Breaking News

জীবনের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের লড়াইকে শক্তিশালী করুন

কৃষ্ণনগর : ১৩ নভেম্বর নবান্ন ও উত্তর কন্যা অভিযান এবং রাজভবন রাজ্যপালের নিকট ডেপুটেশন কর্মসূচীর সমর্থনে মিছিল।

একদিকে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত জনজীবন৷ অন্য দিকে চাকরির চরম অনিশ্চয়তা৷ এর সাথে এনআরসি–র আতঙ্ক৷ দিশেহারা মানুষ৷

অর্থনীতির হাল ফেরানোর অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার যখন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে ওঠা সরকারি তহবিল করপোরেট মালিকদের সেবায় উজাড় করে দিচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা জোর করে দখল নিয়ে তা করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দিতে কাজে লাগাচ্ছে এবং বড় বড় পুঁজির মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দিচ্ছে, তখন দেশের আপামর গরিব–নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে বিরাজ করছে শুধুই হতাশা, দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকার৷ বেকারি গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে৷ অর্থনীতির মন্দার কারণে নতুন করে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকারে পরিণত হচ্ছেন৷ ক্ষুধার তালিকায় বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০২৷ মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে৷ ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে হাজার  হাজার চাষি আত্মহত্যা করছে৷ শ্রমিক–কর্মচারীদের্ দীর্ঘদিনের অর্জিত অধিকার একে একে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ রেল, বিমান, টেলিকমের মতো নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের নামে নামমাত্র মূল্যে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুঁজিপতিদের হাতে৷ শিক্ষা–স্বাস্থ্যকে পণ্য করে তোলা হয়েছে৷ সরকারের যে কোনও সমালোচনার গায়ে দেশদ্রোহিতার তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সমালোচকদের ‘ডুবে মরার’ পরমর্শ দিয়েছেন৷ প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিতে ইউএপিএ আইন আরও কঠোর হচ্ছে৷ আর এ সবের থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপির মতো শাসক দলগুলি পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের কোণায় কোণায়৷

মানুষের স্বার্থ নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা চলছে সর্বত্র৷ কেন্দ্র–রাজ্য কেউই এর ব্যতিক্রম নয়৷ লজ্জার বিষয়, বিদ্যাসাগর–বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র-নজরুলের এই বাংলা আজ নারী নির্যাতনে ও নারী–শিশু পাচারে গোটা দেশে প্রথম আর শিক্ষায় ৩৩তম স্থানে৷ প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফেরানোর দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পাশ–ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তা কার্যকর করা নিয়ে তৃণমূল সরকার টালবাহানা করেই চলেছে৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশব্যাপী এই আন্দোলনের চাপে শিক্ষা–আইন ২০০৯ সংশোধন করে লোকঠকানোর মতোই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ–ফেল ফেরানোর কথা বলছে৷ রাজ্য সরকার সে বিষয়ে এখনও নির্বিকার৷ এর পরিণতিতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস হচ্ছে৷ অন্য দিকে রাজ্যে মদের ঢালাও প্রসার ঘটানো হচ্ছে৷ যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে মদের দোকান, মদের কারখানা৷ পুজোর সময়ে দিন রাত মদের দোকান খোলা থাকছে৷

সরকারি ভাণ্ডার ভরাতে গিয়ে রাজ্যের ছাত্র–যুবশক্তির নৈতির মেরুদণ্ডকে ধসিয়ে দিতেও রাজ্যের শাসকদের চক্ষুলজ্জাটুকুও নেই৷ বস্তুত, সব শাসকই আজ এই পথের পথিক৷ মদ, গাঁজা, ড্রাগ, যৌনতা, অশ্লীলতার ঢালাও পসরা সাজিয়ে তারা চায় ছাত্র–যুবকদের নিবীর্য করে দিতে যাতে অন্যায়–বিচারের বিরুদ্ধে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে৷ আর এরই অসহায় শিকার হচ্ছে আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা৷

নারী নির্যাতনের ঘটনা আজ প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত৷ দুষ্কৃতীদের লালসার হাত থেকে দু–আড়াই বছরের শিশু থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধা, কারও রেহাই নেই৷ সবচেয়ে বড় কথা, দুষ্কৃতীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না, ধরা পড়লেও তাদের সাজা হয় না৷ তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে৷

এ রাজ্যেও চাষিরা ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত৷ ভোটের দিকে তাকিয়ে নানা দান–খয়রাতির নামে ভিক্ষা প্রদান চললেও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের নেই৷ আশা কর্মী, মিড–ডে মিল ওয়ার্কারদের মতো নানা স্কিম ওয়ার্কাররা বাঁচার মতো বেতন পান না৷ চা–বাগানের শ্রমিকদের বঞ্চনা চরমে৷ সর্বোপরি, গোটা রাজ্য জুড়ে শাসক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে কাটমানি, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি বা সিন্ডিকেটকে ঘিরে দুর্নীতি আজ চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেছে৷

এই অবস্থায় মানুষের ক্ষোভকে ভোটের বাক্সে টেনে নিয়ে যেতে চায় ভোটবাজ সব দলগুলি৷ ৭৩ বছরে অনেক ভোট হয়েছে, অনেক সরকার বদলেছে৷ তার দ্বারা জনগণের মুক্তি আসেনি৷ সরকার বদলের পথে মানুষের মুক্তি নেই৷ জনজীবনের এই সর্বাত্মক সংকট থেকে মুক্তির রাস্তা একটাই– পড়ে পড়ে মার খাওয়া নয়, ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া নয়, শোষিত মানুষের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তুলে শাসক শ্রেণির আক্রমণের সামনে রুখে দাঁড়ানো, শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলা৷ যে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে এই সমস্ত সংকটের সৃষ্টি তার অবসানের লক্ষ্য নিয়ে এই আন্দোলনই গড়ে তুলছে এসইউসিআই(সি)৷ প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালু, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, ছাঁটাই বন্ধ মদ ও মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ, নারী নির্যাতন বন্ধ, শ্রমিক–কৃষকের জীবনের নিরাপত্তা সহ ১১ দফা দাবিতে আগামী ১৩ নভেম্বর কলকাতার নবান্ন ও শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ ওই দিনই রাজ্যপালের কাছে এনআরসি চালুর হুমকির বিরুদ্ধে ডেপুটেশন দেওয়া হবে৷ সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনকে সফল করে তোলার জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ১১ সংখ্যা)