ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে ডারউইন তত্ত্বের উপর আবার আক্রমণ, প্রতিবাদে বিজ্ঞানীরা
এবার একজন ‘শিক্ষিত’ বিজ্ঞানী, অজৈব রসায়নের অধ্যাপক এবং একটি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে দাবি করলেন, ‘মহাভারতে কৌরবদের জন্ম স্টেম সেল থেকে এবং টেস্ট টিউব প্রযুক্তির মাধ্যমে’৷ তিনি আরও বলেছেন, ‘পৌরাণিক মহাকাব্য ইতিহাসই’৷
এ হেন আরও অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার প্রাচীন ভারতে হয়েছে বলে বিজ্ঞান কংগ্রেসের শিশু–কিশোরদের অধিবেশনে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন৷ কী নেই সেই ব্যাখ্যায়– ‘বিষ্ণুর দশাবতার তত্ত্ব ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের চেয়েও উন্নত’, ‘রামায়ণের যুগে রাবণের ২৪ রকমের বিমান ছিল’, ‘সেইসময় শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দর ছিল’, ‘হাজার বছর আগে আমাদের দেশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ছিল’ ইত্যাদি৷
এরই সাথে আরেক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, নিউটন, আইনস্টাইনের পদার্থবিদ্যা ছিল ভুল৷ আসলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের নাম হবে নরেন্দ্র মোদি তরঙ্গ৷ আর মহাকর্ষজনিত আলোর বেঁকে যাওয়া– হর্ষবর্ধন ঘটনা৷
প্রশ্ন হল, এইভাবে বিজ্ঞান কংগ্রেসের মতো মঞ্চকে বারবার দূষিত করা হচ্ছে কেন? নবজাগরণের ভাবধারায় বিজ্ঞানচর্চার তৎকালীন পীঠস্থান কলকাতায় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিজ্ঞান কংগ্রেসের পথ চলা শুরু হয়৷ এই বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন সেই যুগের মহান বিজ্ঞানীরা৷ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৯২০), স্যার রামনাম চোপড়া (১৯৪৮) এবং অধ্যাপক পি পারিজা (১৯৬০) সহ অনেকেই প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার যথাযথ স্বীকৃতি দিয়েই আধুনিক ভারতে জোর দিয়েছেন যুক্তিনির্ভর, পরীক্ষা–প্রমাণ ভিত্তিক বিজ্ঞান চর্চায়৷
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের শেষ পর্বে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে সর্বাত্মক আক্রমণ নেমে আসছে বিভিন্নভাবে৷ ক্ষমতায় আসীন প্রায় সব দলই বিভিন্নভাবে শুধু এই প্রবাহকে ইন্ধন দিচ্ছে তাই নয়, সরাসরি ময়দানে নেমে পড়েছে শিক্ষাকে ধ্বংস করতে৷
কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকার এই প্রচেষ্টায় নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের রাস্তা নিয়েছে৷ সেই ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি হাসপাতাল উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ‘গান্ধারীর শত পুত্র প্রসবের ঘটনা মহাভারতের যুগে স্টেম সেল ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং চর্চার উদাহরণ’৷ ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসে এইভাবে বিজ্ঞানকে আক্রমণের রাস্তা তিনিই শুরু করেন সুচারুভাবে৷ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা তাঁর পথই অনুসরণ করে চলেছেন৷
আশার কথা, বহু বিজ্ঞানী প্রতিবাদে নেমেছেন, রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড হাতে দাবি করছেন– এই অবস্থার পরিবর্তন চাই৷ আইএসসি বাঙ্গালোর, কোচি বিশ্ববিদ্যালয়, কিংবা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ– সর্বত্রই আওয়াজ উঠছে– ‘অপবিজ্ঞানের প্রচার, প্রসার বন্ধ কর’৷