেতারা তাঁর বাড়িতে পৌঁছন। জেলার সকল অফিসে পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। কমরেডরা কালো ব্যাজ পরিধান করেন। পরদিন মরদেহ কলকাতায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ও রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যের পক্ষে মাল্যদান করা হয়। পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু এবং উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কমরেড রবীন মণ্ডলের প্রবাদপ্রতিম সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়। এরপর তিন বারের নির্বাচিত বিধায়ক প্রয়াত নেতার মরদেহ বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সহ উপস্থিত বিধায়করা মাল্যদান করেন। সেখান থেকে মরদেহ জয়নগর অফিসে আনা হলে জেলা সাংগঠনিক কমিটিগুলি ও গণসংগঠন সমূহের পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পর তাঁর নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় কৃষ্ণচন্দ্রপুর, রায়দিঘি মোড়ে সাধারণ মানুষ এবং দলের কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পিত হয়।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই মহান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ এ দেশে একটি সত্যিকারের চাষি-মজুর তথা শোষিত মানুষের দল গড়ে তুলতে যে অনন্যসাধারণ সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, তার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিল সুন্দরবন এলাকা। চরম বঞ্চিত এই এলাকার মানুষের মধ্যে অধিকারবোধ জাগ্রত করার সাথে সাথে শাসকদের শ্রেণিচরিত্র চেনানো এবং সরকার ও জোতদার-মহাজনের সম্মিলিত সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আত্মত্যাগের মানসিকতা গড়ে তুলে যে দীর্ঘস্থায়ী গণপ্রতিরোধ দলের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল, সেই সংগ্রাম শুধু অত্যাচারী জমিদার-জোতদার-মহাজনদেরই পরাস্ত করেনি, গড়ে তুলেছিল এ দেশে সত্যিকারের বিপ্লবী কমিউনিস্ট দল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তি, জনভিত্তি। গড়ে তুলেছিল কৃষক সংগ্রামের হাতিয়ার কৃষক ও খেতমজুর ফেডারেশন বা কে কে এম এফ– যা পরবর্তীকালে এ আই কে কে এম এস নামে পরিচিত হয়। এই সংগ্রাম গড়ে তুলতে দলকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছিল। নির্ভীক সেই লড়াই দমন করার জন্য পুলিশ-প্রশাসন, শাসক দল, সমাজবিরোধী ও জোতদার-মহাজন চক্র অত্যাচারের সমস্ত রকম পথ ও পদ্ধতিকে ব্যবহার করেছে। জমির ফসল লুঠ, জমি থেকে চাষিদের উচ্ছেদ, পুলিশি অত্যাচার, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার, খুন, লাশ গায়েব করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া, ঘর জ্বালানো, নির্মম নারী লাঞ্ছনা, ধর্ষণ– সমস্ত কিছুই দলের নেতৃত্বে অসীম বীরত্বের সাথে মোকাবিলা করেছে এলাকার মেহনতি মানুষ। এই লড়াই তাঁদের চরিত্রকে করেছিল ইস্পাতদৃঢ, সৃষ্টি করেছিল এমন একদল নেতা-কর্মী যাঁরা মানবিকতায়, সংস্কৃতিতে, বিপ্লবী চরিত্রে অনন্য। সে দিন সহায়-সম্বলহীন এই দলের ডাকে বুক চিতিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার দুঃসাহস নিয়ে যে কয়েকজন নেতা এই জেলায় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রয়াত নেতা কমরেড রবীন মণ্ডল। বলা চলে সেই প্রথম যুগের বিশিষ্ট নেতাদের শেষ প্রতিনিধিকে আমরা হারালাম।
আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করতে জেলার বিশিষ্ট নেতা ও জেলা সম্পাদক কমরেড ইয়াকুব পৈলান পঞ্চম খণ্ডের বাজারে টিনের তৈরি চোঙের সাহায্যে বক্তব্য রাখার পর যারা আন্দোলন গড়ে তুলতে চান তারা নাম লেখান বলে আবেদন জানান। কৃষকদের পক্ষে এই আবেদনে সাড়া দিয়ে রবীনবাবু এগিয়ে এসে নাম লেখান। ইয়াকুব পৈলান তাঁকে দলের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটবুরোর দুই সদস্য প্রয়াত কমরেড শচীন ব্যানার্জী ও কমরেড সুবোধ ব্যানার্জীর সংস্পর্শে নিয়ে আসেন। মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ পরিচালিত শিক্ষাশিবিরে এসে ও তাঁর সাথে পরিচিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে দলের বৃহত্তর দায়িত্ব পালনে ব্রতী হন। কমরেড শচীন ব্যানার্জীর সুদক্ষ গাইডেন্সে তিনি কর্মী স্তর থেকে নেতৃত্বের স্তরে উন্নীত হন। দলের প্রথম পলিটবুরোর প্রয়াত সদস্য কমরেড প্রীতীশ চন্দ, হীরেন সরকার, তাপস দত্ত প্রমুখ নেতৃত্বের সক্রিয় সাহায্যে মেহনতি মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন পুষ্ট হয়ে ওঠে। জেলার অন্যতম নেতা কমরেড ইয়াকুব পৈলান, রেণুপদ হালদার, আমির আলি হালদার, নলিনী প্রামাণিক প্রমুখ বিশিষ্ট নেতাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই লড়াই গড়ে ওঠে।
নদী-সমুদ্রের বেষ্টনী আর জঙ্গলে ঘেরা নোনা মাটির দেশ, দুর্গম ও পশ্চাদপদ বহু দ্বীপ সমন্বিত অঞ্চলগুলিতে চাষি আন্দোলন তথা দলকে জনভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে কমরেড রবীন মণ্ডল বলিষ্ঠ পদক্ষেপে যাত্রা শুরু করেন। পূর্বতন মথুরাপুর, বর্তমানে রায়দিঘি বিধানসভার অন্তর্গত অনেক অঞ্চল তৎকালীন পাথরপ্রতিমা বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সাথে কুলতলীরও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভয়ানক দারিদ্র্যপীড়িত, নিরক্ষর মানুষদের নিয়ে গ্রামের পর গ্রামে কমিটি গড়ে তুলে পুরুষদের সাথেই মা-বোনদের হাজারে-হাজারে সংগঠিত করে তোলেন।
চাষিদের পক্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগণার মাটিতে ফসল ফলানো আর ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে তা রক্ষা করা ছিল এক দুরূহ কাজ। ততোধিক কঠিন ছিল জমিদার, জোতদার, লটদার, ধনী চাষি আর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা করে নিজেদের ঘাম-রক্ত ঝরানো চাষের ফসল নিজের ঘরে তুলতে পারা। জোতদার-ধনী চাষির নানা চক্রের ফাঁসে জড়িয়ে দিয়ে চাষিকে বাধ্য করা হত তার ‘রক্তে বোনা ধান’ প্রায় সবটাই জোতদার-মহাজনদের গোলায় তুলে দিতে। তাদেরই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে জঙ্গল কেটে তৈরি করা আবাদযোগ্য জমিতে চাষের অধিকার কেড়ে নিত জোতদাররা। ঘরের মা-বোনদেরও নিরাপত্তা ছিল না। অথচ প্রতিবাদ করার এতটুকু জো ছিল না। জোতদার-মহাজনেরা মনেই করত ‘এরা’ হল ‘পায়ের জুতো’, মুখ বুজে তাদের পায়ের নিচেই থাকতে হবে। একদিকে শোষিত শ্রেণির মানুষের প্রতি দরদ ও মমত্ববোধ, অপর দিকে শোষক শ্রেণি তথা জোতদার-মহাজনদের অত্যাচার-অনাচারের প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকে জীবনের পরোয়া না করে, দুরন্ত গতিতে এই আন্দোলনকে বলিষ্ঠ রূপ দিতে অগ্রণী ভূমিকা নেন কমরেড রবীন মণ্ডল। জোতদার-মহাজন চক্র এই আন্দোলন স্তব্ধ করতে সশস্ত্র আক্রমণ শানাতো। তা প্রতিরোধে লাঠি-বল্লম-সড়কি-তীরধনুক নিয়ে নিজেদের জীবন-জীবিকা-অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে বীরত্বের বহু কীর্তির জন্য তাঁকে মানুষ ‘রবিনহুড’ বলে সম্বোধন করতেন। বিগত শতাব্দীর ‘৬৭, ৬৯, ‘৭১ সালে তাঁরাই তাঁকে তিনবার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত করেন। এমনকি কারাগারে বন্দি থাকাকালীনও তিনি বিধানসভায় নির্বাচিত হন। তৎকালীন অন্যান্য নেতাদের মতোই তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতো। সেই সময় গ্রামে গ্রামে পুলিশ আসছে দেখলে মা বোনেরা শাঁখ-কাঁসর-থালা-বাটি বাজিয়ে তাঁকে সতর্ক করে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিত। এমনকি কখনও মহিলাদের পোশাক পরিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই বের করে নিয়ে যেত। তাঁর আন্তরিক ব্যবহার, দায়িত্ববোধ, অকপট সরল কথা বলা ইত্যাদির জন্য মানুষ তাঁর মাধ্যমে দলের প্রতি আকৃষ্ট হত। কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা মানুষের মধ্যে তুলে ধরার জন্য গ্রামের পর গ্রামে বৈঠক, গ্রুপ রিডিং, হাটসভা-পথসভা-জনসভা, রাজনৈতিক ক্লাস-শিক্ষাশিবির করাতেন। