তিন বছরের জন্য নিয়োগ৷ যোগ্যতা– সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও বয়স হতে হবে ৪০৷ তা হলেই কেন্দ্রীয় সরকারি সচিবের জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে পারবেন একজন৷ বেতন ৮০ হাজার টাকা৷ তার জন্য আবেদনকারীকে কোনও পরীক্ষায় বসতে হবে না৷ বরাবরই এই সব পদ আইএএস–দের জন্য নির্দিষ্ট ছিল৷ এবার থেকে সে সব বাধা তুলে দিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার৷ কৃষি থেকে বাণিজ্য, অর্থ থেকে বিমান মন্ত্রক, জাহাজ থেকে সড়ক পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পদে বেসরকারি ক্ষেত্রের পেশাদারদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
বিতর্ক উঠেছে এখানেই৷ এতদিন সরকারি পদে সরকারি নানা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হত৷ এখন কী এমন ঘটল, যে এভাবে নিয়োগ না করে কারও তাঁবেদারিতে (সরকারের) বেসরকারি ভাবে নিয়োগ করা হবে৷ চার বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের কাজে গতি আসেনি, প্রধানমন্ত্রীর নাকি এমনই উপলব্ধি৷ তাই নতুন ভাবনা, প্রশাসনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অফিসারদের অভাব মেটাতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত৷ যুগ্ম সচিবরাই মন্ত্রিসভার নোট, ফাইল তৈরি করেন৷ তাই এই নিয়োগ প্রয়োজন৷ তাই যদি হয়, তবে আইএএস–দের সাড়ে ছয় হাজার অনুমোদিত পদের মধ্যে হাজার দেড়েক পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে কেন?সরকার সেগুলিতে নিয়োগ করছে না কেন? যোগ্যতর লোকের অভাবে কি? এছাড়া, এই সচিবদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষ থাকা ছিল আবশ্যিক শর্ত৷ তার মানে সমস্ত সচিব সমস্ত ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন, তা নয়৷ নিরপেক্ষ থাকার বিষয়টি আবশ্যিক হওয়ায় অন্তত কিছুটা হলেও সেই ভূমিকা তাঁরা পালন করতে পারতেন৷ এখন নিয়োগ পদ্ধতি সরাসরি বিজেপি সরকারের মর্জি মাফিক হওয়ায় নিরপেক্ষ কথাটা সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হবে৷
কেউ বলতে পারেন, এগুলি সরকার বিরোধীদের কুযুক্তি৷ কিন্তু সরকারের গত চার বছরে ভূমিকা তো এই বক্তব্যকেই সমর্থন করে৷ যে সমস্ত পদে প্রার্থী মনোনয়ন সরকারের অধিকারের আওতায় পড়ে, এমনকী যেখানে তাদের অধিকার নেই, সেখানেও বিজেপি সরকার ‘কাছের লোক’ বসিয়েছে৷ ঐতিহ্যমণ্ডিত পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ কিংবা সিবিএফসি–র চেয়ারম্যান পদে পহেলাজ নিহালনির নিয়োগ এবং তাঁদের খোলাখুলি বিজেপি–সঙঘ পরিবারের আজ্ঞাবহ করে তোলা দলতন্ত্রের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত৷ এর পরেও সচিব নিয়োগের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে কি? ‘ঠিকা প্রথা’য় নিয়োগ করা সচিবরা কাজ টিকিয়ে রাখতে বিজেপির নেতা–মন্ত্রীদের সন্তুষ্ট করে চলবেন না, এরকম আশ্বাস বিজেপি নেতারাও দিতে পারবেন বলে মনে হয় না তাঁদের নিয়োগ করা সচিবরা দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করবেন, এটা খুব বিশ্বাসযোগ্য কি? তা হলে সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বিপুল বেতনে সচিবদের এমন নিয়োগ দেশের মানুষ মানবে কেন?
(৭০ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা ২২ জুন, ২০১৮)