কিছুদিন হল আলিপুর সংশোধনাগারের স্থান পরিবর্তন করে বারুইপুরে আনা হয়েছে৷ চার শতাধিক সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে ইতিমধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, কয়েক শত বিচারাধীন বন্দিকেও আনা হয়েছে৷ কিন্তু এত বন্দিকে রাখার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন তার ব্যবস্থা না করে এই কাজ করলে যা হয় তা সম্প্রতি ঘটেছে৷
২৪ জানুয়ারি সকাল থেকে বন্দিরা পানীয় জল, এমনকী বাথরুমে ব্যবহারের জন্য জলও পাননি৷ বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেও জল না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাঁরা দল বেঁধে জেল–গেটে এসে বিক্ষোভ দেখান৷ ওই বিক্ষোভের ঘটনা যে কর্তৃপক্ষ ভালভাবে নেয়নি তার প্রমাণ পাওয়া যায় সেদিন বিকালে জেলের ভিতর বন্দিদের একটি ফুটবল খেলার অনুষ্ঠানের পর৷ ফুটবল খেলার সময়ে কিছু ঘটনাকে অজুহাত করে বিকালে বন্দিদের উপর পুলিশ ও RAF লেলিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয়৷ এর ফলে ৭–৮ জন বন্দির হাত–পা ভাঙে ও গুরুতর আহত হন৷ কর্তৃপক্ষের এই নৃশংসতায় বন্দিরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন৷ সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২৪ জানুয়ারি রাত থেকে অনশন শুরু করেন৷ ঘটনার সংবাদ শোনারপরই দলের নেতৃত্বের তরফে ২৪ তারিখ গভীর রাতে কারা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোন করা হলে তিনি গোটা বিষয়টি ফুটবল খেলার সময়ের গণ্ডগোলের উপর চাপিয়ে দেন এবং লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেন৷
জেল কর্তৃপক্ষের তরফে অসহায় বন্দিদের উপর এই অমানবিক ও নৃশংস আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করে দলের রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য পরের দিন প্রেস বিবৃতি দেন৷ অনশনের চাপে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট তিন জন অফিসার যাঁরা পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী তাঁদের শাস্তি হিসাবে উত্তরঙ্গে বদলি করে দিতে বাধ্য হন৷ ২৬ জানুয়ারি সকালে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেডস নন্দ কুণ্ডু ও তরুণকান্তি নস্কর এবং রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড প্রফুল্ল মণ্ডল জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এক ডেপুটেশনে সাক্ষাৎ করে বন্দিদের উপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করার দাবি জানান৷ নেতৃবৃন্দের কাছে অনশনকারীদের প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ হালদার অফিসারদের শাস্তি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে অনশন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানান৷ সমগ্র ঘটনা বন্দিদের প্রতি রাজ্য সরকারের চরম অবহেলা ও একই সাথে নৃশংসতার পরিচয় বহন করছে৷
সিপিডিআরএস–এর প্রতিবাদ : ২৪ জানুয়ারি বারুইপুর সংশোধনাগারের বন্দিদের ওপর বর্বরোচিত পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএস–এর এক প্রতিনিধি দল ২৫ জানুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তিন দফা দাবিপত্র পেশ করে৷ তারা ঘটনার জরুরি তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, আহত বন্দিদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও সংশোধনাগারে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা, চিকিৎসক নিয়োগ সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান৷