অন্তত ৩০ কোটি টাকা ‘লগ্নি’ করার ক্ষমতা না থাকলে অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে কোনও লাভ নেই! এমনটাই প্রকাশ পাচ্ছে সেখানকার সংবাদপত্রে। এ কারণেই সে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ১০টি আসনে একমাত্র বিজেপিই মনোনয়ন দিতে পেরেছে। একটা বিধানসভা নির্বাচনে একটিমাত্র দলের দশজন প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া যতই আশ্চর্য লাগুক, এটাই সত্য! এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু এবং উপমুখ্যমন্ত্রী চউনা মেইংও আছেন।
‘অরুণাচল টাইমস’-এর সম্পাদক তোংমান রিনা ‘দ্য হিন্দু’র প্রতিনিধিকে বলেছেন, অরুণাচলে নির্বাচনে কে জিতবে তার একমাত্র নির্ধারক শক্তি টাকার জোর। সে রাজ্যের বহু বিধানসভা আসনে ভোটার সংখ্যা গড়ে মাত্র হাজার পনেরো। তাদের ভোট পেতে এই পরিমাণ লগ্নির ট্র্যাডিশন সেখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ভোটবাজ দলগুলি। এখন ভোটের যা দর তাতে আসন পিছু ৩০ কোটির নিচে কুলোবে না। তা হলে ৬০ আসনের বিধানসভায় ‘লগ্নি’ করতে হবে অন্তত ১৮০০ কোটি টাকা!
লগ্নি শব্দটা তোংমান রিনা বেশ জেনে বুঝেই ব্যবহার করেছেন বোঝা যায়। পাঁচ বছর ধরে পুঁজিপতিদের আশীর্বাদ লাভ এবং মানুষের সম্পদ লুঠের নিশ্চিত সুযোগ গদিতে বসলেই তো হাতে পাবেন মন্ত্রী-নেতারা। অরুণাচল বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নানি বাথের কথায়– সম্পদ আর ক্ষমতার আদানপ্রদানের গ্যারান্টি এই নির্বাচনী ব্যবস্থা।
এত টাকা আছে কার ঘরে? বিজেপি এই মুহূর্তে কেন্দ্রের গদিতে। ইলেক্টোরাল বন্ড সহ নানা সাদা-কালো সব পথে এখন ভোটবাজ দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কামিয়েছে বিজেপি। অরুণাচলেও কংগ্রেস ভাঙিয়ে কয়েক বছর সরকার চালিয়ে এখন তাদের ভাগেই রোজগার বেশি। অবশ্য এই টাকার খেলাটা শুরু করেছিল কংগ্রেসই। ২০১৪-তে একই পথে ১১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল কংগ্রেস। অরুণাচলের বর্তমান বিজেপি নেতাদের বেশিরভাগই আসলে পুরনো কংগ্রেস নেতা। এই মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিজেপি লুঠের খেলার আসরে চালকের আসনে বসেছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জয় হোক! লুঠের কারবারে কর্তারা আরও সিদ্ধিলাভ করুন। তবে দয়া করে নির্বাচনকে আর জনমত বলে লজ্জা দেবেন না!
(সূত্রঃ দ্য হিন্দু ২৯ মার্চ ও ১ এপ্রিল ‘২৪)