আজও মহান নেতা স্ট্যালিনের ঐতিহাসিক অবদানকে শ্রদ্ধা করেন ৭০ শতাংশ রুশ নাগরিক৷ সম্প্রতি স্বাধীন সংস্থা লেভাদা সেন্টার পরিচালিত এক সমীক্ষায় উঠে এল এই তথ্য৷
আরও একটি কথা বারবার উঠে আসছে একাধিক সমীক্ষায়– সমাজতন্ত্রের সেই সুখময় দিনগুলি ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেন রাশিয়া এবং পূর্বতন সোভিয়েতের সবকটি অঙ্গরাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ৷ তাঁদের রাশিয়া এখন সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের অন্যতম সদস্য৷ মারণাস্ত্রের ঝঙ্কারে সে দেশ পাল্লা দিচ্ছে মার্কিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে প্রায় সমানে সমানেই৷ অথচ একদিন যে শ্রদ্ধা জাতি হিসাবে তাঁরা বিশ্বের মানুষের কাছে পেয়েছেন, আজ তা কোথায় অন্তর্হিত এ কথা তাঁরা মর্মে মর্মে অনুভব করেন৷ তাঁরা দেখেছেন, ফুটবল বিশ্বকাপের কী বিশাল আয়োজন করেছিল তাঁদের দেশ৷ সেখানে জৌলুস–বৈভবের প্রদর্শনী ফেলে সারা বিশ্বের থেকে আগত অতিথিরা দেখতে চেয়েছেন, সেই সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের স্মৃতিচিহ্ণগুলি৷ এই শ্রদ্ধার আসন পাতা হয়েছিল কোন ভিত্তির উপর? জ্ঞান–বিজ্ঞান–সাহিত্য-সিনেমা থেকে শুরু করে খেলাধূলা তো বটেই, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন অবদান রাখছে সমজাতান্ত্রিক সমাজ– এই ছিল সেই শ্রদ্ধার ভিত্তি৷ তাই আজ কাজাখস্তানের আধুনিক তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, সোভিয়েত আমলে ছিল নারীর যথার্থ স্বাধীনতা৷ ভোগবাদী দুনিয়ার সাথে মৌলবাদের অদ্ভুত মিশেলে গড়ে ওঠা এক নতুন ক্ষমতার থাবার কাছে আজ আমরা তা হারাচ্ছি৷
এই কলকাতার বাসিন্দা নবতিপর এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর মুখে শোনা এক স্মৃতিচারণ মনে পড়ে৷ তিনি তখন সদ্য যুবক, চিনির ব্যবসার সূত্রে গিয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতে৷ সালটা বোধহয় ১৯৫১–৫২ হবে৷ যে মহল্লায় তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, একদিন দেখেন সেটি আলোর মালায় সাজানো হয়েছে৷ কারণ জানতে পেরে অবাক তিনি৷ এক শিশুর জন্ম হয়েছে, তাকে নিয়ে মা ফিরবেন হাসপাতাল থেকে৷ গোটা সোভিয়েত সমাজের পক্ষ থেকে ওই মহল্লার মানুষ দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক শিশুটিকে স্বাগত জানাচ্ছে, আর সংবর্ধনা দিচ্ছে মা–কে৷ এই ছিল মানুষ সম্বন্ধে সে দেশের দরদি দৃষ্টিভঙ্গি৷ আর সেই মানুষটিই ১৯৯০–এর দশকে সমাজতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার পর দেখেছিলেন বেওয়ারিশ অনাথ শিশুর দল রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, মস্কোর রাস্তায় বরফের মধ্যে বসে জুতো পালিশ করে নিজের পেট চালায় ১২–১৩ বছরের কিশোর৷ আজ রাশিয়ার মানুষ দেখে, যে গণিকাবৃত্তিকে নির্মূল করে দিয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সমাজ, আবার তা ফিরে এসেছে৷ যে দেশে সমাজতন্ত্র শ্রমজীবী মানুষের পারিবারিক বন্ধন, মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে তুলেছিল, আজ সে দেশে বাড়ছে পরিবারের ভাঙন, অশান্তি৷ ফিরে এসেছে বেকারি, ধনী–দরিদ্রের চরম বৈষম্য৷ ফিরে আসছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, মৌলবাদ, জাতি–সম্প্রদায়গত বৈরিতা– যে দুঃস্বপ্নগুলিকে বিদায় করে দিয়েছিল সমাজতন্ত্র৷
