ভারতে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ‘ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস’ কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজত্বে ক্রমেই বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তা প্রচারের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে? বিগত কয়েক বছর ধরে ঘটনাক্রম এবং ধারাবাহিক বিজ্ঞান কংগ্রেসগুলির কার্যক্রম এই আশঙ্কাকেই প্রবল করে তুলেছে৷ আশঙ্কিত দেশের বিজ্ঞানী মহল, বিজ্ঞান সংগঠন এবং বিজ্ঞানপ্রিয় জনগণ প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন, রাস্তায় নামছেন৷ কিছুদিন আগে অংশগ্রহণও করেছেন ‘বিজ্ঞানের জন্য পদযাত্রায়’৷
শুরুটা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই৷ তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পারিষদরা বলছেন শতগুণ৷ এই ধারায় সর্বশেষ সংযোজন পাঞ্জাবের জলন্ধরে ৩–৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০৬তম বিজ্ঞান কংগ্রেসে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাগেশ্বর রাওয়ের ভাষণ, যেখানে তিনি বলছেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদের বহু আগে গীতায় উল্লিখিত দশাবতার তত্ত্বও প্রাণীজগতের বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছিল এবং তা ডারউইনের তত্ত্বের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত৷ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন – কৌরবদের জন্ম স্টেম সেল থেকে, টেস্ট টিউব প্রযুক্তির মাধ্যমে৷ বিষ্ণুর হাতের সুদর্শন চক্র আসলে ক্ষেপণাস্ত্র, যা লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে আবার তার হাতে ফিরে আসত৷ শুধু পুষ্পক রথ নয়, রাবণের অন্তত ২৪ ধরনের বিভিন্ন মাপের, বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান ছিল৷ আর এক বক্তা কান্নন জগথালা কৃষ্ণনের দাবি, আইনস্টাইন–নিউটনের হাত ধরে তৈরি হওয়া আধুনিক পদার্থবিদ্যা আদ্যন্ত ভুল৷ তাঁর আবদার, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের নাম দিতে হবে ‘মোদি তরঙ্গ’, আর মহাকর্ষের প্রভাবে আলোর বেঁকে যাওয়াকে বলা হবে ‘হর্ষবর্ধন ঘটনা’৷
এমন দাবি বিগত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির নানা নেতা–মন্ত্রীর মুখে বারবার উচ্চারিত হয়েছে৷ ২০১৪ সালে মুম্বইতে এক হাসপাতালের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, প্রাচীন ভারতে যে প্লাস্টিক সার্জারি ছিল, গণেশের হাতির মাথাই নাকি তার অকাট্য প্রমাণ৷ তারই মন্ত্রীসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিং বলেছিলেন, ডারউইনের তত্ত্বও বৈজ্ঞানিক দিক থেকে ভ্রান্ত, কেন না কোনও বাঁদরকে মানুষ হয়ে যেতে কেউ দেখেনি৷ তাই তা স্কুল–কলেজের সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া উচিত৷ রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানি দাবি করেছিলেন, গরু নাকি শ্বাস–প্রশ্বাসে অক্সিজেন ছাড়ে৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব আরও এক কাঠি এগিয়ে দাবি করেন, মহাভারতের যুগে নাকি ইন্টারনেট ছিল, না হলে যুদ্ধের খবর ধৃতরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছত কীভাবে? ২০১৫ সালের বিজ্ঞান কংগ্রেসে ক্যাপ্টেন বোদাস নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছিলেন, বৈদিক যুগে নাকি এরোপ্লেন ছিল৷ আর তা নাকি শুধু এক দেশ থেকে অন্য দেশেই নয়, এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহেও যেতে পারত৷ কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন ২০১৮ সালে মণিপুরে বিজ্ঞান কংগ্রেসে সদ্যপ্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং–এর নাম উল্লেখ করে দাবি করেছিলেন, তাঁর মতে, বেদের সূত্রগুলি সম্ভবত আইনস্টাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্রের চেয়েও উন্নত৷ অবশ্য এই দাবির সপক্ষে কোনও তথ্য মাননীয় মন্ত্রী উপস্থিত করতে পারেননি৷
