বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি চেষ্টা করেছিল মহান বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং শহিদ–ই–আজম ভগৎ সিংয়ের সাথে ব্রিটিশের কাছে দাসখত লিখে মুক্তি পাওয়া সাভারকারকে একাসনে বসাতে৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা৷
ঘটনার সূত্রপাত ২০ আগস্ট, যখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির গেটের সামনে এবিভিপি নেতাজি এবং ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে সাভারকারকে জুড়ে আবক্ষ মূর্তি বসিয়ে দেয়৷ এর প্রতিবাদে এ আই ডি এস ও এবং অন্যান্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ জানায়৷ ডি এস ও ঘোষণা করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এই তিনজনের জীবন ইতিহাস তুলে ধরে জনসভা করা হবে৷ ‘স্টুডেন্টস অ্যান্ড হ্যাসট্যাগ ৯’ নামে সংগঠন তৈরি হয় এবং ছাত্ররা সাভারকারের মূর্তি নেতাজি–ভগৎ সিংয়ের পাশ থেকে সরানোর দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন৷ বেশ কয়েকবার এবিভিপি–আরএসএসের গুন্ডারা দিল্লি পুলিশের সাহায্যে এই আন্দোলনের উপর আক্রমণ চালায়৷ প্রচারের ব্যানার ছিঁড়ে দিয়ে, ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে৷ কিন্তু ছাত্ররা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন, সাভারকার আন্দামানের জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার মুচলেকা দিয়ে বলেছিলেন, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি ব্রিটিশের অনুগত হয়ে থাকবেন এবং কোনও দিন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেবেন না৷
১৯২১ সালে এই দাসখতের ভিত্তিতে মুক্তি পেয়ে তিনি বাস্তবিকই কোনও দিন আর স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেননি৷ তিনি যে সংগঠন এবং বিশ্বাসের অংশ ছিলেন সেই আর এস এস এবং হিন্দু মহাসভা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলত৷
নেতাজি সুভাষচন্দ্র যখন আজাদ হিন্দ বাহিনীকে নিয়ে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত, সাভারকার তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশকে সাহায্য করতে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করেছেন৷ ১৯৪২–এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের লড়াইকেও নিন্দা করেছেন৷ অন্য দিকে ভগৎ সিং তাঁর জীবন উৎসর্গ করার আগে ‘দয়াভিক্ষার’–আবেদন ঘৃণায় প্রত্যাখ্যান করে বড়লাটের কাছে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ক্ষমতা থাকলে ব্রিটিশ সরকার আমাকে যুদ্ধবন্দি হিসাবে কামানের মুখে উড়িয়ে দিক৷ শহিদ ভগৎ সিং ছিলেন ‘নাস্তিক’, সুভাষচন্দ্র ছিলেন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’৷ আর সাভারকার ছিলেন হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক৷ মহম্মদ আলি জিন্নার ১৬ বছর আগেই সাভারকর হিন্দু আর মুসলমানকে দুই আলাদা জাতি হিসাবে চিহ্ণিত করে ‘দ্বিজাতি’ তত্ত্বের জন্ম দেন, যার বিষময় ফল আজও ভারতবাসী বহন করে চলেছে৷ এই সাভারকরকেই নেতাজি–ভগৎ সিং–য়ের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী সাজাতে চেয়েছিল এবিভিপি৷
এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দৃঢ়ভাবে বলেন সাভারকারের মতো একজন চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী ব্যক্তিকে নেতাজি এবং ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে একাসনে বসানো চলবে না৷ অবশেষে ছাত্রদের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূর্তি সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে৷ এই জয়ের জন্য ছাত্রদের অভিনন্দন জানিয়ে এ আই ডি এস ও স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন ধারার মহান বিপ্লবীদের জীবন চর্চার আহ্বান জানায়৷ কারণ এর মধ্য দিয়েই বিজেপির সর্বনাশা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করা সম্ভব৷