দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ফসল আখ৷ উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে আখচাষিরা আজ বিপন্ন৷ এই বিপন্নতা প্রাকৃতিক কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য নয়৷ এই বিপন্নতা সৃষ্টি হয়েছে চিনিকল মালিকদের অন্যায় আচরণের কারণে৷ সঙ্গে দোসর উত্তরপ্রদেশ সরকার৷ ১৮ জুন পর্যন্ত হিসাবে চিনিকলগুলির কাছে প্রায় ১৮,৯৫৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে আখচাষিদের৷ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এর মধ্যে প্রায় ১১,০৮২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে উত্তরপ্রদেশে৷ কেন বকেয়া? মালিকরা চাষিদের থেকে আখ নিয়ে দাম দেয়নি৷ পরে দেবে– এই আশ্বাসেই চাষিরা লরিবোঝাই আখ মিলমালিকদের দিয়ে এসেছে৷ কিন্তু মালিকরা টাকা না দিয়ে চাষিদের বারবার ঘোরাচ্ছে৷
আখ এমন ফসল যে চাষিদের তা ঘরে রাখার উপায় নেই৷ তাছাড়া হাজার হাজার টাকা ঋণ করে চাষিরা চাষ করেন৷ ঋণ শোধ করতে দ্রুত বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যেতে হয়৷ কিন্তু বাজারে সরকারি উদ্যোগে কেনার কোনও ব্যবস্থা নেই৷ ক্রেতা একমাত্র চিনিকল মালিকরাই৷ ফলে তারা যে দাম বলবে সেই দামেই চাষিকে বিক্রি করতে হবে৷ যতটুকু নগদে দেবে তাই মানতে হবে৷ আর যা বাকি থাকবে তা যে কবে উদ্ধার হবে কেউ জানে না৷ বিজেপি উত্তরপ্রদেশের শাসন ক্ষমতায়৷ এই চিনিকল মালিকরা নির্বাচনে লক্ষ লক্ষ টাকা বিজেপিকে দিয়ে থাকে৷ বিজেপি সরকার তাদের স্বার্থেই এই বঞ্চনা প্রতারণার বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয় না৷ শুধু বিজেপি কেন, মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী কোনও দলই এ কাজ করেনি৷ ফলে কংগ্রেস থেকে সমাজবাদী দল, সমাজবাদী দল থেকে বহুজন সমাজ পার্টি বা বিজেপি– একই ধারায় শোষণ চলেছে৷
সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত দেবেন, বিজেপি কত দেবে সেই প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটেছে৷ কিন্তু ভোটব্যাঙ্ক তৈরির এই ছক থেকে বেরিয়ে এসে তাঁরা যদি প্রতিশ্রুতি দিতেন চাষির ফসলের ন্যায্য দাম পাইয়ে দেওয়ার, যদি ব্যবস্থা করতেন মালিক–ফড়ে–পাইকার শোষণ বন্ধ করার– তাহলে চাষির খানিকটা উপকার হত৷ যদি তাঁরা সার– বীজ– কীটনাশক সহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে পর্যাপ্ত ভরতুকি দিতেন, তাহলে কৃষির উৎপাদন ব্যয় কমত৷ চাষির কিছু সুরাহা হত৷ কিন্তু এই প্রয়োজনীয় কাজগুলি না করে কংগ্রেস–বিজেপি সহ সব পুঁজিবাদী সরকার চাষিদের চরম বিপন্নতায় ঠেলে দিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, এই চাষিদের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ রয়েছে৷ তেমনি মালিকরাও কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান৷ কিন্তু ধর্ম–বর্ণ অনুসারে মালিকরা কাউকে রেয়াত করেনি৷ বিজেপির হিন্দুত্ববাদী সরকারও হিন্দু চাষিদের সমস্যায় নড়ে বসেনি৷
মালিকের ধর্ম হল শোষণ৷ এর বিরুদ্ধে হিন্দু–মুসলিম সহ সমাজের সকল অংশের শোষিত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে৷ উত্তরপ্রদেশের আখচাষিদের যে হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে মালিকদের কাছে, তা উদ্ধার করতে হলে সকল অংশের চাষির ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাই৷ মালিকরা এই ঐক্য ভাঙার কাজেও নানাভাবে মদত দেয়৷ কখনও কখনও সাম্প্রদায়িকতাকেও ব্যবহার করে৷ এই চক্রান্ত ব্যর্থ করতে শ্রমিক–চাষির মৈত্রী দৃঢ় করতে হবে৷ আওয়াজ তুলতে হবে ‘অবিলম্বে যোগী সরকারকে কৃষকদের বকেয়া আদায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ প্রতারক মালিকদের গ্রেপ্তার করতে হবে৷’