লেভাদা সেন্টারের জনমত সমীক্ষা দেখিয়েছে, রাশিয়ার অর্ধেকের বেশি মানুষের কাছে আজও স্ট্যালিন মানে ‘ন্যায়ের প্রতীক’৷ ব্যক্তিস্বাধীনতা–গণতন্ত্র ইত্যাদি ধারণাগুলির বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁদের যে ভোলানো হয়েছে, তা তাঁরা মর্মে মর্মে অনুভব করেন৷ কী হারিয়েছেন তা ভেবে আফশোস করেন বহু মানুষ৷ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সমাজবিজ্ঞানী বাইজভের কথায়, বর্তমান রাষ্ট্রপতি পুতিনের সরকারকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ দেখেন নিষ্ঠুর এবং অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত শক্তি হিসাবে৷ মনে করেন, মানুষের প্রতি কোনও দরদ নেই সরকারের৷ অন্যদিকে তাঁরা চান স্ট্যালিনের আমলের দরদি শাসনব্যবস্থা আবার ফিরুক৷ লেভাদা সেন্টারের সমীক্ষকরা বলেছেন, স্ট্যালিনকে স্বৈরাচারী হিসাবে তুলে ধরে সরকারি সংবাদমাধ্যম যতই প্রচার করুক, ২০০০ সালেও যত মানুষ তাতে বিশ্বাস করতেন ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা কমছে৷ মানুষ বলতে শুরু করেছে, স্ট্যালিন একজন ‘অনন্যসাধারণ নেতা’৷ যত বছর যাচ্ছে, তত বাড়ছে স্ট্যালিনের প্রতি শ্রদ্ধাবান মানুষের সংখ্যা৷
লেভাদা সেন্টারের সমীক্ষকরা দেখেছেন, সোভিয়েত আমলের সামরিক কুচকাওয়াজ থেকে সঙ্গীত, এমনকী শ্রেষ্ঠ শ্রমিকের পুরস্কারের মতো আদ্যন্ত সমাজতান্ত্রিক একটি কর্মসূচিকে পুরোপুরি নকল করছে বর্তমান পুঁজিবাদী শাসকরা৷ কারণ সমাজতন্ত্রের গৌরব আজও যে উচ্চতা নিয়ে মানুষের মনে স্থান করে আছে, তাকে ব্যবহার করে পুতিন সেই জাতীয়তাবোধের উত্তরাধিকারী বলে নিজেকে সাজাতে চান৷
সমস্ত বয়সের মানুষের মতামত সংগ্রহ করে সমীক্ষকরা দেখেছেন, সমাজতন্ত্রে যুবকরা ছিল জীবনের প্রতীক৷ তারা ছিল সবচেয়ে উদ্যোগী এবং প্রাণবন্ত৷ ছিল রাজনীতি সচেতন, দেশের সমস্ত কাজে, উৎপাদনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য৷ অথচ আজকের যুবকরা বেশিরভাগই বুর্জোয়া শাসন ব্যবস্থায় অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশের মতোই সমাজ সম্পর্কে নির্লিপ্ত ও উন্নাসিক হয়ে পড়ছেন৷ দেশের ভাল–মন্দ নিয়ে ভাবার তাগিদটাই যেন তাদের চলে গেছে৷ কিন্তু এঁরাও এখন বলতে শুরু করেছেন সমাজতন্ত্রের কথা৷ বহু যুবক স্ট্যালিনকে দেশের গৌরবের প্রতীক হিসাবেই দেখেন৷ এতদিন বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যম প্রচার করত, কেবলমাত্র বৃদ্ধেরাই সমাজতন্ত্র তথা স্ট্যালিনের স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে থাকে৷ এই সমীক্ষা উল্টে দিয়েছে সেই কথাকে৷ সমীক্ষকদের হিসাবে দেশের অর্ধেকের বেশি নাগরিক স্ট্যালিনকে বড় মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধা করেন৷ ৪১ শতাংশ মানুষ তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল৷
অথচ সেই ১৯৫৬ সাল থেকে সারা দুনিয়া জুড়ে কত কী–ই না প্রচার করা হয়েছে এই মহান নেতার বিরুদ্ধে৷ সোভিয়েত সংশোধনবাদীদের নেতা ক্রুশ্চেভের হাত ধরে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেস থেকে শুরু হয়েছিল স্ট্যালিনবিরোধী কুৎসার ঝড়৷ সাম্যবাদী আন্দোলনের আলখাল্লা গায়ে চাপিয়েই সংশোধনবাদী নেতৃত্বের এই অপপ্রচারকে স্বাভাবিকভাবেই লুফে নিয়েছিল মার্কিন–ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শিবির৷ সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জঘন্য আক্রমণ শানাতে স্ট্যালিনবিরোধী কুৎসা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷ দেশে দেশে বই মুখস্থ করে সমাজতন্ত্র বোঝা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বও সেই কথাই আউড়েছে৷ বহু কমিউনিস্ট, বামপন্থী সৎ মানুষও এতে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন৷ যেহেতু খোদ রাশিয়ার লেনিন–স্ট্যালিনের হাতে গড়া পার্টির নেতার মুখ থেকেই এই প্রচারের শুরু, ফলে অনেকের পক্ষেই সত্যটা ধরতে অসুবিধা হয়েছিল৷ কিন্তু মার্কসবাদী–লেনিনবাদী বিজ্ঞান প্রয়োগ করে সেদিনই এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের চোখে সংশোধনবাদী নেতৃত্বের