বিজেপি তার ‘সংকল্পপত্রে’ ঘোষণা করেছে, নির্বাচিত হলে কৃষকদের জন্য উচ্চহারে এমএসপি দেবে। এমএসপি হল কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। কেন এই সহায়ক মূল্য জরুরি? কারণ ভারতের কোনও রাজ্যেই কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। একদিকে সার-বীজ-কীটনাশক সহ সব কৃষি উপকরণের অত্যধিক দাম বৃদ্ধি, অন্য দিকে বাজারে ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ভারতে লক্ষ লক্ষ কৃষক ঋণগ্রস্ত হয়। ফলে কৃষক আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় কৃষক আন্দোলনের প্রধান দাবি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনসিদ্ধ করতে হবে এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে সরকারকে। সহায়ক মূল্য হবে উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুণ।
দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে অনেক টালবাহানার পর মোদি সরকার আশ্বাস দিয়েছিল এমএসপিতে কৃষিপণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার। কিন্তু ঘোষণাই সার। আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই তারা করেনি। এখন লোকসভা ভোটের সামনে কৃষক দরদি সাজতে এমএসপি-র সংকল্পপত্র ঘোষণা করেছে।
বাস্তবে এই সঙ্কল্পপত্র কৃষকদের সঙ্গে রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। গত বছর ৭ জুন কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে ১৭টি খরিফ শস্যের এমএসপি ৫-১০.৫ শতাংশ বাড়বে। অর্থাৎ গড় বৃদ্ধি ৭ শতাংশ। সিটি রিসার্চ দেখিয়েছে, এই সময়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ। তা হলে গড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি কৃষকদের সঙ্গে মস্ত বড় তামাশা ছাড়া আর কী?
তামাশার দ্বিতীয় পর্বটি হল ঘোষণা করেও কার্যকর করতে গড়িমসি করা। ক্রিসিল রিসার্চ রিপোর্ট দেখাচ্ছে উৎপাদিত ধানের মাত্র ৪৫ শতাংশ এমএসপি-তে কেনা হয়। তুলো কেনা হয় ২৫ শতাংশ, ডাল কেনা হয় ১-৩ শতাংশ। ফলে কৃষকরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন এই সঙ্কল্প তাদের সঙ্গে কত বড় প্রতারণা। মোদি সরকার কৃষিক্ষেত্রে আদানি-আম্বানিদের মতো কর্পোরেটদের ঢোকাতে কৃষক স্বার্থবিরোধী যে তিনটি কৃষি বিল এনেছিল, দেশের কৃষকরা তা ভোলেনি। কৃষকদের দাবি মানতে সরকার এক বছর ধরে টালবাহানা করার ফলে ৭০০-র বেশি কৃষককে শহিদের মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। এ রকম একটা চূড়ান্ত জনবিরোধী সরকারকে কোনও সচেতন কৃষক ভোট দিতে পারেন না। কৃষক মনে ক্ষোভের আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলছে। বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে কৃষক সংগঠনগুলির যুক্তমঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চা বিজেপিকে পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।