৩৭০ ধারা বিলোপ কাশ্মীরের জনগণকে আরও দূরে ঠেলে দেবে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাড়তি শক্তি দেবে — এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ। ৮ আগস্ট

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৬ আগস্ট, ২০১৯ এক বিবৃতিতে বলেন,

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পরামর্শে ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারা যেভাবে আকস্মিক এক ঘোষণার মাধ্যমে সকল গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি পদদলিত করে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা হল, জম্মু–কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করা হল এবং জম্মু–কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নামিয়ে আনা হল, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর কেন্দ্রীয় কমিটি তার তীব্র নিন্দা করছে৷

স্মরণ করা দরকার যে, ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় কাশ্মীর, যা তখনও একটি স্বাধীন রাজ্য হিসাবে অবস্থান করছিল, তাকে হয় ভারতবর্ষে না হয় পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার অথবা স্বাধীন রাজ্য হিসাবেই থাকার সুযোগ দেওয়া হয়৷ সে সময় পাক হানাদার বাহিনী কাশ্মীর দখলের জন্য আক্রমণ চালায় এবং কাশ্মীরের একটি অংশে পাকিস্তানের শাসন কায়েম করে৷ কিন্তু কাশ্মীরের জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে কাশ্মীরের বৃহদংশের জনগণ স্বেচ্ছায় ভারতে যোগদান করে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের কিছু অধিকার সংরক্ষণের শর্তে, যেগুলি ৩৭০ ধারা হিসাবে ভারতের সংবিধানে যুক্ত করা হয়৷ এইভাবে জম্মু ও কাশ্মীর ভারত রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়৷

তদানীন্তন কংগ্রেস সরকারের প্রয়োজনীয় কর্তব্য ছিল কাশ্মীরের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পথে সেখানকার জনগণকে জয় করে ধীরে ধীরে সমগ্র দেশের সাথে একাত্মকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করা৷ কিন্তু কংগ্রেস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করার পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক উপায়ে কাশ্মীরে শাসন চালায়, ৩৭০ ধারার শর্তাবলিকে ক্রমে লঘু করে দেয়, যা কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়৷ যার সুযোগ নিয়েই পাকিস্তান কাশ্মীরকে ভিত্তি করে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ শুরু করে দেয় এবং এই পথে জম্মু ও কাশ্মীরের পৃথকতাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে সর্বাত্মক সমর্থন ও মদত দিতে থাকে৷ ভারতে একের পর এক কেন্দ্রে কংগ্রেস পরিচালিত সরকারগুলি নিজেদের ভুল সংশোধন করার পরিবর্তে কাশ্মীরের জনগণের উপর নির্মম দমন–পীড়ন চালায়, যা কাশ্মীরের বিরাট অংশের জনসাধারণকে বিরূপ করে তোলে এবং ফলশ্রুতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির হাতই শক্ত করা হয়৷ এই পরিস্থিতিতে যখন জরুরি ছিল ৩৭০ ধারার পূর্ণ প্রয়োগ করে কাশ্মীরের জনগণের হৃদয় জয় করা ও তার দ্বারা পাক মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা, তখন হঠাৎ এভাবে ৩৭০ ধারা বাতিল শুধু কাশ্মীরের জনগণকেই আরও দূরে ঠেলে দেবে তাই নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকেও শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে৷ সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা প্রতিবাদী স্বরকে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ করা যায়, কিন্তু সব সময়ের জন্য করা যায় না, বরং তা বিরোধকে আরও বাড়ায়৷

সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ৩৭০ ধারা সহ কাশ্মীরের জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ দেশের সকল বাম–গণতান্ত্রিক শক্তি ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান– বিজেপি সরকারের এই অগণতান্ত্রিক ক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপনারা প্রতিবাদে সোচ্চার হোন৷ কাশ্মীরের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, কেন্দ্রীয় সরকারের এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের ফলে বিপথচালিত না হয়ে ভারতের গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন জনগণের অংশ হয়ে তাঁরাও প্রতিবাদে কণ্ঠ তুলুন৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৩ সংখ্যা)

Check Also

সব রাজ্যের সব শাসকের ভরসা ‘খয়রাতি’তেই

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট নাগরিকদের অধিকার। প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। বিধানসভা, লোকসভার মতো আইনসভাগুলিতে কে জনগণের প্রতিনিধিত্ব …