বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু গত ১৬ এপ্রিল চাকদহে এক নির্বাচনী জনসভায় তাঁদের প্রার্থীর সমর্থনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি–কে দিয়ে তৃণমূলকে হারানোর কথা ভুলেও ভাববেন না৷’’ ত্রিপুরায় বিজেপি’র লুঠ–সন্ত্রাস থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন তিনি৷
চাকদহের সমাবেশটি ছিল সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে৷ বোঝাই যায় সেখানে জমায়েতের অধিকাংশই ছিল দলের সংগঠিত অংশ৷ সিপিএমের নেতা–কর্মী–সমর্থক সেখানে প্রধানত ছিলেন৷ এই রকম একটি সভায় বিমানবাবুর এই উক্তি বুঝিয়ে দেয় যে, তিনি সিপিএমের কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশ্যেই কথাগুলি বলেছেন৷
তাঁর এই আকস্মিক হুঁশিয়ারি প্রমাণ করল যে, সিপিএমের কর্মী–সমর্থকদের একটা বড় অংশের মধ্যে বাস্তবেই একথা ঘুরছে, ‘এবার ভোটে বিজেপিকে ভোট দাও, না হলে তৃণমূলকে হঠানো যাবে না৷’ কোথাও গোপনে চাপা গলায়, কোথাও প্রকাশ্যেই সিপিএম কর্মীদের মুখে বিজেপির প্রতি সমর্থন শুনে বামমনস্ক্ বহু মানুষই হতবাক৷ তৃণমূলের দ্বারা সরকারি ক্ষমতা হারিয়ে সিপিএম কর্মীদের রাজনৈতিক আদর্শগত অবস্থানটা এই দাঁড়াল শেষমেশ প্রকাশ্য সভায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বিমান বসু বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা এ–খবর জানেন৷ জানারই কথা৷ একটি ‘মার্কসবাদী’ বলে দাবি করা ও শক্তিমান পার্টির কর্মীরা সরকারি ক্ষমতা হারিয়েই বিজেপির প্রতি সদয় হয়ে পড়ছেন৷ দলে দলে বিজেপিতে গিয়ে যোগ দিচ্ছেন৷ আর, এখন ভোটের মুহূর্তে নেতারা সাবধানবাণী দিচ্ছেন৷ কিছু দিন আগে এই প্রসঙ্গে দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাদের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘বিষ চেখে দেখবেন না৷’ তারপরও কিন্তু বিজেপির দিকে সিপিএম কর্মী–সমর্থকদের একাংশের ঢল কমেনি৷
তবে এতকাল ধরে ‘বামপন্থা’ ও ‘মার্কসবাদ’–এর কী চর্চা হল তাঁদের? নেতারা কী শিক্ষা দিলেন কর্মীদের সঠিক রাজনৈতিক চেতনায় সঞ্জীবিত করতে? ভবিষ্যৎ কিন্তু জবাব চাইবেই৷
আমরা মনে করি, বামপন্থার নামে সিপিএম নেতাদের ভোটসর্বস্ব সুবিধাবাদী রাজনীতির চর্চাই এই পরিণাম ডেকে এনেছে৷