স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে হামলার পিছনে যে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ এফবিআই আছে, তা ফাঁস হয়ে গেল ২৬ মার্চ স্পেনের এক হাইকোর্টে বিচারকের রায়ে৷ ২২ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার তীব্র বিরোধী বলে পরিচিত ‘ফ্রি জোস অন’ গোষ্ঠীর ১০ জন ছুরি, রড, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে মাদ্রিদের উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে ঢুকে পড়ে৷ চীনা বংশোদ্ভুত মেক্সিকান নাগরিক আদ্রিয়ান হংচ্যাং ভুয়ো পরিচয় দিয়ে দূতাবাসে ঢুকে এক রক্ষীকে কাবু করে বাকিদের ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেয়৷ তারপর দূতাবাসে কর্মীদের বেঁধে রেখে কয়েকটি কম্পিউটার, হার্ড ডিস্ক, মোবাইল ফোন, পেন ড্রাইভ নিয়ে পালায়৷ দূতাবাসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সহ কয়েকজন কূটনীতিক গুরুতর আহত হন৷
২৬ মার্চ স্পেনের উচ্চ আদালত এই মামলাটির উপর থেকে ‘গোপনীয়’ তকমা তুলে নিলে জানা যায় হামলার পরেই লুঠ হওয়া সামগ্রী নিয়ে হংচ্যাং সহ হামলাকারীরা পর্তুগাল হয়ে আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছিল হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই৷ তারা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফ বি আইয়ের হাতে লুঠ করা ফাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি তুলে দেয়৷ জানা যাচ্ছে, কিছুদিন আগে এই হংচ্যাং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চীনে জেল খেটেছে৷ তাকে সরাসরি মদত দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থা৷ যে সংস্থা আবার এফ বি আই–এর নির্দেশেই কাজ করে৷ উত্তর কোরিয়ার শাস্তি পাওয়া অপরাধীরা জেল থেকে ছাড়া পেলে তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগানই এদের গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য৷ এই গোষ্ঠীকে অর্থ থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের সাহায্য দিয়ে চলেছে আমেরিকা৷
স্পেনের মাদ্রিদ হাইকোর্টের বিচারক নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে, মামলাটি থেকে ‘গোপন’ তকমা সরিয়ে না দিলে কোনও দিন জানাই যেত না, কী জঘন্য চক্রান্ত আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে৷
এই মামলা প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পর এই গোষ্ঠীর সদস্যরা এখন বলছেন–ড্রাগ চোরাচালানের মতো কাজে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস জড়িয়ে, এই প্রচার করে মার্কিন সরকার তাদের উত্তেজিত করেছিল৷ এখন বোঝা যাচ্ছে তাদের ভুল বুঝিয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে নামানো হয়েছিল৷ তাদের আফশোষ এই মামলায় যাদের নাম জড়িয়েছে তারা স্পেনের আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে৷ কিন্তু এখনও এফ বি আই তাদের দায় নিতে রাজি নয়৷ তাদের প্রশ্ন, ভুল বুঝিয়ে আমাদের এভাবে বিপদের মধ্যে আমেরিকার সরকার ঠেলে দিল কেন? এই হল সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র–যা নিজের স্বার্থে মানুষের জীবনকে সর্বদাই বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়৷ (দ্য টেলিগ্রাফ, ইউ কে, ২৭ মার্চ ২০১৯)