২৯ জুন আইন অমান্যের সমর্থনে রাজ্য জুড়ে গত এক মাস ধরে দলের কর্মীরা মানুষের মধ্যে প্রচার করেছেন, তাঁদের সমর্থন চেয়েছেন, অর্থ সাহায্য চেয়েছেন। পাহাড় থেকে সমুদ্র সর্বত্রই মানুষ দু-হাত তুলে এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। বলেছেন, আর তো কেউ কিছু করছে না, করবেও না। একমাত্র আপনারাই কিছু করছেন। মানুষ আইন অমান্যের কথা জেনে বলেছেন, আর তো পারছি না। এই রমক পরিস্থিতি আমরাও চাইছিলাম আপনারা এমনই একটা বড় আন্দোলনে নামুন। আমরা খুব খুশি হয়েছি আন্দোলনের কর্মসূচিতে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি এলাকায় প্রচার চলছিল। হঠাৎ একদল যুবক এসে বলল, আপনারা আমাদের সাথে আসুন। দেখা গেল, তাঁরা কর্মীদের নিয়ে শাসক দলের স্থানীয় অফিসে ঢোকাল। কর্মীদের ভাবনা, প্রচারে বাধা দিতেই কি এ ভাবে অফিসে ঢোকনো হল! যুবকদের একজন আর একজনকে চা বিস্কুট আনতে বলে কর্মীদের বলল, বলুন কী নিয়ে আপনারা প্রচার করছেন। কর্মীরা বলার পরেই তাঁদের প্রত্যেকের পকেটে যা ছিল সব নিয়ে কর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এর বেশি আর্থিক সাহায্য আপনাদের এখনই করতে পারছি না। আপনারা এই এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করুন। কেউ বাধা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফোন করবেন। আপনারা নিশ্চিন্তে কাজ করুন। আমরা আপনাদের সাথে আছি।
একটি বাজারে প্রচার চলছিল। একজন কর্মী মাইকে বলছিলেন, অতীতে আপনারা যে ভাবে আমাদের দলের আন্দোলনে পরামর্শ দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন, আমাদের আশা এবারও তেমন ভাবেই আমাদের সাহায্য করবেন। কর্মীরা সাহায্য সংগ্রহ করছিলেন। এক দোকানদার এসে কর্মীদের ডেকে নিয়ে গেলেন। দোকানে বসিয়ে চা খাওয়ালেন। তারপর নিজে একশো টাকা দিয়ে পাশের দোকানদারকেও একশো টাকা দিতে বললেন। বললেন, আপনারা এলাকায় ভাল করে কাজ করুন। সব রকমের সাহায্য আমরা করব।
একটি এলাকায় প্রচার চলার সময়ে একজন এগিয়ে এসে বললেন, আমি বামপন্থী। কিন্তু আমার দল তো আন্দোলন করবে না। আপনারাই আন্দোলন করছেন। আমি আপনাদেরই চাঁদা দেব। আপনাদের পত্রিকাটা আমাকে দেবেন।
বাঁকুড়ার সোনামুখীতে আইন অমান্যের প্রচার চলছিল। প্রচারের সাথে আর্থিক সাহায্যও চাইছিলেন কর্মীরা। এক ভিখারিনী এগিয়ে তাঁর ঝুলিতে সারা দিনের যা সংগ্রহ ছিল সবটাই ঢেলে দিলেন। বললেন, আমাকে কিছু হ্যান্ডবিল দিন, আমি বিলি করে দেব।
বহরমপুরের শহরতলির একটি বাজারে দলের প্রচার এর আগে কখনও হয়নি। কর্মীরা এবার প্রচার করতে গিয়ে দেখলেন, সবাই যেন তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সকলে আন্দোলনে তহবিলে সাহায্য করলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অনুরোধ করলেন।
কলকাতার সখের বাজারে প্রচার চলার সময়ে এক মহিলা তাঁর মেয়েকে সাথে নিয়ে এসে বললেন, যদি কিছু মনে না করেন তবে আমি একশো টাকা আন্দোলন তহবিলে সাহায্য করতে চাই। বললেন, আমি টাকাটা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গেই দিলাম। আমার স্বামী এক সময় সিপিএম করতেন। এখন আর করেন না। আজ আপনারা যা করছেন, একদিন আমার মেয়েকেও তাই করতে হবে। ফলে যদি কোনও দিন কিছু দরকার মনে করেন, অবশ্যই বলবেন।
বহু জায়গায় মানুষ বলেছেন, আপনারা নিয়মিত আসুন, সভা করুন, মানুষকে সংগঠিত করুন। আমরা সব রকম সাহায্য করব।