চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ

 

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে উপাদানগুলি অপরিহার্য তার অন্যতম হল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা৷ কথায় আছে, ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’৷ কিন্তু আজকের দিনে ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল খুবই করুণ৷ স্বাধীনতার পর থেকে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রত্যেকেই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমিয়ে চলেছে৷

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে গত ১৯ জুন এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়৷ তাতে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা খুবই উদ্বেগজনক৷ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর জন্য রয়েছেন ১০ লক্ষ অ্যালোপাথি চিকিৎসক৷ অর্থাৎ, ১১, ০৮২ জন প্রতি একজন অ্যলোপ্যাথি চিকিৎসক৷ তুলনামূলকভাবে কম উন্নত রাজ্যগুলির অবস্থা আরও ভয়ানক৷ যেমন বিহারে ২৮,৩৯১ জনের জন্য বরাদ্দ মাত্র একজন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক৷ দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবস্থা আরও ভয়াবহ৷ ২০০৩ সালে সরকারি দন্তচিকিৎসক ছিলেন ৫০,০০০ জন৷ ২০১৭–তে বেড়ে হয়েছে ২.৫ লক্ষ৷ কিন্তু চিকিৎসক ও রোগীর অনুপাত তুলনামূলকভাবে খারাপ হয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  ‘হু’ (ডব্লিউএইচও)–এর মানদণ্ড অনুযায়ী ৭,৫০০ জনের জন্য একজন দন্তচিকিৎসক থাকার কথা, বর্তমান ভারতে এই সংখ্যাটা ১,৭৬,০০৪ জনের জন্য একজন৷ ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের অবস্থা আরও খারাপ৷ ছত্তিশগড়ে ২৫ লক্ষ রোগীপিছু একজন দন্তচিকিৎসক৷ ঝাড়খণ্ডে ১০ লক্ষ রোগীর জন্য একজন দন্তচিকিৎসক৷ উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাটি হবে প্রায় ১১ লক্ষ৷

কেবলমাত্র চিকিৎসকের ঘাটতি নয়, সরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থাও তথৈবচ৷ দেশে ২৩ হাজার হাসপাতাল রয়েছে৷ তাতে রয়েছে মাত্র সাত লক্ষ বেড৷ সরকারি হাসপাতালে ১,৮৪৪ জন রোগীর জন্য বরাদ্দ একটি বেড, তার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ২০,০০০ হাসপাতালে বেডের সংখ্যা তিন লক্ষ৷ রোগীর বিচারে এই সংখ্যাটা এতই কম যে এক, একটি বেডে চার–পাঁচজন রোগী রেখে চিকিৎসা করতে হয়৷ বেডে যাদের জায়গা হয় না তাদের মেঝেতে রাখতে হয়৷ সরকারি হাসপাতালে চিত্রটা এ’রকম কেন? স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল অবস্থার অন্যতম কারণ, বরাদ্দের অভাব৷ দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১.০২ শতাংশ খরচ হয় স্বাস্থ্য খাতে৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭–তে স্বাস্থ্যখাতে মোট যা খরচ হয়েছে তার ৬৭.৭৮ শতাংশ রোগীকে নিজের পকেট থেকে দিতে হয়েছে৷ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ ১,১১২ টাকা, অথচ এককালীন হাসপাতালে ভর্তির গড় খরচ ২৬,৪৫৫ টাকা৷ তাহলে গরিব মানুষ কোথায় যাবে?

 এ দেশে একটা সাধারণ রোগ সারাতে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়৷ মধ্যবিত্ত–গরিব মানুষ একটু চিকিৎসার জন্য জমিবাড়ি, ঘটিবাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন৷ আমরা যদি একটু বাইরের দিকে চোখ রাখি দেখতে পাব, রাশিয়া, মিশর, সানফ্রান্সিসকো, থাইল্যান্ড সহ বহু দেশে বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়৷ আমাদের দেশে রোগী ও চিকিৎসকের প্রতিকূল অনুপাত দূর করতে এই মুহূর্তে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ১০ লক্ষের মতো চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করতে হবে এবং হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামো উন্নত করে বেডসংখ্যা বাড়াতে হবে৷ শুধু তাই নয়, চিকিৎসা খাতে সরকারি বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়াতে হবে৷ তবেই এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যাবে৷

গৌরাঙ্গ মাইতি

সল্টলেক, কলকাতা

(৭১ বর্ষ ১ সংখ্যা ৩ আগস্ট, ২০১৮)