১৫ ডিসেম্বর স্পেন জুড়ে পথে নামলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা৷ সরকারের কাছে তাঁদের দাবি, সংসার চালানোর মতো পেনশন দিতে হবে, পেনশন ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করা চলবে না৷ দীর্ঘ ১২ মাস ধরে চলছে এই আন্দোলন৷২০১৮–র জানুয়ারি মাসে বিলবাও শহরে এর শুরু৷ ধীরে ধীরে তা ছড়িয়েছে স্পেনের ২০০টিরও বেশি শহরে৷
এ দিন বিলবাও শহরে ২৫ হাজারেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত মানুষ বিক্ষোভ দেখান৷ একই দিনে রাজধানী শহর মাদ্রিদেও পথে নামেন কমবেশি একই সংখ্যক মানুষ৷ ফ্রান্সে জ্বালানি গ্যাসের দামবৃদ্ধি বিরোধী যে তীব্র গণআন্দোলন সম্প্রতি জয়ের মুখ দেখেছে, তার প্রভাব পড়েছে স্পেনের এই আন্দোলনে৷
বয়সে প্রবীণ হলেও বিক্ষোভকারীদের সংগ্রামী মেজাজ ছিল তারুণ্যে ভরা৷ সারা জীবন কাজ করে প্রশাসনকে সচল রাখার বিনিময়ে বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা যে পেনশন পান তা দিয়ে চড়া মূল্যবৃদ্ধির সাথে যুঝতে পারছেন না৷ তাই জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা৷ আন্দোলনকারী সংগঠনের আহ্বায়ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের উপার্জিত অর্থের অংশ দিয়ে আমরা যে সরকারি পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, বেসরকারি পেনশন পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাঙ্ক, বিমা কোম্পানি কিংবা বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলিকে তা কেড়ে নিতে দেব না৷’
মাদ্রিদের বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের এক মুখপাত্র মন্তব্য করেন, স্পেনে প্রধান যে দুটি রাজনৈতিক দল একের পর এক সরকারে বসে, তারা কেউই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধান করছে না৷
শুধু স্পেনে নয়, গত ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা বেসরকারি পেনশন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পথে নামেন৷ বয়সে প্রবীণ হলেও এই মানুষগুলিকে রেহাই দেয়নি পুলিস৷ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা৷ সংগঠনের এক নেতা সহ গ্রেপ্তার হন ১২ জন৷
চিলিতেও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ রয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে৷ এর আগে ২০১৬ সালে গোটা চিলি জুড়ে বেসরকারি পেনশন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ গড়ে ওঠে৷ কিন্তু সরকার কর্ণপাত না করায় অবস্থার বিশেষ হেরফের হয়নি৷ এখন চিলির ৯১ শতাংশ শ্রমিক–কর্মচারী যা পেনশন পান তা দেশের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরির অর্ধেক৷ তাই আবার আন্দোলনের পথ ধরেছেন অবসরপ্রাপ্তরা৷ দাবি তুলেছেন, গোটা কর্মজীবনের শেষে বৃদ্ধ বয়সে অন্তত ভদ্রস্থ জীবনযাপনের ব্যবস্থাটুকু করুক সরকার৷ আন্দোলনের চাপে সেখানকার সরকার একটি পেনশন সংস্কার পরিকল্পনা সংসদে পেশ করেছে৷ যদিও বিরোধীদের মতে, সরকার এসব করে সময় কাটিয়ে দেওয়ার ফন্দি করছে৷
একই পরিস্থিতি দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ ব্রাজিলের৷ সেখানে সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো৷ দপ্তরের কাজ শুরু করার আগেই নভেম্বর মাসে তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন, সরকারে বসেই দেশের রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খরচসাপেক্ষ পেনশন ব্যবস্থা পাল্টে ফেলবেন৷
গোটা দুনিয়ার প্রতিটি পুঁজিবাদী দেশ আজ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত৷ ভয়ংকর বাজার সংকট সামাল দিতে নতুন কল–কারখানা খোলা তো দূরের কথা, বরং একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ কাজ না–পাওয়া ও কাজ–হারানো শ্রমিক–কর্মচারীর দল শিল্পপণ্য কেনার ক্ষমতা হারিয়ে আরও বাড়িয়ে তুলছে বাজার সংকট৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপর্যস্ত বুর্জোয়া সরকারগুলি রাজকোষ ঘাটতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি প্রকল্পগুলি থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে৷ এমনকী বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন পেনশনেও কোপ বসাতেও দ্বিধা করছে না৷ বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টায় এর বিরুদ্ধে বয়সের ভার উপেক্ষা করে পথে নামতে হচ্ছে অবসরপ্রাপ্তদের৷ পড়তে হচ্ছে পুলিশি হামলার মুখে৷ অকর্ম্মণ্য অপদার্থ এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের যে আর কিছু পাওয়ার নেই, এই সত্য এর পরেও আর ঢেকে রাখা যায় কি?