সবকটি দাবিই এক সূত্রে গাঁথা৷ যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাস আর ধর্মীয় গোঁড়ামির ভিত্তিতে প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান–প্রযুক্তির কাল্পনিক মহিমাকীর্তন৷ কোনও দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ দাখিলের ব্যাপারই নেই৷ ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে রামায়ণ–মহাভারতে কাহিনিগুলোকেই ঐতিহাসিক সত্য বলে চালানো৷ বৈদিক যুগের শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান গেয়ে হিন্দুত্ব–অ্যাজেন্ডার প্রতিষ্ঠা৷
বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধ সর্বযুগে সর্বকালে৷ কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওরা যখন বহু বছরের পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বনির্মাণের ভিত্তিতে এ সত্যে পৌঁছেছিলেন যে পৃথিবী স্থির নয়, তা গতিশীল, সূর্যকে তা নিরন্তর প্রদক্ষিণ করছে, তখন সে যুগের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি৷ কারণ, বাইবেল তাদের শিখিয়েছে পৃথিবী স্থির৷ সূর্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে৷ ডারউইন যথার্থ বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে বিবর্তনের রহস্য উদঘাটনে ব্রতী হয়েছিলেন, সত্যানুসন্ধানের প্রয়োজনে দীর্ঘ পাঁচ বছর জলপথে দুই আমেরিকার অজস্র পাহাড়–জঙ্গল চষে বেড়িয়েছেন, সেখানকার নানা প্রজাতি ও প্রাণী বৈচিত্র্যকে খুঁটিয়ে লক্ষ করেছেন, অজস্র জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছেন এবং দেশে ফিরে সুদীর্ঘ বারো বছর সংগৃহীত তথ্যগুলিকে বারবার নানাভাবে পরীক্ষা করে তবেই প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন৷ তাঁর সময়েও বহু মানুষ সহজে তা মেনে নেয়নি৷ পুরনো বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তারাও সেদিন নানা যুক্তিতে তাকে অস্বীকার করতে চেয়েছে৷ বিজ্ঞানকে চলার পথ তৈরি করতে হয়েছে অবিজ্ঞানের সঙ্গে লড়াই করেই৷
বিজ্ঞান–কংগ্রেসে অবিজ্ঞানের প্রচার ও তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ দেখিয়ে দিল এই লড়াই এখনও চলছে৷ বিজ্ঞান–কংগ্রেসে অবিজ্ঞান প্রচারের খবর প্রকাশ হতেই কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, কেরালার কোচিন ও কোট্টায়াম, অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর, ত্রিপুরার আগরতলা, মধ্যপ্রদেশের গুনা ও ইন্দোর, ঝাডখণ্ডের জামশেদপুর, দিল্লি ইত্যাদি শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়৷ পশ্চিমবঙ্গেও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, মেদিনীপুর কলেজ, পাঁশকুডা কলেজ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকরা বিক্ষোভ দেখান৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী অধ্যাপক অমিতাভ দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি কতটা হয়েছিল তা বোঝাতে রাম–রাবণ–গান্ধারীর কি খুব প্রয়োজন? চরক, শুশ্রুত, কণাদ, আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, ভাস্করাচার্য ইত্যাদিদের গৌরবময় জ্যোতির্বিজ্ঞান, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি চর্চার কথা বলা যায় না?’ হায়দরাবাদে প্রেস কনফারেন্স করে সেন্টার ফর সেল অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির প্রাক্তন অধিকর্তা অধ্যাপক মোহন রাও এই অবিজ্ঞানের প্রচারের প্রতিবাদ জানান৷ বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিদ অধ্যাপক জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার সহ ৩৭ জন বিজ্ঞানী যৌথভাবে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি লিখে আগামীদিনে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান৷ সংবাদে প্রকাশ, অন্যান্য বছরের মতো বিজ্ঞানীসমাজের এই সম্মিলিত প্রতিবাদকে অস্বীকার না করতে পেরে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকারও করেছেন৷
কিন্তু এর ফলে অবিজ্ঞানের ফেরিওয়ালারা নিরস্ত হবেন কি?
