সম্প্রতি ব্রিটিশ পুলিশ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাস থেকে গ্রেপ্তার করেছে উইকিলিক্স খ্যাত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে৷ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এই সাংবাদিক অসংখ্য ই–মেল ও ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দিয়ে ২০১০ সাল নাগাদ আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্মম বর্বরতার গোপন খবর গোটা বিশ্বের চোখের সামনে নিয়ে আসেন৷ সেই থেকে অ্যাসাঞ্জে মার্কিন শাসকদের বিষনজরে৷ প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার আমলে ইকুয়েডরে তাঁর আশ্রয় মেলে৷
এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে ইকুয়েডরের মার্কসিস্ট–লেনিনিস্ট কমিউনিস্ট পার্টি৷ দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর কার্যকলাপের সমালোচনা করে তারা বলেছে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতারির ঘটনায় প্রেসিডেন্ট মোরেনো জমানার আসল চেহারা সামনে এল, যার বৈশিষ্ট্য হল গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির কাছে সম্পূর্ণ নতিস্বীকার করে তাদের সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপন বোঝাপড়ায় গিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের অধিকার ধ্বংস এবং সরকারি নীতির বিরোধীদের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ পুলিশকে ইকুয়েডরের দূতাবাসে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছে মোরেনো সরকার, যাতে তারা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে গ্রেফতার করতে পারে৷ স্মরণ করা দরকার, অস্ট্রেলীয় এই মানুষটি ই–মেল সহ নানা কম্পিউটার–বার্তা ‘হ্যাক’ করে, দুনিয়া জুড়ে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নানা গোপন কার্যকলাপ বিশ্বের মানুষের সামনে ফাঁস করে দিয়েছেন৷ এই কারণেই তাঁকে হত্যা ও গ্রেফতারির ভয়ঙ্কর হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে৷
তাঁরা বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে এক প্রতিরোধহীন হ্যাকারকে তুলে দেওয়ায় মানবাধিকার লঙঘনের পাশাপাশি রাজনৈতিক আশ্রয়লাভের অধিকারটিও পদদলিত হল এবং তা চাপা দিতেই ইকুয়েডর সরকার এখন অ্যাসাঞ্জের নামে অভিযোগ তুলছে যে তিনি প্রেসিডেন্ট মোরেনো ও তাঁর পরিবারের বেআইনি ব্যবসার সমালোচনা করে রীতি ভেঙেছেন৷ অথচ প্রেসিডেন্টের এই সন্দেহজনক ব্যবসা নিয়ে ইকুয়েডরের ভিতরেই ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকাশ্য ও গোপন শর্তগুলি মেনে নিয়ে তাদের চাপের কাছে মাথা নুইয়ে সরকার যে ‘বড় সমস্যা’ থেকে বেঁচেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ অন্যদিকে এই ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছেন৷ তাঁর শাসনকালে কীভাবে ন্যায়নীতি ও অধিকার রক্ষা পেত তা নিয়ে বাগাড়ম্বর করেছেন, যা সর্বৈব মিথ্যা৷
সবশেষে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা যারা ইকুয়েডরের শ্রমিক, যুবক, সাধারণ মানুষ, এই ঘটনার আলোয় তাদের বুঝে নিতে হবে সরকারের আসল চেহারা, যা স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থবাহী৷এই সরকারের জনবিরোধী, জাতীয়তাবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের ঐক্য ও সংগঠন দৃঢ়তর করতে হবে৷