বাসদ (মার্কসবাদী)–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত ভাষণ
নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই বিশাল সমাবেশ, সোস্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট)–এর জেনারেল সেক্রেটারি কমরেড প্রভাস ঘোষ, মঞ্চে উপবিষ্ট পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যগণ সবাইকে লাল সেলাম জানিয়ে আমি খুব অল্প কয়েকটা কথা বলব৷ এই দুর্যোগের মধ্যে এই বিশাল সমাবেশ নভেম্বর বিপ্লবের শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে৷ আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে যে একটা পার্টি সম্পূর্ণ আদর্শের জোরে এবং তার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী–সংগঠক–নেতা শক্তির জোরে এই বিশাল সমাবেশ করতে পেরেছে৷ এইরকম একটা সমাবেশ একমাত্র এই পার্টি ছাড়া আর কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ আমি এই দেশকে একরকম ভাবে জানি৷ এইরকম সমাবেশ করতে অন্যদের যে সরকারি ক্ষমতা, সংসদীয় রাজনীতি, পার্লামেন্টের মেম্বার ইত্যাদি বহু শক্তি ও আর্থিক শক্তির সহায়তা লাগত, এই পার্টির তা নেই৷ এই পার্টি সম্পূর্ণ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জনগণের উপরে নির্ভর করে এতবড় সমাবেশ করেছে৷ আজ হাজার হাজার কমরেড কষ্ট করে এখানে এসেছেন৷ কমরেড শিবদাস ঘোষের নিজের হাতে গড়া পার্টি আজকে কত বড় হয়েছে দেখে গৌরব বোধ করছি৷ আমি সকল কমরেডকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)–র পক্ষ থেকে বিপ্লবী অভিনন্দন জানাই৷
রাশিয়ার মেহনতি মানুষ, কুলি–মজুররা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে মহান লেনিনের নেতৃত্বে যে বিপ্লব করেছিল তা দুনিয়াকে হতবাক করে দিয়েছিল৷ কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয় সেই শিক্ষা বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলার মধ্যে দিয়েই তারা পেয়েছিল৷ কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সেই দেশের শোষিত মানুষকে সকল রকমের শোষণের হাত থেকে বাঁচার রাস্তা দেখিয়েছে৷ কমরেড লেনিনের সুযোগ্য সহযোদ্ধা কমরেড স্ট্যালিন– বিপ্লব বাস্তবায়নের রূপকার, এইরকম একটা শক্তিশালী অভ্যুত্থানের পরে সমস্ত দিক থেকে রাশিয়ার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন এবং দুনিয়ার সব থেকে শক্তিশালী দেশে পরিণত করেছিলেন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন৷ কমরেড স্ট্যালিনের মৃত্যুর পরে পার্টির ২০তম এবং ২২তম কংগ্রেস শোধনবাদী রাজনীতির দ্বার খুলে দেয়৷ শোধনবাদের বিরুদ্ধে ২০তম কংগ্রেসের পর থেকে কমরেড শিবদাস ঘোষ বলে এসেছেন৷ শোধনবাদ যে বিপদ যে বিপর্যয় নিয়ে আসবে কমরেড শিবদাস ঘোষ তা অতিক্রমের পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন৷ কমরেড শিবদাস ঘোষ ব্যক্তিবাদের এই চরম প্রতিক্রিয়ার যুগে কীভাবে একটি সঠিক বিপ্লবী পার্টি গড়ে তুলতে হবে সে সম্পর্কে পথনির্দেশ করেছেন৷ আমরা বাংলাদেশে মার্কসবাদ–লেনিনব শিবদাস ঘোষের চিন্তা নিয়ে একটি বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম করছি৷ আমরা এখনও এতবড় হইনি কিন্তু সবরকম চেষ্টা করছি যাতে সকল রকমের শোধনবাদী চিন্তা এবং বিপ্লববিরোধী চিন্তার যে নানা ধরণের আক্রমণ, তা থেকে যাতে দলকে রক্ষা করা যায়৷ আমরা আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এস ইউ সি আই (সি)–কে একটা নেতৃত্বকারী পার্টি মনে করি৷ তাদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব৷ আমাদের যে অভিজ্ঞতা সেগুলি আমরা বিনিময় করব৷ এইভাবে দুই দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির যে মৈত্রী তা দীর্ঘজীবী করার আমরা চেষ্টা করব৷ এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)–র বন্ধন শক্তিশালী হোক, আমরা এই সংগ্রামের পথে এগিয়ে যাই৷