ছ’বছর আগে উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে মুসলিম এবং হিন্দু জাঠ সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গার আগুন জ্বালিয়ে ভোটে জিতেছিল বিজেপি৷ দাঙ্গার সে ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি৷ এখনও সে অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে ঘুমোতে পারে না৷ এই বুঝি জ্বলে উঠল বাড়ি– দুঃস্বপ্নে ভেঙে যায় ঘুম৷ মানুষকে সন্ত্রস্ত করে সেবার বিজেপি ভোটে জিতলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন৷ এবার হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের চাষিরা ঐক্যবদ্ধ৷
কীসের ভিত্তিতে? চিনিকল মালিকদের লাগাতার শোষণ–বঞ্চনা দুই সম্প্রদায়ের আখ চাষিদের মিলিয়ে দিয়েছে৷ এক কৃষক নেতার কথায়, ‘‘গত বছর প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল হিসাবে আমাদের জেলা থেকে ২৬ কোটি টাকার আখ যেত চিনি কলগুলিতে৷ তার বিনিময়ে মাসে এক কোটি টাকাও আমরা পেতাম না৷ দিনের পর দিন বকেয়া রয়েছে টাকা৷ বারবার কাকুতি–মিনতি করওে কোনও ফল হয়নি’’৷ ক্ষুব্ধ কৃষকদের বক্তব্য, মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী৷ তিনি একবারও আসার সময় পাননি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটের জন্য উত্তরপ্রদেশে এলেও আখচাষিদের এই সমস্যা নিয়ে একটি কথাও বলেননি৷ কারণ চিনিকল মালিকরা বিজেপিকে মোটা টাকার ফান্ড জোগায়৷ তাই আখচাষিদের যত সর্বনাশই তারা করুক বিজেপি চটাতে চায় না তাদের৷
এই অবস্থায় হিন্দু–মুসলিম উভয় অংশের চাষিরা অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, আখের ন্যায্য দাম পেতে হলে, কোটি কোটি টাকার বকেয়া আদায় করতে হলে আন্দোলন ছাড়া পথ নেই৷ আর সেই আন্দোলনের জন্য চাই ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব চাষির ঐক্য৷ যাঁরা বলেন হিন্দু–মুসলিম ঐক্য অসম্ভব– এই ঘটনা তাদের দেখাবে যে এই ঐক্য সম্ভব৷ ছ’বছর আগে মুজফফরনগরে যে গ্রামবাসীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন, সেই মুসলিম ও জাঠেদের পারস্পরিক শত্রুতা ভুলে বন্ধু করে দিয়েছে চিনিকল মালিকদের বেপরোয়া শোষণ৷