সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে দেওয়ার জন্য বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ–পুঁজিবাদ-সংশোধনবাদের চক্রান্ত সফল হয় ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর৷ সেদিন পতন হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বে প্রথম শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র৷ মহান লেনিন এবং তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মহান স্ট্যালিনের সুদক্ষ পরিচালনায় সে দেশে প্রথম শোষণ বঞ্চনার অবসান হয়েছিল৷ সেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি পুঁজিবাদে ফিরে যাওয়ায় সেদিন উল্লাসে মেতে উঠেছিল বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদ–পুঁজিবাদ সহ কমিউনিজম বিরোধী তাবৎ শক্তি৷ ঘোষণা করেছিল কমিউনিজম ভ্রান্ত৷ বিশ্ব থেকে সমাজতন্ত্র নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে৷
তারপর ২৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে৷ সে দেশের জনসাধারণ কি তৃপ্ত? সম্প্রতি একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ বিপরীত৷ ‘লেভদা সেন্টার পোলস্টার’–এর করা এই সমীক্ষা জানাচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার অধিকাংশ (৬৬ শতাংশ) মানুষ মর্মাহত৷ তাঁরা বলছেন, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁরা অনেক সুখে শান্তিতে ছিলেন৷ বেকারি, দারিদ্র, পতিতাবৃত্তি, জাতিদাঙ্গা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ায়৷ পুঁজিবাদী শোষণ ফিরে আসার পর ধীরে ধীরে এই সব সমস্যা ফিরে এসেছে রাশিয়ার বুকে৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বর্তমান দুরবস্থার তুলনা করে তাঁদের মন্তব্য, – ‘আগের জমানাই ভাল ছিল’৷ এই আকুতিতেই রাশিয়ার শহরে শহরে জনগণের উদ্যোগে লেনিনের মূর্তি পুনরায় স্থাপন করা হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, প্রতি বছরই সমাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার আকাঙক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ একই সংস্থার করা সমীক্ষায় গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৮ শতাংশ৷ এবার বেড়ে হয়েছে ৬৬ শতাংশ৷
সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০০৪ সালের পর থেকে এই সংখ্যা একটা রেকর্ড৷ শুধু তাই নয়, নবীন প্রজন্মের মধ্যে অর্থাৎ ১৮ থেকে ২৮ বছরের যুব সমাজের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি আকুতি বাড়ছে৷ সম্প্রতি রাশিয়ায় অবসরের বয়সসীমা ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে, সকল যুবক–যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে, তাঁরা ফিরতে চান সমাজতন্ত্রে৷
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এই আকুতিকে বাস্তব রূপ দিতে আজ অপেক্ষা রাশিয়ার বুকে সঠিক শ্রেণিচিন্তার ভিত্তিতে উপযুক্ত সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে সঠিক বিপ্লবী দল এবং নেতৃত্ব আবার গড়ে ওঠার৷ তবেই সংগঠিত হবে পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবা বিরুদ্ধে সচেতন মরণপণ সংগ্রাম৷ সেই সংগ্রামের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হবে পুঁজিবাদের ভিত্তি৷ দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে এই আকাঙক্ষাই ধ্বনিত হচ্ছে বারবার৷ আবার সমাজতন্ত্রের বিজয়পতাকা উত্তোলিত হবে দুনিয়ার বুকে৷ কারণ সমাজতন্ত্রই যে মানব–মুক্তির ইতিহাস নির্ধারিত পথ৷