মেক্সিকোর মার্কিন সীমান্ত লাগোয়া টামাউলিপাসে ৪৫টি কারখানার ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল৷ তাঁদের দাবি, মজুরি ২০ শতাংশ বাড়াতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ জনিত বোনাস দিতে হবে৷ ১৩ জানুয়ারি ২ হাজার শ্রমিক প্রথম ধর্মঘট শুরু করেন৷ তারপর বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে কারখানায় কারখানায়৷ অতি দ্রুত ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেন৷ ২৮ জানুয়ারি তা আরও বহু কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে৷ শিক্ষকরাও নেমেছেন আন্দোলনে৷
টামাউলিপাসের মাটামোরোস দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প শহর৷ এই এলাকার কারখানাগুলিতে প্রধানত মার্কিন বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি পুঁজি খাটায়৷ তৈরি হওয়া মালপত্রের বেশিরভাগটাই রপ্তানি হয় আমেরিকায়৷ বাস্তবে, মেক্সিকোর কৃষিপণ্যের মতো শিল্পপণ্যের বাজারটাও মূলত মার্কিন ধনকুবেরদের নিয়ন্ত্রণে৷ তাদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে মেক্সিকোর গুটিকয়েক দেশীয় একচেটিয়া কারবারি মুনাফার পাহাড় বানিয়ে তুলছে৷ দেশের বুর্জোয়া সরকারও এদের মুনাফার পথ পরিষ্কার করতে এইসব কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মজুরির হার নিতান্ত কম করে রেখেছে৷ কারখানায় কাজের পরিবেশও জঘন্য৷
অথচ সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই৷ দীর্ঘদিন ধরে জমা হতে হতে শ্রমিকদের ক্ষোভের বারুদ এবার ফেটে পড়েছে৷ শুধু মুনাফাবাজ মালিক ও সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, শ্রমিকদের ক্ষোভ আপসকামী ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধেও৷ নানা ঘটনায় শ্রমিকরা লক্ষ করেছেন, এইসব নেতারা যতটা না সাধারণ শ্রমিকদের হয়ে লড়েন, তার চেয়ে তাঁদের অনেক বেশি দহরম–মহরম মালিকদের সঙ্গে৷ জীবনের তেতো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্মঘটী শ্রমিকরা স্লোগান তুলেছেন– ‘গরিব শ্রমিকদের পয়সাওয়ালা নেতারা নিপাত যাক’৷ বাস্তবিকই, মেক্সিকোর রিক্ত শ্রমিকদের এবারের আন্দোলনের নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে ধর্মঘটীদের মধ্যে থেকেই৷ তাঁরা বুঝেছেন, বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের এর মতো সংগঠন শুধু যে শ্রমিকদের দুর্দশা সম্পর্কে ভ্রুক্ষেপহীন তাই নয়, আসলে তারা চায় শোষণ–নিপীড়নের এই ব্যবস্থাটাকে নির্বিঘ্ণে কাজ করে যেতে দিতে৷ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভদ্রস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মজুরির জোরদার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন মেক্সিকোর শ্রমিকরা৷ রক্ত জল করা পরিশ্রমে মালিকের মুনাফা জোগান দেওয়ার বিনিময়ে অন্যায় জুলুম সহ্য করতে আর রাজি নন তাঁরা৷