আসল রূপ এবং এই কুৎসার কারণ ধরা পড়ে যায়৷ আজ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অনুপস্থিতির সুযোগে যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে দুনিয়া জুড়ে অবাধ দস্যুবৃত্তি চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনের সবকিছু ছারখার হয়ে যাচ্ছে, সেই সময় শোষিত–নিপীড়িত মানুষের বিবেকের কাছে সমাজতন্ত্রের আহ্বান নতুন করে ধাক্কা দিচ্ছে৷ তার সাথেই অবধারিত ভাবে উঠে আসছে মহান স্ট্যালিনের নাম৷ কারণ সমাজতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ আর স্ট্যালিন এক এবং অবিচ্ছেদ্য৷ এগুলিকে কেউ আলাদা করতে পারে না৷ কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন, স্ট্যালিনকে আক্রমণের কারণ একটাই, তাঁকে না সরালে সমাজতন্ত্রকে, মার্কসবাদ–লেনিনবাদকে আঘাত করার সাধ্য নেই কারও৷
এই মহান মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর সমসাময়িক সারা বিশ্বের সকল মনীষী এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রের দিকপাল ব্যক্তিত্বরা৷ রমাঁ রলাঁ বলেছিলেন, ‘রাশিয়া ও বিশ্বের জনগণের ইতিহাসে যেন তিনি খুলে দিয়েছেন এক ধ্রুপদী যুগ৷’ বস্তুত মার্কিন সাংবাদিক থেকে শুরু করে দুনিয়ার বহু মানুষই সেই যুগটাকে স্ট্যালিন যুগ বলেই অভিহিত করেছেন৷ প্রখ্যাত মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী ও নাট্যকার বার্নার্ড শ বলতেন, ‘পৃথিবীতে একটিমাত্র দেশ আছে যেখানে তুমি সত্যিকারের স্বাধীনতা পেতে পার– তার নাম রাশিয়া, সেখানে মহান স্ট্যালিন বেঁচে আছেন৷’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্ট্যালিনের আমলেই রাশিয়া গিয়ে বলেছিলেন, ‘না এলে এ জন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত৷’ আইনস্টাইন, জেবিএস হ্যালডেন, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিজ্ঞানীরা, চার্লি চ্যাপলিনের মতো মানবদরদি শিল্পী, আরও অগণিত বিশিষ্ট মানুষ সেদিন স্ট্যালিনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন৷ আর গভীর শ্রদ্ধায় স্ট্যালিনের নাম বুকে বহন করে লড়েছেন সারা দুনিয়ার গণতন্ত্রপ্রিয় কোটি কোটি জনগণ৷ ভারত সহ নানা দেশের স্বাধীনতা যোদ্ধারা যখন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁদের মনে স্থান করে নিয়েছে একটাই ভরসা – স্ট্যালিন আছেন, তাই সাম্রাজ্যবাদ জিততে পারে না, শেষ কথা বলবে শোষিত জনগণই৷ যে কথা ধ্বনিত হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতার আপসহীন যোদ্ধা নেতাজি সুভাষচন্দ্রের কন্ঠেও৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে রাশিয়ার অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা মারাত্মক চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়ে দেশকে এবং সমাজতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার জন্য স্ট্যালিন যখন চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাদের প্রকাশ্যে বিচারের ব্যবস্থা করেছেন, সেই বিচারের স্থলে উপস্থিত মার্কিন রাষ্টদূত পর্যন্ত অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন৷ বিদেশি কূটনীতিক, দেশি–বিদেশি অসংখ্য সাংবাদিকদের সামনে এমন প্রকাশ্য বিচারের কথা কোনও তথাকথিত গণতান্ত্রিক বুর্জোয়া সরকার কোনওদিন কল্পনাও করতে পারবে না৷ তাই দেখা গেছে, যে সময়টাকে দেখিয়ে পরবর্তীকালে স্ট্যালিনবিরোধী কুৎসাকে চরমে তোলা হয়েছে, ঠিক সেই সময়টার প্রশংসা করেছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা মনীষী৷
