আসামে এবারের বন্যার তাণ্ডব অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। গুয়াহাটি সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার তাণ্ডব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এমনকি শিশুরাও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। যাতায়ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ৯ হাজারের বেশি গ্রাম ও শহরের সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যেই বন্যায় ১৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রত্যন্ত এলাকায় আরও কী ভয়ঙ্কর খবর অপেক্ষা করছে কেউ জানে না।
বরাক উপত্যকার প্রধান শহর শিলচরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বন্যার জল ছাদ ছুঁয়েছে। সমগ্র রাজ্যে বন্যার প্রকোপ এবং নদী ভাঙনের ফলে যোগাযেগ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো দূরের কথা, সামান্য পানীয় জলের জন্য হাহাকার চলছে। সরকার হেলিকপ্টার থেকে জলের বোতল ফেললেও তার বড় অংশই নষ্ট হচ্ছে। রাজধানী গুয়াহাটির অবস্থা বড়ই করুণ। বর্তমান বিজেপি সরকার এবং অতীতের কংগ্রেসী সরকার এই অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ কিন্তু তাঁরা অসহায়। উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টি খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অথচ প্রতি বছর বৃষ্টিতে, ভূমি ধসে বহু বাড়ি ধ্বংস হয়, প্রাণহানী ঘটে। সরকার মানুষের জীবনের এতটুকু মূল্য দিলে আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে তা ব্যবহার করে এই বিপর্যয়ের ধাক্কা কমাতে পারত। কিন্তু তারা কিছুই করবে না।
এই বন্যার তাণ্ডবে মিজোরাম এবং ত্রিপুরা এই দুটি রাজ্য দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। খাদ্য এবং অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আকালের সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য অনেক গুণ বেড়ে গেছে। বন্যার সরকারি সাহায্য না পাওয়ার ফলে ৫ লিটার জলের বোতল ৫০০ টাকা বিক্রি হলেও সরকার যেন দর্শক।
কেন্দ্র এবং সরকার ভাব দেখাচ্ছে যেন তাদের কিছুই করণীয় নেই। কার্যত আসামে প্রধানমন্ত্রী কথিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ কেন, কোনও সরকার আছে বলেই বোঝা যাচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন্য ত্রাণে কেন্দ্রীয় সরকারের গুণগানেই ব্যস্ত। যদিও বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে এহেন দুর্যোগের মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বরাদ্দ এমনিতেই নামমাত্র। তার উপর সরকারি আমলা এবং শাসকদলের নেতাদের কাছে দুর্যোগের ত্রাণ ‘কামধেনু’র মতো, বন্যা ত্রাণের টাকা তাদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সকে আরও স্ফীত করে।
এরা এতটাই নিষ্ঠুর যে, বন্যার্ত মানুষ যখন হাহাকার করেছেন, তখন মহারাষ্টে্র অনৈতিকভাবে সরকার ফেলা খেলায় বিধায়ক কেনা বেচার কাজে মত্ত থাকলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। মহারাষ্টে্রর বেশ কিছু বিজেপি বিধায়ককে গুয়াহাটিতে পাঁচতারা হোটেলে রাখা এবং আপা্যয়ণেই তিনি এবং তাঁর আমলারা ও সরকারি দলের বিধায়ক-সাংসদরা এতটাই ব্যস্ত থাকলেন যে বন্যার্তদের দিকে মন দেওয়ার সময়ই তাঁদের হয়নি।
এই বিপর্যয়ের মুখে এস ইউ সি আই (সি) দল সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও যেটুকু ত্রাণের ব্যবস্থা করতে পেরেছে তাতে বিপণ্ন জনগণ একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। দলের উদ্যোগে বহু পরিবারের চাল এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হয়। দলের কর্মীদের পাশাপাশি এ আই ডি এস ও-র ডাকে ছাত্র স্বোচ্ছাসেবকরা তীব্র জলস্রোতের মধ্যেও যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে তাকে মানুষ সীমাহীন আশীর্বাদ করেছেন।
বরাক উপত্যকায় অনেকেই দলীয় কর্মীদের ফোন করে বলেছেন আপনারা রিলিফের এই কাজ চালিয়ে যান। আমরা টাকা পয়সা সংগ্রহ করে আপনাদের পাঠাবো। অনেকে দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার চেয়ে নিয়ে টাকা পাঠিয়েছেন। এই সাহায্য রিলিফের কাজে আরও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ আসামের বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন এবং দেশজুড়ে ত্রাণ সংগ্রহে নামার জন্য দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।