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকাকালীন বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি ছুটে যেতে চাইতেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে সভায় কমরেডরা নিয়ে যেতেন। যখন দৃষ্টিশক্তি অনেকটা হারান, তখন অন্য কমরেডদের সাহায্য নিয়ে দলের মুখপত্র ‘গণদাবী’ ও অন্যান্য পুস্তিকা পাঠ শুনতেন। ‘৫৯-এর খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের ও ‘৯০-এর গণআন্দোলনের শহিদ মাধাই হালদার স্মরণে ২০২১-এর ৩১ আগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগণার অতীতের গৌরবময় লড়াইয়ের স্মরণে ‘চাষি মজুরের অন্তহীন সংগ্রামের কথা’ পুস্তিকা প্রকাশের অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। সেই সভার সভাপতি ছিলেন কমরেড রবীন মণ্ডল। গত বছর জুলাই মাসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক কমরেড দেবপ্রসাদ সরকারের স্মরণসভায় গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও উপস্থিত হয়েছিলেন। এই সভাতেও প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ।
শারীরিক দিক থেকে শেষজীবনে অক্ষম হয়ে পড়লেও দল সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি ছিল প্রখর। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি জেলার অবিসংবাদিত সংগ্রামী জননেতা কমরেড আমির আলি হালদার সহ জেলার প্রায় দুই শত শহিদের স্মরণে অনুষ্ঠিত সভায় অসুস্থতার কারণে আসতে না পেরে তিনি লিখে পাঠিয়েছিলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা, এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক ও দার্শনিক, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের সান্নিধ্য যতটুকু পেয়েছি, হৃদয়ে কাঁপন ধরানো সে অনুভূতি আজও আমাকে ভাবায়-কাঁদায়। মনে তা উজ্জ্বল হয়ে আছে। তাই যে কমরেডকে যখনই কাছে পাই, তাদের কাছে বলি তাঁর সেই সব মূল্যবান শিক্ষাগুলো। আমার বোঝাটা যতটুকু, ততটুকু বলি। কাজ করতে না পারার দুঃখ আমি অনেকটাই ভুলে যাই গণদাবী বা দলের বইপত্রগুলো হাতে এলে। এক দিকে ক্রমাগতই রাজ্যের পর রাজ্যে সংগঠনের বিস্তার চলছে। চলছে সব সময়েই কোনও না কোনও আন্দোলন। ফলে কমরেডরা মার খাচ্ছেন, রক্ত ঝরাচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, আগুনে ঘর পুড়ছে, মা-বোনেরা অত্যাচারিত, এমনকি শহিদ হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও কমরেডরা ভয়ডরহীন ভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকছেন– তাতে বেদনার সাথে সাথে গৌরব অনুভব করি। অপর দিকে কমরেড শিবদাস ঘোষের প্রয়াণ বুকে শেল হেনে গেলেও তাঁরই শিক্ষায় শ্রদ্ধেয় নেতা কমরেড নীহার মুখার্জী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের বক্তব্যগুলি ও সুদক্ষ দল পরিচালনা আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। … আজ মহান নেতার শিক্ষা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শোষিত শ্রেণিকে ভাবাচ্ছে, আলোড়িত করছে– জীবনে এ জিনিস দেখে শুনে যাওয়ার আনন্দই আলাদা।’
তাঁর জীবনসংগ্রাম ও দল সম্পর্কে গভীর অনুভূতি, দল তথা নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের বৈশিষ্ট্য আগামী দিনে কর্মীদের জীবনসংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ২৫ নভেম্বর জয়নগরে শচীন ব্যানার্জী-সুবোধ ব্যানার্জী স্মরণে নির্মীয়মাণ ভবন সংলগ্ন ময়দানে তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ।