আরও একবার আন্দোলনের ময়দানে সুদানের সাধারণ মানুষ৷ এবার তাদের লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সামরিক শাসন হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা৷ মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে বারে বারেই পথে নেমেছে সুদানের জনতা৷ গত মাসে তাদের দাবি মেনে পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট ওমর আল–বশির৷ অন্তবর্তীকালীন শাসন চালাবার দায়িত্ব নেয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তৈরি ট্রানজিশনাল মিলিটারি কাউন্সিল (টিএমসি)৷
প্রথম থেকেই সুদানের মানুষ টিএমসি–র হাত থেকে দেশের শাসন ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছে৷ নানা রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৈরি করেছেন নাগরিকদের সংগঠন ‘দি ডিক্লারেশন অফ ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ ফোর্সেস’ (ডিএফসিএফ)৷ সেনাদের সংগঠনের সঙ্গে বার বার বৈঠকও হয়, কিন্তু দেশের সার্বভৌম কাউন্সিল কাদের নিয়ে গঠিত হবে এবং কে হবেন সুদানের আগামী প্রেসিডেন্ট– এ নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি৷ সেনাবাহিনী চেয়েছে দেশের শাসন ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখতে, যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন সুদানের সাধারণ মানুষ৷ বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা রাজপথে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ জনতা রীতিমতো ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রেখেছে আন্দোলনকারীদের৷ মিলিটারি কোনও ভাবেই নাগরিকদের দাবি মানতে না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দেয় ডিএফসিএফ৷ সুদানের কমিউনিস্ট পার্টি ডিএফসিএফ সংগঠনটির অংশ হিসাবে ২০ মে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সার্বভৌম কাউন্সিলের সদস্য ও প্রেসিডেন্ট পদে দেশের অসামরিক সাধারণ মানুষকেই জায়গা দিতে হবে, কারণ আসল লড়াইটা লড়েছেন তাঁরাই৷ এই দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করবে সুদানের মানুষ, বিবৃতিতে এই আশা প্রকাশ করা হয়েছে৷
ইতিমধ্যে সেনাদের সংগঠন টিএমসি–র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোহাম্মদ হামদান ডাগলো জনতার এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বলেছেন, আন্দোলনকারীরা দেশের সুস্থিতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন, এ জিনিস তাঁরা মেনে নেবেন না৷ এদিকে সেনাদের সমর্থন মাথায় নিয়ে আসরে নেমে পড়েছেন এক ধর্মগুরু আলি আল–গিজৌলি৷ তাঁর বক্তব্য ডিএফসিএফ যে অন্তর্বর্তী সরকার গড়তে চাইছে, তাকে ইসলামি শরিয়তি আইন মেনে চলতে হবে৷ এ দাবিও মানতে রাজি নন সুদানের আন্দোলনকারী মানুষ৷ কারণ অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানেন, এই শরিয়তি আইনের দোহাই দিয়েই অতীতে রাজনৈতিক বিরোধীদের বেছে বেছে আক্রমণ করেছে শাসক৷
এই পরিস্থিতিতে ডিএফসিএফ–র পাশাপাশি ডাক্তার, শিক্ষক, ফার্মাসিস্ট, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের একটি সংগঠন এসপিএ–ও আন্দোলন তীব্রতর করার ডাক দিয়েছে৷ আইন অমান্য করে ধর্মঘটে সামিল হওয়ার জন্য সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা৷