Breaking News

কী স্বপ্ন কমরেড!

সিপিএম–ফ্রন্ট সরকারের শেষ শিল্পমন্ত্রী প্রয়াত নিরুপম সেন সম্পর্কে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র লিখেছেন, ‘সিঙ্গুর, শালবনী, নন্দীগ্রাম ঘিরে সমস্ত স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নের রাজত্বে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ (গণশক্তি–১৩.০১.২০১৯)

‘সমস্ত স্বপ্ন’ বলতে সূর্যবাবু কী বোঝাতে চেয়েছেন? তিনি কি মনে করেন, সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানা হলে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের রুদ্ধ দরজা খুলে যেত? সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা গুজরাটের সানন্দে গিয়েছে৷ সেই ন্যানোর হাল কী? গত জুন মাসে সেখানে তৈরি হয়েছিল একটিমাত্র ন্যানো গাড়ি৷ সিয়ামের হিসাবে, গত ডিসেম্বরে ২টি ন্যানো তৈরি হয়েছে৷ জানুয়ারিতে এসে ন্যানো উৎপাদন থেকে হাতই গুটিয়ে নিয়েছে টাটা মোটরস৷ অথচ টাটার চাহিদা মতো নরেন্দ্র মোদি সরকার সবই তো দিয়েছে সানন্দে৷ তা হলে?

সূর্যবাবু লিখেছেন, ‘সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম দু’বছর যেতে না যেতেই বিশ্বপুঁজিবাদী সংকটজনিত দীর্ঘ মন্দা শুরু হল’৷ তিনি উল্লেখ করেছেন ‘বিশিল্পায়ন’ তখন ছিল ‘দুনিয়া ও দেশব্যাপী’৷ পশ্চিমবঙ্গ কি দুনিয়া ও দেশের বাইরে? তা যদি না হয় তবে বিশিল্পায়নের সেই সময়ে সিঙ্গুরে–নন্দীগ্রামে শিল্পায়ন কীভাবে সম্ভব ছিল সূর্যবাবু? দুনিয়াব্যাপী সেই দীর্ঘ মন্দা কি এখন কেটেছে? সব দৈনিক পত্রিকার সাথে সিপিএমের বাংলা মুখপত্র গণশক্তিও (১২ জানুয়ারি) লিখেছে, ‘রেকর্ড পতন শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হারে’৷ এই শিরোনামে লেখা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশে শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের বাজার মিলছে না৷ ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে’৷ সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হলে তার দশা কি সানন্দের মতোই হত না? টাটা মোটরসের সর্বশেষ ঘোষণা ‘২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ন্যানো তৈরি ও বিক্রি বন্ধ’ করা হবে (আনন্দবাজার পত্রিকা–২৫.০১.২০১৯)৷

বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের এই তীব্র সংকটের যুগে শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখানো বা ‘শিল্পায়ন সম্ভব’ এমন ধারণা পোষণ করার সাথে মার্কসবাদের কোনও সম্পর্ক নেই৷ তবুও দক্ষিণপন্থী দলগুলির মতো ভোটপন্থী বামেরাও ভোট টানতে ‘শিল্পায়ন’, কর্মসংস্থানের খোয়াব দেখায়৷ কিন্তু মিথ্যা স্বপ্নের ফানুস ফাটতে দেরি হয় না৷

সিঙ্গুর–নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে সিপিএমের সরকারি ক্ষমতা হারানোকে কি সূর্যবাবু স্বপ্নভঙ্গ বলছেন? সিঙ্গুর–নন্দীগ্রামের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যা, আন্দোলনকারী মহিলাদের যৌন নিগ্রহ ইত্যাদির জন্য সূর্যবাবুরা আজও তাহলে অনুতপ্ত নন!

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৫ সংখ্যা)