কেন্দ্রীয় কিংবা রাজ্য সরকার যাদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতিটুকুও দিতে নারাজ, সেই আশা এবং আইসিডিএস কর্মীদের ঘাড়ে রাজ্য সরকার চাপিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্লাস ভেরিফিকেশনের কাজ। ২ ডিসেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর এবং নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর নির্দেশ দিয়েছিল, এই যোজনায় ঘর প্রাপকদের তালিকা খতিয়ে দেখার কাজে তাদের ৩ ডিসেম্বর থেকেই নেমে পড়তে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে এক দফা রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এই কর্মীদের উপরে কাজের চাপ এমনিতেই খুব বেশি, এর উপর নতুন এই চাপ ওই কর্মীদের শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই সব কাজ তাদের করার কথা নয়। এই তালিকা করার না আছে তাদের অধিকার এবং না দেওয়া হয়েছে কোনও ক্ষমতা। কাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তার তালিকা এলাকার শাসক দল ও প্রভাবশালীরা আগে থেকে তৈরি করে রাখে। ফলে তার উপর কলম চালাতে গেলে এলাকার মানুষের সাথে কর্মীদের বৈরিতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। একথা সকলের জানা যে এই তালিকাতে বহু বেনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রবল ক্ষোভও আছে। এই ক্ষোভকে চাপা দিতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার হাজার হাজার শূন্য পদে নিয়োগ না করে যখনই স্বল্প সময়ের বিভিন্ন ধরনের কাজ আসে তখনই দপ্তর বহির্ভূত আশা, আইসিডিএস সহ স্কিম ওয়ার্কারদের উপর অন্যায় ভাবে তা চাপিয়ে দেয়। চাপ সামলাতে না পেরে ওই কর্মীদের অনেকে মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছেন, চাপের ফলে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। উত্তর চব্বিশ পরগণার বাদুড়িয়ায় এক আশাকর্মীর ৩ বিঘা জমির ফসল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। ১১ ডিসেম্বর স্বরূপনগরে একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করার পর সর্বত্রই আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জেলায় জেলায় এই নির্যাতন অব্যাহত। আটকে রাখা, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, চাষের ফসল নষ্ট করা এবং ধনে-প্রাণে শেষ করে দেওয়ার ভয় দেখানো, হুমকি প্রতি মুহূর্তে চলছে।
এই পরিস্থিতিতে ৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে আশার মিশন ডিরেক্টরের কাছে ডেপুটেশন দেয় এআইইউটিইউসি অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন। ৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরে এবং ৯ ডিসেম্বর মুখ্যসচিবকে স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ১৩ ডিসেম্বর রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশাকর্মীরা কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। যেদিন থেকে সরকার কাজ শুরু করতে বলেছে সেই দিন থেকেই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ইউনিয়ন এই কাজ বয়কট করার ডাক দেয়। প্রশাসনের চাপ ও হুমকি সত্ত্বেও রাজ্যের ১৩-১৪টি জেলাতে আশাকর্মীরা কাজ পরিপূর্ণ বয়কট করেন। বাকি জেলায় লড়াই চলতে থাকে। কাজ না করলে শো-কজ এবং ভাতার টাকা কেটে নেওয়ার হুমকি, অন্য দিকে শাসকদল এবং এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দেখে নেওয়ার হুমকি– এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কর্মীরা যতদূর সম্ভব সরকারের অন্যায় দাবি প্রতিরোধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আই ইউ টি ইউ সি-র দাবি, মৃত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সমস্ত কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, এই কাজ এবং দপ্তর বহির্ভূত কোনও কাজ কর্মীদের উপরে চাপানো চলবে না এবং আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দিতে হবে।