কর্মক্ষেত্রে কাজের যথাযথ মূল্য দেওয়া হয় না মহিলাদের, একই কাজ করে সমান বেতন পান না তাঁরা পুরুষ সহকর্মীদের মতো৷ প্রতি পদে বৈষম্য–অবমাননা সহ্য করে, শারীরিক–মানসিক নানা নির্যাতনের শিকার হন মহিলারা৷ এগুলি কোনও নতুন কথা নয়৷ শুধু অসংগঠিত ক্ষেত্রে নয়, সংগঠিত ক্ষেত্রেও একই চিত্র৷ কিন্তু তাই বলে পুরুষের সমান কাজে সক্ষম ‘দক্ষ কর্মী’র প্রমাণ দিতে মহিলাদের এমন কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, এমন কি আগে কেউ ভাবতে পেরেছে? প্রকৃতির নিয়মে মাসের কয়েকটি দিন মহিলা শ্রমিকরা দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন না, এই যুক্তিতে অপারেশন করে ডিম্বাশয়, জরায়ু সহ তাদের গোটা জননতন্ত্র বাদ দেওয়াতে বাধ্য করছে মালিকরা এর ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছেন মহিলা শ্রমিক৷ গরিব, খেটে খাওয়া মহিলারা ছাঁটাই হওয়া থেকে বাঁচতে মালিকের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ অবিশ্বাস্য হলেও এমন অমানবিক ঘটনাই ঘটেছে মহারাষ্ট্রের বিড় জেলায়৷
এখানে অন্যতম অর্থকরী ফসল আখ৷ অন্যান্য কাজের সুযোগ তেমন না থাকায় আখের জমিতে কাজ করে বহু মানুষ সংসার চালান৷ আখ কাটার সময় প্রচুর শ্রমিক লাগে, এতে মহিলা শ্রমিকই বেশি নিয়োগ করে মালিকরা৷ কারণ কম বেতনে, অমানুষিক পরিবেশে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করানো যায় তাদের দিয়ে৷ পরিবারের ভাত জোগাতে মহিলারা নানা বঞ্চনার শিকার হয়েও এখানে মুখ বুজে কাজ করতে বাধ্য হন৷ কখনও কোনও মহিলা শ্রমিক অসুস্থ হয়ে কাজ করতে যেতে না পারলে মালিকরা মজুরির টাকা কেটে নেয় তাই নয়, দিন প্রতি ক্ষতিপূরণও আদায় করে৷ শ্রমিকরা মালিকদের এই অন্যায় জুলুম মেনে নিতে বাধ্য হয় ভুখা পেটের কথা ভেবে৷ কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নয় মালিকরা৷ সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, কাজ এক দিনও বন্ধ রাখা যাবে না৷ তার জন্য এমনকী তারা মহিলা শ্রমিকদের অপারেশনের টাকা ধার দিতেও রাজি৷ এই হুলিয়া জারির পর সন্তান ধারণে সক্ষম মহিলারা অপারেশন করিয়ে নিজেদের ‘দক্ষ শ্রমিক’ প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এ কোন স্বাধীন দেশে বাস করছি আমরা, যেখানে মহিলাদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় বিষয়, এমনকী মা হওয়ারও স্বাধীনতাও মালিকরা লুঠ করছে এর প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলি অবিলম্বে সোচ্চার না হলে এ ঘটনা আজ মহারাষ্ট্রে ঘটেছে, কাল অন্যত্র হবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়?
বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমিকরা শুধুই মালিকের মুনাফা বাড়ানোর যন্ত্র৷ মানুষ হিসাবে তাদের ভাল–মন্দ, সুস্থতা–অসুস্থতার কোনও মূল্য নেই মালিকের কাছে৷ মহিলারা তো আরও সহজলভ্য৷ মহারাষ্ট্রের সরকার, তার প্রশাসন, সরকারি কিংবা বিরোধী, সংসদীয় রাজনীতির দলগুলি– কী করছে তারা?
মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপর এমন জঘন্য আক্রমণ এত সহজে নামিয়ে আনতে পারছে কী করে মালিকরা? পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থার রক্ষক বুর্জোয়া দলগুলি– বিজেপি, কংগ্রেস কিংবা শিবসেনা মালিকদের মুনাফার স্বার্থই রক্ষা করে চলে৷ শ্রমিকদের ওপর চলতে থাকা শোষণ–জুলুম নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই– বিশেষ করে তাঁরা যদি হন মহিলা শ্রমিক৷ মহিলাদের সম্পর্কে মধ্যযুগীয় অবমাননাকর ধারণায় এই দলগুলির নেতা–কর্মীদের অনেকেই আচ্ছন্ন৷ তাই মালিকরা অনায়াসে এমন অমানবিক হুকুম জারি করার সাহস দেখাতে পারছে৷