আপাতত গুজরাটের আলু চাষিদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি থেকে পিছিয়ে গেল পেপসিকো৷ কিন্তু তাদের ঔদ্ধত্য বুঝিয়ে দিয়ে গেল বহুজাতিক সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির সাথে চুক্তি চাষে চাষির সামনে কতবড় বিপদ ওত পেতে আছে৷
এপ্রিলে গুজরাটের ৪ জন চাষি বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি পেপসিকোর ভারতীয় শাখার কাছ থেকে ১.০৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের নোটিশ পান৷ পরবর্তীকালে আরও ১১ জন চাষির বিরুদ্ধেও মামলা করে পেপসিকো৷ তাঁদের অপরাধ কী? তাঁরা নাকি এফএল ২০২৭ (বাণিজ্যিক নাম এফসি–৫) জাতের আলুর চাষ করেছেন নিজেদের জমিতে৷ কোম্পানির বক্তব্য, এই জাতের আলু পেপসিকো কোম্পানির ‘লেজ’ নামক চিপসের জন্য সংরক্ষিত৷ এর জন্য আইনের জোরে পেপসিকো চাষিদের আদালতে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল৷ প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন চাষিরা৷ ভোটের মুখে চাষিদের এই ক্ষোভ অগ্রাহ্য করতে পারেনি গুজরাটের বিজেপি সরকার৷ পেপসিকোর পাশ থেকে আপাতত সরে দাঁড়াতে হয়েছে তাদের৷ দেশ জোড়া প্রতিবাদের আশঙ্কায় পেপসিকোও আপাতত মামলা থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, যদিও চাষিদের বিপদ কেটে গেছে, এ কথা বলা যায় না৷
অভিযুক্ত চাষিদের মধ্যে ১১ জনের সাথে পেপসিকোর চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, কোম্পানি এই জাতের আলুবীজ তাদের দেবে এবং ৪৫ মিলিমিটারের থেকে বড় আলুগুলি কিনে নেবে৷ এখন পেপসিকোর আব্দার, এর থেকে ছোট আলুগুলি যা তারা কেনেনি, চাষিরা সেগুলি আলাদা বিক্রি করতে বা বীজ হিসাবেও ব্যবহার করতে পারবে না৷ যে ৪ জনের বিরুদ্ধে পেপসিকো কোটি টাকার বেশি মামলা করেছিল, তাঁরা পরিচিত চাষিদের থেকে বীজ এনে আলু চাষ করেছিলেন৷ পেপসিকোর সাথে তাঁদের কোনও চুক্তিই ছিল না৷ কিন্তু কংগ্রেস সরকারের হাত ধরে চালু হওয়া উদারীকরণ–বিশ্বায়ন নীতি মেনে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার ২০০১ সালে যে আইন করে গেছে, তার বলেই পেপসিকো এখন বলতে পারছে ওই জাতের আলুর উপর কেবলমাত্র তাদেরই অধিকার থাকবে৷ চাষি যেখান থেকেই ওই বীজ পাক না কেন, পেপসিকোকে রয়্যালটি দিয়ে তবে চাষ করা যাবে৷ আবার যাদের চুক্তিও আছে তারা শুধু পেপসিকোকেই আলু বেচতে পারবে৷ আলুর সাইজ বা অন্য কোনও কারণে কোম্পানির তা পছন্দ না হলে তারা তা কিনবে না৷ কিন্তু তাই বলে চাষিও এই আলু বিক্রি বা সংরক্ষণ করতে পারবে না৷ চাষির যত লোকসানই হোক, আইন এমন যে, কোম্পানির পছন্দমতো আলু না ফলাতে পারলে চাষিকে পেপসিকোর কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না৷
পশ্চিমবঙ্গে আলু চাষিরা যখন দামের অভাবে বারবার মার খান সেই পরিস্থিতির সুযোগে কিছু সংবাদপত্র তাঁদের পরামর্শ দিয়ে থাকে, পেপসিকোর মতো কোম্পানিগুলির সাথে চুক্তিচাষে যাওয়ার৷ গুজরাটের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিচ্ছে কী মারাত্মক বিপদের মধ্যে যাওয়ার পরামর্শ তারা চাষিকে দেয়৷ কিছুদিন কিছু চাষির এতে অবশ্যই লাভ হবে৷ না হলে পেপসিকো তার শিকার ধরবেই বা কেমন করে? কিন্তু তারপর কোনও কারণে আলুর ক্ষতি হলেই চাষিকে এমন বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার নামই হল বহুজাতিকের সাথে চুক্তিচাষ৷
গুজরাটের চাষিরা সাময়িক রক্ষা পেয়েছেন, কিন্তু এই সর্বনাশা চুক্তিচাষের ব্যবস্থা রুখে দিতে না পারলে, চাষে বহুজাতিক পুঁজির প্রবেশাধিকার রুখতে না পারলে এই বিপদ যে কোনও সময় যে কোনও রাজ্যেই কৃষককে সর্বস্বান্ত করে দেবে৷