কলকাতা জেলার বিভিন্ন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও আধা–সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে কোথাও ৮০০ টাকা, কোথাও ২০০০, ৩০০০ টাকা, আবার কোথাও ৪০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে৷ এই অত্যধিক ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে অভিভাবকরা জেলার বিভিন্ন স্কুলে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন৷ ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পেরে অনেক ছাত্রই স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না৷ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে ডিএসও৷ এই ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং সকল ছাত্রের ভর্তির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন সংগঠিত করেছে ডিএসও৷ গত বছর এই দাবিতে ডি আই–কে টানা ৬ ঘন্টা ঘেরাও করা হয়েছিল৷ এ বছরও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির শুরু থেকেই লাগামছাড়া ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে, যার বিরুদ্ধে ২৮ মে জেলা স্কুল পরিদর্শককে ডেপুটেশন দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়৷ সেই আন্দোলনের চাপেই ডি আই সমস্ত আধা সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ল্যাবরেটারি সহ ২৯৫ টাকা এবং ল্যাবরেটারি ছাড়া ২৫০ টাকা ফি নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন৷
এটা ছাত্র–ভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা ডিএসও–র আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়৷ কিন্তু এমন সময় এই নির্দেশিকা জারি করা হল যখন অধিকাংশ স্কুলেই ভর্তি প্রায় শেষ৷ তাছাড়া, শুধু নির্দেশিকা জারি করেই সরকার তার দায়িত্ব সেরে ফেলতে চাইছে, স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ অধিকাংশ স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকের অভাব রয়েছে৷ সেখানে পার্ট–টাইম শিক্ষকদের দিয়ে চালাতে হচ্ছে স্কুল৷ এ ব্যাপারে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই৷ স্কুল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া দরকার৷ সেখানে বিদ্যুতের বিল বাবদ প্রত্যেক স্কুলকে মাসে কয়েক হাজার টাকা মেটাতে হয়৷ এছাড়াও লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি বা বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা দরকার সরকার তা করছে না৷ অথচ খেলা, মেলা, উৎসবে এমনকী ক্লাবগুলিকেও ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিতে অর্থের অভাব দেখা যাচ্ছে না৷ কার্যত সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়ে বিপুল অর্থের বোঝা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে এই সরকার৷ এই সুযোগে স্কুলগুলিও যথেচ্ছ পরিমাণ ফি নিয়ে ছাত্র ভর্তি করছে৷ ডিএসও–র দাবি– সরকার নির্ধারিত ফি নেওয়ার নির্দিষ্ট নির্দেশিকা শুধু জারি করা নয়, স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের সমস্ত দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে৷ যে সমস্ত স্কুলে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তি করানো হয়েছে তাদের বাড়তি টাকা ফেরত দিতে হবে৷ সমস্ত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ ও স্কুল শিক্ষার উন্নয়নে আরও বেশি টাকা বরাদ্দ করে অবৈতনিক শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করার দাবি জানিয়েছে ডিএসও৷