এনসিইআরটি-র স্কুল সিলেবাসের বিকৃতি সর্বনাশা– এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৭ জুন এক বিবৃতিতে বলেন, এনসিইআরটি স্কুল সিলেবাস সংস্কারের নামে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে এই নিয়ে চতুর্থ বার তাদের পাঠ্যবইয়ে সর্বনাশা পরিবর্তন আনল। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। তারা এর আগে দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের বই থেকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির মতো আধুনিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়কে বাদ দিয়়েছে। দু’জন বিশিষ্ট মুসলিম কবি ইকবাল এবং ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজের কবিতা বাতিল কর়েছে। মুঘল এবং সুলতানি আমলের ইতিহাস ছেঁটে ছোট করা হয়েছে। হুমায়ুন, শাহজাহান, আকবর, জাহাঙ্গির এবং ঔরঙ্গজেবের মতো মুঘল সম্রাটদের অবদান সংক্রান্ত দু’পাতা জোড়া তালিকাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ (কোল্ড ওয়ার) এবং জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের সময়ের ঘটনাও বাদ দেওয়া হয়েছে। একাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের পাঠক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে গুজরাটে সংখ্যালঘু বিরোধী ভয়ঙ্কর গণহত্যার কথা। অযোধ্যার (রামমন্দির-বাবরি মসজিদ) কথা চার পাতার বদলে দু’পাতায় আনা হয়েছে শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ওই স্থানেই যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রামমন্দির নির্মিত হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। বাবরি মসজিদকে ‘তিন গম্বুজের সৌধ’ নামকরণ করে বলা হয়েছে, তা ১৫২৮ সালে রামের জন্মস্থানে তৈরি হয়েছিল এবং তার ভেতরের ও বাইরের নানা অংশে হিন্দুদের নানা প্রতীক এবং ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের অংশগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। দাবি তোলা হয়েছে, হরিয়ানায় সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ নিদর্শন নাকি আর্যদের বাইরে থেকে আসার তত্ত্বকে খারিজ করে দেয়। এর সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে– হরপ্পা ও বৈদিক যুগের মানুষ একই কি না তা নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। এই রকম বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাপছাড়া ভাবে বইতে দেওয়া হয়েছে।

এটা শিক্ষণ-প্রণালীকে বিকৃত করার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়, যা স্কুলশিক্ষার ধ্বংস প্রক্রিয়াকে একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। যদিও সরকারি কর্তাব্যক্তিরা বলে চলেছেন, এটা সিলেবাসের রুটিন সংস্কার, শিক্ষায় গৈরিকীকরণ করার কোনও উদ্দেশ্য নাকি তাঁদের নেই। বাস্তব হল, ধর্মনিরপেক্ষ-বৈজ্ঞানিক-যুক্তিভিত্তিক শিক্ষার যে অবশেষটুকু টিকে আছে, তা পুরোপুরি ধ্বংস করার লক্ষ্যে এই শিক্ষা সংস্কার চলছে। ছাত্রদের মননজগতকে সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধবিশ্বাস ও অধ্যাত্মবাদভিত্তিক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক মনন ধ্বংস করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।

শিক্ষাপ্রেমী মানুষ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র এবং অন্যান্য সচেতন অংশের নাগরিকদের কাছে আমাদের একান্ত আবেদন– শিক্ষা বাঁচাতে দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলন তীব্র করুন, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির গোপন অ্যাজেন্ডার মুখোশ খুলে দিন এবং আসন্ন সর্বনাশকে প্রতিহত করুন।