বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার, ক্ষুব্ধ সরকারি চিকিৎসকরা

সরকারি চিকিৎসকদের একটা বিরাট অংশকে বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে ১৬ এপ্রিল রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দিল সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম এবং মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার৷

এই মুহূর্তে গ্রামীণ হাসপাতালে ৯০ শতাংশ এবং জেলা হাসপাতালে ৫০ শতাংশ বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য৷ এই তথ্যই দেখিয়ে দেয় গ্রাম ও জেলাস্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থা কোন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে৷ জেলাস্তর থেকে যে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন রেফারড হয়ে কলকাতায় আসছে তার মূল কারণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর মারাত্মক অভাব৷ মুখ্যমন্ত্রী যে সমস্ত মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন সেগুলিও মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে৷

প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল সরকার তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না? এর কারণ কি বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবসার বাজার তৈরি করে দেওয়া? সাধারণ মানুষকে সরকারি হাসপাতাল থেকে সুকৌশলে বেসরকারি নার্সিং হোমে পাঠনোর ব্যবস্থা করা?

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস এবং মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক ডাঃ অংশুমান মিত্র বলেন, ‘স্বাস্থ্যদপ্তরের অধীনে কর্মরত চিকিৎসক যাঁরা গ্রামে তিন বছরের বেশি সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এবং নিট–পিজি ২০১৮ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন ২০৬ জন চিকিৎসকের এম ডি /এম এস পড়ার পথে নানারকম অন্তরায় সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ নিত্য নতুন সরকারি নির্দেশিকা পরিবর্তন করা, সরকারি নির্দেশিকার লিখিত অর্থ বিকৃত করে নানা রকম ব্যাখ্যা দেওয়া, যাঁরা ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছেন তাঁদেরকে ভর্তি প্রত্যাহার করতে চাপ দেওয়া, স্পনসরশিপ প্রদান করেও তা বাতিল করা ইত্যাদি নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে এই ডাক্তাররা কিছুতেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না পান৷

সংগঠন দুটির দাবি, নিয়ম মেনে এম ডি /এম এস আসনে ৪০ শতাংশ এবং ডিপ্লোমা আসনের ৫০ শতাংশ সরকারি ডাক্তারদের দিতে হবে৷ এখানে ট্রেনি রিজার্ভ (টি আর) নিয়ে চলছে সরকারি টালবাহানা৷ কখনওই পরীক্ষার আগে জানানো হয় না, চাকরিরত ডাক্তারদের জন্য কতগুলি আসন বরাদ্দ আছে৷ তেমনি যে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসককে টি আর দেওয়া হয়েছে, তাঁদের এতটাই দেরি করে দেওয়া হয়েছে যে, এ বছর তাঁরা এমডি/এমএস ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারছেন না৷ অনেককে আবার একস্ট্রার্ডিনারি লিভ–এ ছাড়া হয়েছে, যাঁরা মাইনে তো দূর অস্ত্, স্টাইপেন্ডও পাচ্ছেন না৷ কেন স্বাস্থ্যদপ্তরের এই খামখেয়ালিপনা? কেন এই নৈরাজ্য?

এর ফলে শুধু ডাক্তারদের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে পড়ছে৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উন্নতমানের চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ এদিন ডেপুটেশনের সময় রাজ্যপাল ডাক্তারদের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন৷ সংগঠন দুটির আরও দাবি, উত্তীর্ণ সকল চিকিৎসককে এম সি আইয়ের গাইড লাইন মেনে মে মাসের  মধ্যেই টি আর দিয়ে রিলিজ করতে হবে৷ অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে তাঁরা সামিল হবেন৷

(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)