আসলে, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় শিক্ষার আলো যারা পায় তাদের মধ্যেও বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠে না৷ বিজ্ঞান পড়লেও বিজ্ঞান কীভাবে চিন্তা করতে শেখায় তা ছাত্ররা শেখে না৷ অতীতে কী ঘটেছিল তা হয়তো ছাত্ররা পড়ে, কিন্তু তা কীভাবে জানা গেল তা তাদের জানানো হয় না৷ ইতিহাস যে প্রমাণ দাবি করে, তা তাদের শেখানো হয় না৷ তাদের মন বিশ্বাস করতেই শেখে, প্রশ্ন করতে যাচাই করতে শেখে না৷ আর অবিজ্ঞানের কারবারিরা এই ফাঁকটাকেই ব্যবহার করে৷
তারা বোঝায়, রামায়ণ–মহাভারত–গল্পগাথায় যা যা আছে, সবই এককালে ঘটেছিল৷ এসবই ইতিহাস৷ আসলে রামায়ণ–মহাভারত খুবই উন্নতমানের সাহিত্য৷ সমস্ত সাহিত্যের মতোই তার চরিত্র ও ঘটনাবলি কাল্পনিক৷ কবির কল্পনায় যা ধরা দিয়েছে তা সাজিয়েই তার কাহিনীচিত্রণ৷ একজন কবি নয়– আজ প্রমাণ পাওয়া গেছে রামায়ণ ও মহাভারত লেখা হয়েছে সাত–আটশো বছর ধরে৷ অর্থাৎ বহু মানুষের কল্পনা সংযোজিত হয়ে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে কাহিনিগুলি আজকের রূপ নিয়েছে৷ তাই তার মধ্যে বিশেষ কালের ইতিহাস খুঁজতে যাওয়া বৃথা৷
এঁরা খোঁজেন শুধু ইতিহাসই নয়, বিজ্ঞান–প্রযুক্তিও৷ আছে পুষ্পক রথের কথা, অতএব এরোপ্লেন ছিল৷ আছে ব্রহ্মাস্ত্রের কথা, অতএব অ্যাটম বোমা ছিল৷ গান্ধারীর শতপুত্র কীভাবে জন্মাতে পারে? অতএব স্টেম সেল থেকেই কৌরবদের জন্ম৷ আছে ঘটোৎকচের মতো দৈত্যের কথা, অতএব নিশ্চয়ই সে জন্মেছিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং–এর সাহায্যে৷
লক্ষ করার বিষয়, এরোপ্লেন আবিষ্কার হওয়ার আগে কিন্তু কেউ বলেননি মহাভারতের যুগে এরোপ্লেন ছিল৷ অ্যাটম বোমা আবিষ্কার হবার আগে কিন্তু কেউ বলেননি পাশুপত অস্ত্র বা ব্রহ্মাস্ত্র আসলে অ্যাটম বোমা৷ বিজ্ঞান স্টেম সেলের চরিত্র আবিষ্কার করার আগে কিন্তু মহাভারত পড়ে গান্ধারীর শতপুত্রের বিষয়টা কারও মাথায় আসেনি৷ ১৯৮০–র দশকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি প্রবর্তনের আগে কেউ ত্রেতাযুগে ইন্টারনেটের প্রচলনের কথা বলেননি৷ যদি সত্যিই বেদ–উপনিষদে আধুনিক বিজ্ঞান থাকত, তাহলে সেসব শ্লোক পড়ে কেউ তো কখনও কোনও একটা আবিষ্কার করে ফেলতে পারতেন৷ কেউ পারেননি৷
কোনও প্রযুক্তিই হঠাৎ গজিয়ে ওঠে না৷ উড়োজাহাজ তৈরি করার আগে মানুষকে থার্মোডায়নামিক্স আর এয়ারোডায়নামিক্সের নিয়মকানুন আবিষ্কার করতে হয়েছে৷ অ্যাটম বোমা তৈরি করতে আগে পরমাণুর অন্দরমহলের নিয়মকানুন অর্থাৎ কোয়ান্টাম মেকানিক্স আবিষ্কার করতে হয়েছে৷ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং–এর কথা ভাবার আগে বংশগতির নিয়ম আবিষ্কার করতে হয়েছে, ডিএনএ অণুর চরিত্র বুঝতে হয়েছে৷ তত্ত্ব বোঝার আগে প্রযুক্তির উদ্ভাবন সম্ভব নয়৷ তাই এসব তত্ত্ব বৈদিক যুগের মানুষের জ্ঞানজগতে থাকার কোনও চিহ্ণই নেই, থাকা সম্ভবও ছিল না৷