কিন্তু ক্রুশ্চেভের হাত ধরে সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব সংশোধনবাদীদের কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ায় সাম্রাজ্যবাদী–বৃহৎ পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম স্ট্যালিনকে নিয়ে অপপ্রচারের সুযোগ পেয়ে যায়৷ কুৎসা চলতে থাকে– তিনি রক্তপিপাসু, ডিক্টেটর, খুনি ইত্যাদি কোনও কথাই তারা বাদ দেয়নি৷ শুধু স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে লেখার কারণেই কিছু লেখককে নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে৷ দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে সংশোধনবাদীদের প্রভাব থাকায় সঠিক বামপন্থা, কমিউনিস্ট আদর্শ মাথা তুলতে বাধা পেয়েছে সাম্যবাদী আন্দোলনের ভিতর থেকেই৷ ফলে স্ট্যালিন সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়নের কণ্ঠ চাপা পড়ে গেছে৷ সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিবাদ ধ্বনিত করে গেছে কমরেড শিবদাস ঘোষের হাতে গড়া এসইউ সিআই (সি)৷ কিন্তু সেদিন প্রতিবাদের শক্তি সাম্রাজ্যবাদীদের, সংশোধনবাদীদের বিপুল প্রচারশক্তির তুলনায় কিছুই ছিল না৷ যদিও সত্যকে যে গলা টিপে হত্যা করা যায় না, আজকের রাশিয়ার মানুষের উপলব্ধি সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে৷
সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে নেতারা স্ট্যালিনকে ঠিকমতো না বোঝার ফলে সংশোধনবাদের খপ্পরে পড়েছেন৷ সমাজতন্ত্র যে শুধুমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নয়– হাজার হাজার বছরের শোষণমূলক সমাজব্যবস্থাকে বদলে একটা নতুন শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই– মার্কসবাদের এই বুনিয়াদি শিক্ষাটাকেই তাঁরা ভুলে গেলেন৷ এই পথে চলতে চলতে অবশেষে তাঁরা মার্কসবাদ–লেনিনবাদকেই ত্যাগ করেছেন৷ স্ট্যালিনের সঠিক গাইডলাইন না মানায় সমাজতান্ত্রিক শিবির দুর্বল হয়েছে৷ রাশিয়া, চীন সহ প্রায় সমস্ত সমাজতান্ত্রিক দেশে প্রতিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে পুঁজিবাদী শোষণ–শাসন৷ দিন যত গড়িয়েছে রাশিয়া সহ একদা সমাজতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া দেশগুলির জনগণ বুঝতে শুরু করেছেন কী হারিয়েছেন তাঁরা৷ নতুন করে লেনিন–স্ট্যালিনের ছবি নিয়ে রাশিয়া, সোভিয়েতের পুরনো অঙ্গরাষ্ট্রগুলিতে রাস্তায় নামছে মানুষ৷ পথের অনুসন্ধান করছেন তাঁরা৷ যে অনুসন্ধানে অবধারিতভাবে উঠে আসছে মার্কসবাদ–লেনিনবাদের শিক্ষা৷ স্বাভাবিকভাবেই এই মহান বৈজ্ঞানিক দর্শনকে একটা বিরাট যুগ ধরে যিনি বিশেষীকৃত করেছেন, সেই স্ট্যালিনের নামকে সত্যানুসন্ধানী মানুষ খুঁজে পাবেই৷ যে কারণে এত অপপ্রচারেও তাঁকে মুছে দেওয়া যাচ্ছে না৷
আসলে পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের শোষণে জর্জরিত মানুষ যত মুক্তির পথ খুঁজবে– ততই পাবে মার্কসবাদ–লেনিনবাদকে, পাবে স্ট্যালিন, মাও সে–তুং–কে, পাবে তাঁদের উত্তরসূরি শিবদাস ঘোষকে৷ এই সত্যকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না৷ কমরেড শিবদাস ঘোষ বলেছিলেন– ‘‘তত্ত্বগত ক্ষেত্রে অনন্য ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে শুধু নয়, সাম্যবাদী আন্দোলনের একজন অসামান্য সংগঠক হিসাবেও মার্কস, এঙ্গেলস এবং লেনিনের সঙ্গে স্ট্যালিনও আমাদের স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন৷ বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন লেনিন, আর স্ট্যালিন তাকে শান্তি ও সমাজতন্ত্রের দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করেছেন’’ (সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যালিনবিরোধী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে)৷ প্রমাণ হচ্ছে, মানুষের স্মৃতিপটে স্ট্যালিন উজ্জ্বল হয়েই আছেন৷ মহান স্ট্যালিনকে মুছে দেওয়া যায় না৷ (তথ্যসূত্র : মস্কো টাইমস ১৬.০৪.২০১৯)