সম্প্রতি বিহার পুলিশের ডিজি বোমা ফাটিয়েছেন৷ এ দেশের সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে কটাক্ষ করে বলতে বাধ্য হয়েছেন, অপরাধীদের ফুল–মালা দিয়ে বরণ করাই যেখানে (ভারতে) রেওয়াজ, সেখানে অপরাধের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করা চলে না৷ কয়েকটা ছবি দেখা যাক৷
সদ্যসমাপ্ত ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে খুনে অভিযুক্ত এক দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী৷ গণপিটুনিতে হত্যায় অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার পর মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দিচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা৷ শ্রীনগরের কাঠুয়ায় গুর্জর–বাখরেওয়াল সম্প্রদায়ের আট বছরের কিশোরী ধর্ষণে অভিযুক্তদের সমর্থনে মিছিল করেছেন বিজেপি বিধায়ক৷ উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে নাবালিকা ধর্ষণ ও তাঁর বাবা সহ আত্মীয়দের খুনে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছেন সেখানকার বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ এই কুলদীপ সেঙ্গারকে প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা৷ তিনি জেলেও বহাল তবিয়তে আছেন এবং সেখান থেকেই সাঙ্গোপাঙ্গদের মাধ্যমে প্রশাসনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্যাতিতার পরিবারকে শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ঘটনাগুলিতেই পরিষ্কার, বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধ দমনের কথা বলা কতবড় ভণ্ডামি৷ ধর্ষণ–হত্যা কিংবা অন্য অপরাধের ঘটনায় শাসক দলের সঙ্গে অপরাধীদের যোগসাজশ বা পুলিশের জড়িত থাকার ঘটনা নতুন নয়৷ কিন্তু বিজেপি শাসনে তা উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ এই সব ঘটনা দেখিয়ে দেয় পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাকারী দলগুলি শুধু অপরাধীদের প্রশ্রয়ই দেয় না, নির্বাচনে প্রার্থীও করে৷ এই প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে৷ ২০০৯ সালের তুলনায় সংখ্যাটি কার্যত দ্বিগুণ হয়েছে৷
সারা দেশে মহিলাদের প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে বিজেপির সাংসদ–বিধায়কদের বিরুদ্ধে (২১), তারপর কংগ্রেস (১৬)৷ এই রিপোর্ট দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) এবং ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ (আনন্দবাজার পত্রিকা–১১৷১২৷২০১৯)৷ দুষ্কর্মের ঘটনা নথিভুক্ত হয় না, তা সত্ত্বেও নথিভুক্ত হওয়া সংখ্যাতেই ভয়াবহ বাস্তবের ছবি উঠে এসেছে৷
বিজেপির রাজনীতি শুধু জাত–পাত–ধর্ম–বর্ণ বিভেদের নীতি নয়, মহিলাদের খাটো করে রাখার মানসিকতাও তাদের রক্তমজ্জায় মিশে রয়েছে৷ নির্ভয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশ যখন উত্তাল, তখন আর এস এস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন, ‘‘ইন্ডিয়া’তে রেপ হয়, ‘ভারতে’ হয় না’’৷ এর দ্বারা তিনি বুঝিয়ে দিলেন শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে মেয়েরা রাস্তায় বেরোয় বলেই রেপ হয়৷ গ্রামে শিক্ষা কম, তাই রেপ কম৷ এই বক্তব্যের দ্বারা তিনি ধর্ষকদেরই আড়াল করলেন৷ উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি দয়াশঙ্কর সিং বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীকে একসময় ‘পতিতা’ বলে বিঁধেছিলেন৷
জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট শাসক হিটলারের মুখেও শোনা গিয়েছিল মহিলাদের প্রতি অমর্যাদাকর উক্তি৷ তাদের জন্য রান্নাঘর আর আঁতুড়ঘরই বরাদ্দ করতে চেয়েছিলেন হিটলার, যার সঙ্গে মিল রয়েছে সংঘ পরিবারের ভাবনার৷ অপরাধীদের সাথে রাজনীতির এই যোগ ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধকে মাত্রাছাড়া করে তুলেছে৷ যোগী আদিত্যনাথের আমলে উন্নাওয়েই শুধু ধর্ষণ হয়েছে ১১ মাসে ৮৬টি, যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে ১৮৫টি৷
ভোটবাজ রাজনৈতিক দলগুলির বদান্যতায় অন্য বহু গুরুতর অপরাধও ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে৷ বিপুল অর্থ ব্যয়ে বছর বছর ভোট করে জনসাধারণ যে সব প্রার্থীদের সংসদে, বিধানসভায় পাঠান, হাতে ক্ষমতা পেয়ে অবাধে অপরাধ করার কিংবা অপরাধীদের মদত দেওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যায় তারা৷ নষ্ট করে সমাজ পরিবেশ৷ এর বিরুদ্ধে সচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে হবে জনসাধারণকেই৷