বিজ্ঞানে কোনও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে পরীক্ষা–পর্যবেক্ষণে মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হয়৷ সেরকম, ইতিহাসে কোনও কথা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দিতে হয়৷ সেযুগে এরোপ্লেন থাকলে দু–একটা ভাঙা টুকরো মাটি খুঁড়লে অবশ্যই পাওয়া যাবে৷ মানুষের ধড়ে হাতির মাথা বসানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়ে থাকলে সেরকম দু–একটা ফসিল অবশ্যই পাওয়া যাবে৷ কুরুক্ষেত্রের মাটি খুঁড়লে পাওয়া যাবে দু–একটা গদা৷ কিংবা যুদ্ধের ধারাবিবরণী দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ক্লোজসার্কিট টিভির টুকরো৷ অবিজ্ঞানের কারবারিরা কিন্তু এসব প্রমাণের ধারে কাছে ঘেঁষেন না৷
এই কূপমণ্ডুক ধর্মান্ধ মানসিকতাকে তীব্র কষাঘাত করে আজ থেকে প্রায় পৌনে দু’শো বছর আগে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, এরা সামনের দিকে তাকাতে ভুলে গেছে৷ পাশ্চাত্য দেশে বিজ্ঞানের কোনও নতুন আবিষ্কার হলে তারা সহজে তা মেনে নিতে চায় না৷ আবার বেদের যুগের কোনও কিছুর সঙ্গে এর সামান্যতম মিল পেলে তাদের আত্মশ্লাঘা স্ফীত হয়ে ওঠে৷ যুক্তি তোলে, বেদেই যখন সব আছে তখন পাশ্চাত্যের জ্ঞান–বিজ্ঞান জানার প্রয়োজন কী? এই অচল অনড় মনোভাবকে ব্যঙ্গ করে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ মেঘনাদ সাহা লিখেছিলেন, ‘সব ব্যাদে আছে’৷ বিদ্যাসাগর, মেঘনাদ সাহাদের এই লড়াই আজ আবার এক নতুন রূপে ফিরে এসেছে৷
কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এইসব বিজ্ঞানবিরোধীরা চায় মানুষের যুক্তিবাদী মন ও বিজ্ঞানমনস্কতাকে মেরে দিয়ে তার জায়গায় অন্ধতা, গোঁড়ামি আর কুসংস্কার গেঁথে দিতে৷ আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করার ক্ষমতা এদের নেই৷ ফলে এরা ধবংস করছে বিজ্ঞানমনস্কতাকে, সত্যানুসন্ধানী মনকে৷ নিচ্ছে বিজ্ঞানের শুধু কারিগরি দিক৷ এটাই তো ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার৷ বহুদিন আগে এ যুগের অন্যতম মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ ফ্যাসিবাদের এই চরিত্র উদঘাটিত করে বলেছিলেন, বিজ্ঞান ও অধ্যাত্মবাদের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের আদর্শগত ও সংস্কৃতিগত ভিত রচিত হয়৷ এদেশের একচেটিয়া পুঁজির সমর্থনে বিজেপি–আরএসএস বাহিনী ঠিক সেই কাজটিই করে চলেছে৷ তারা জানে, মানুষকে অজ্ঞ, অন্ধ রাখতে পারলেই তাদের শোষণ, শাসন চালাবার সুবিধা৷ সময় থাকতে এই বিপদ সম্পর্কে সজাগ না হলে আগামী দিনে এর জন্য অনেক বড় মূল্য আমাদের দিতে হবে৷