মদের ব্যাপক প্রসারের বিরুদ্ধে ১৫ মার্চ রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে এস ইউ সি আই (সি)৷ আন্দোলনের প্রস্তুতিতে জেলায় জেলায় চলছে মদ–বিরোধী আন্দোলনের নানা কর্মসূচি৷
পূর্ব মেদিনীপুর : ২৮ জানুয়ারি তমলুক থানার নিকাশি বাজারে মদ ও মাদক দ্রব্য বিরোধী নাগরিক কনভেনশনে তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন৷ সভাপতিত্ব করেন সুশীল কুমার দাস৷ মদ কীভাবে সমাজ পরিবেশকে ধ্বংস করছে নানা ঘটনা উল্লেখ করে বক্তারা তা তুলে ধরেন৷ নিকাশি বাজারে লাইসেন্স প্রাপ্ত একটি মদের দোকান চলছে৷ প্রতিদিন বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে মদের আসর বসে৷ ওই রাস্তায় হাজার হাজার নারী পুরুষ ছাত্র–ছাত্রীরা যাতায়াত করে৷ চায়ের দোকানে, পানবিড়ির দোকানে, হোটেলে চোলাই মদের সঙ্গে লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকানের মদ নিয়ে গিয়ে বেআইনি ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে ৷ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কয়েকজন স্কুল ছাত্রীকে রাস্তায় মাতালরা হাত ধরে টানাটানি করায় এলাকার শত শত মহিলা লাঠি সোঁটা নিয়ে মদের দোকানে এবং হোটেলে রাখা বেআইনি মদ টেনে বের করে ভাঙচুর করেন এবং তমলুক শ্রীরামপুর রাস্তা অবরোধ করেন৷
গোসাবা : ৭ মার্চ গোসাবায় এস ইউ সি আই (সি) লোকাল কমিটির উদ্যোগে গোসাবা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখানো হয় এবং ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ এলাকায় মদ বন্ধ করা, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, ফেরিঘাটের উন্নত পরিষেবা, হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা বিভাগীয় ডাক্তার নিয়োগের দাবিতে কয়েকদিন ধরে হাট মিছিল, হ্যান্ডবিল প্রচার করার পর সুদৃশ্য প্ল্যাকার্ড ব্যানারে মিছিল করে গোসাবা বিডিও অফিসের সামনে পৌঁছায়৷ দাবি ওঠে, মদ চাই না হাসপাতালে ডাক্তার চাই, মদ চাই না স্কুলে শিক্ষক চাই এবং ছোট মোল্লাখালিতে কলেজ চাই৷ রাত ১০টা পর্যন্ত সরাসরি গদখালি–গোসাবা ফেরি চাই৷ গোসাবার অসংখ্য মানুষ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও কনভেনশনের প্রস্তাব দিয়েছেন৷
মুর্শিদাবাদ : ভগবানগোলার হাবাসপুর মতিমহল গ্রামের মানুষ বিশেষ করে মহিলারা অল ইন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বেগম রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির নেতৃত্বে মদ বিক্রির বিরুদ্ধে ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্রামে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় হন৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি ভগবানগোলা থানা এবং বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ কিন্তু প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৪ মার্চ গ্রামের শত শত মহিলা ও পুরুষ মদের ভাটি ভেঙে দেন এবং প্রচুর মদের বোতলও ভেঙে ফেলেন৷ এই আন্দোলন অন্যান্য এলাকার মানুষকেও মদবিরোধী আন্দোলনে নামতে সাহস জুগিয়েছে৷
বীরভূম : গ্রামের মানুষ এককাট্টা৷ এ গ্রামে মদ আর গাঁজার কেনাবেচা চলবে না৷ আবগারি দফতর যাতে গ্রামে মদের দোকানের লাইসেন্স না দেয় তার দাবিতে ৩ মার্চ পথে নামলেন মুরারই–১ ব্লকের ডুমুড় পঞ্চায়েতের কনকপুর গ্রামের মহিলা–শিশু–বৃদ্ধ–বৃদ্ধা সহ অধিবাসীরা৷
রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভিত্তিক মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ইতিমধ্যে এই গ্রামে দোকান খোলার অপচেষ্টা চলছে৷ গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গ্রামে কোনও মদের দোকান খুলতে দেব না৷
নদীয়া : রানাঘাটের অন্তর্গত হিজুলি–২ এবং যুগলকিশোর অঞ্চলে নতুন করে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার প্রতিবাদে এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলনে নেমেছেন৷ তাঁরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত এবং থানায় ডেপুটেশন দিয়েছেন এবং বিপুল সংখ্যক মহিলা পথ অবরোধও করেছেন৷ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন ‘মদ বিরোধী নাগরিক মঞ্চ’৷ মঞ্চের নেতৃতে ২৫ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরে জেলা আবগারি দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ মহিলাদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশিষ্ট সমাজকর্মী অপর্ণা গুহ এই আন্দোলনে নানাভাবে সহযোগিতা করেন৷
কলকাতা : জেলার সর্বত্র মদ বিরোধী প্রচার চলছে৷ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চেতলা থানায় বিক্ষোভ জানিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ এলাকার সাধারণ মহিলারাও বিক্ষোভে অংশ নেন৷ এস ইউ সি আই (সি)–র রাসবিহারী–আলিপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক কমরেড দিলীপ হালদারের নেতৃত্বে ৫ জনের প্রতিনিধি দল থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে দেখা করে দ্রুত এলাকায় মদ বন্ধের দাবি জানান৷ অফিসার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন৷