সাম্প্রতিক চটকল ধর্মঘট থেকে কী পেলেন শ্রমিকরা? ধর্মঘটের দাবি ছিল, ৮টি বন্ধ চটকল খুলতে হবে, ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা করতে হবে, ৬ হাজার টাকা পেনশন দিতে হবে৷ বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, ঠিকা প্রথা রদ, পি এফ গ্র্যাচুইটির বকেয়া প্রদান ইত্যাদি দাবিতে এ আই ইউ টি ইউ সি সহ ২১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন যৌথভাবে ১ মার্চ থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়৷ পরে ধর্মঘট ২ সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে ১৫ মার্চ থেকে করার কথা বলা হয়৷ ধর্মঘটের আহ্বানের মধ্য দিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছে এবং তার ফলে যে কয়েকটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়ে গেল তাতে কী পেলেন চটশিল্পের আড়াই লক্ষ শ্রমিক? ১৩ মার্চ যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় তাতে স্বাক্ষরই বা করল কারা? কেন সকলেই করল না?
১৩ মার্চ শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যে চুক্তি প্রস্তাব পেশ করেন তাতে মূল দবিগুলি চূড়ান্ত উপেক্ষা করা হয়েছে৷ নামমাত্র কিছু দাবির প্রতি ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া হয়েছে৷ যেমন, নতুন শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১১২ টাকা বাড়িয়ে ৩৭০ টাকা করা হয়েছে, কিন্তু পুরনো শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২ টাকা– যা ভিক্ষাতুল্য৷ ৯০ শতাংশ স্থায়ী শ্রমিক রাখার বিষয়টি হাইকোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতির অধীনস্ত কমিটির বিবেচনার জন্য দেওয়া হয়েছে যারা তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করবেন৷ চুক্তিতে আপাতত ২০ হাজার শ্রমিককে স্থায়ী ও স্পেশাল বদলি করার কথা বলা হয়েছে, গ্রেড অ্যান্ড স্কেল নিয়ে কমিটি করার কথা বলা হয়েছে৷ এ ছাড়া প্রতিটি শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেওয়া, পি এফ, ই এস আইয়ের সুবিধা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়েছে৷ এই কয়েকটি বিষয় বাদ দিলে মূল সমস্যাগুলি সমাধানের কোনও উল্লেখ চুক্তিপত্রে নেই৷ এই অবস্থায় যখন জরুরি ছিল মালিকদের উপর চাপ বাড়িয়ে মূল দাবিগুলি ফয়সালায় নিয়ে যাওয়া, তখন সিটু এবং এ আই টি ইউ সি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ওয়াকআউট করে৷ এই বিভেদের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আই এন টি ইউ সি, তৃণমূলের আই এন টি টি ইউ সি, বিজেপির বি এম এস সহ ১৪টি ইউনিয়ন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে৷
তারপর সিটুর একক সিদ্ধান্তেই ১৫ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে একদিনের প্রতীকী ধর্মঘটে নামিয়ে আনা হয়৷ উভয়ক্ষেত্রেই সিটুর ভূমিকা মালিকদের সুবিধা করে দেয়৷ তাদের ভূমিকা শ্রমিক ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করে৷ এই ঘটনায় শ্রমিকরা হতাশ এবং বিভ্রান্ত৷ পুরনো শ্রমিকরা কিছুতেই ২ টাকা মজুরি বৃদ্ধি মেনে নিতে পারছেন না৷ তাঁরা ভুলতে পারেননি ২০০২ সালে সিপিএমের আমলে শ্রমিকদের মজুরি ১৭২ টাকা থেকে কমিয়ে দৈনিক ১০০ টাকা করা হয়েছিল৷ মজুরি কাটার সেই কালা চুক্তির ক্ষত আজও বহন করছেন শ্রমিকরা৷ মাত্র ২ টাকা মজুরি বৃদ্ধি সেই শ্রমিকদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে৷
এ আই ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত বেঙ্গল জুটমিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য ১৪ মার্চ এক বিবৃতিতে শ্রমিকদের মূল সমস্যাগুলি সমাধানে শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানান৷ সিটুর ভূমিকায় যে শ্রমিক ঐক্য ভেঙে গেল তা আবার ফিরিয়ে এনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি৷