৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ পৌর স্বাস্থ্যকর্মী (কন্ট্রাকচুয়াল) ইউনিয়নের নেতৃত্বে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। সারা রাজ্য থেকে প্রায় ২০ হাজার আশাকর্মী এই কর্মসূচিতে যোগদান করেন। স্লোগান মুখরিত মিছিল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার দিকে এগোতে থাকে। সরকারি তরফে স্মারকলিপি গ্রহণের কোনও ব্যবস্থা নেই জেনে আশাকর্মীরা চৌরঙ্গীর মোড় প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখিত স্মারকলিপি কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে জমা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যভবনে মিশন ডিরেক্টরের সঙ্গে সংগঠনের প্রতিনিধিদল দেখা করে আর একটি স্মারকলিপি তাঁর হাতে তুলে দেন। এছাড়াও বিধানসভা ভবনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা ও দাবি-দাওয়াগুলি নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন।
আশাকর্মীরা সরকারি কর্মীদের মতোই স্থায়ী পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ করা সত্ত্বেও নিয়োগের সময় থেকেই তাঁদের ‘স্বেচ্ছাসেবিকা’ নাম দিয়ে শ্রমিকের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা নয়।
মালিকের মুনাফার স্বার্থে এ দেশে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারগুলি বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অর্জিত শ্রমিকদের অধিকারগুলি এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে। সেই পথ ধরেই বর্তমানে স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীর ধারণাটিকেই তুলে দিতে চাইছে তারা। স্থায়ী কাজের বদলে প্রকল্পভিত্তিক কাজ চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের অন্তর্গত আশাও এই ধরনের একটা প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় এনে আশাকর্মী ও পৌর স্বাস্থ্য কর্মীদের নামমাত্র সাম্মানিক ভাতা দিয়ে উদয়াস্ত পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারও যে ভাতা দেয় তা খুবই সামান্য। অথচ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও বহু অতিরিক্ত কাজ, নানা সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে করতে এই সব কর্মীরা আজ সাংঘাতিক রকমের কর্মভারে পিষ্ট হচ্ছেন। তাঁরা যতটুকু ইন্সেন্টিভ পান, তা-ও অনিয়মিত, ভেঙে ভেঙে দেওয়া হয়, নানা অজুহাতে তা কেটেও নেওয়া হয়। এর উপর বলা হচ্ছে– ‘নো ওয়ার্ক নো পে’।
রাজ্য সরকারের দেয় ভাতা বৃদ্ধি, সমস্ত পৌরসভায় ১০০০-১২০০ জনসংখ্যার মধ্যেই কাজ করানো, পৌরসভায় নিজস্ব ফান্ড থেকে ভাতা প্রদান, সকলকে কাজের সুবিধার জন্য মোবাইল বাবদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া, ইন্সেন্টিভ ভাগে ভাগে দেওয়া বন্ধ করা, পিএমএমভিভিওয়াই-এর মতো স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বাইরের অন্য কাজ আশাকর্মীদের দিয়ে না করানো, কর্মরত অবস্থায় কোনও আশাকর্মীর মৃত্যু হলে অবসরকালীন ভাতা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা সেই পরিবারকে সাহায্য করা, প্রকল্প নয়,আশা কর্মীদের সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর স্বীকৃতি প্রদান সহ আরও বহু দাবি নিয়ে এআইইউটিইউসি-র পক্ষ থেকে লাগাতার আন্দোলন জেলায় জেলায় ব্যাপক আকার নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই নবান্ন অভিযান।
কর্মসূচির শেষে নেতৃবৃন্দ জানান, দাবিগুলি বাস্তবায়িত না হলে আগামী দিনে আশাকর্মী ও পৌর স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হবেন।