একের পর এক ধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে উত্তাল দেশ৷ বিশেষত আসিফা ধর্ষণ কাণ্ড৷ দাবি উঠেছে– ধর্ষকদের এমন শাস্তি দেওয়া দরকার যাতে এই জঘন্যতম অপরাধ করার সাহস আর কেউ না পায়৷ অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি৷ কিন্তু সাথে সাথে প্রশ্ন জাগে, শুধুমাত্র ধর্ষকের শাস্তিই কি ধর্ষণমুক্ত পৃথিবী গড়তে পারে? ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছে৷ নির্ভয়া কাণ্ডের পশুরাও শাস্তি পেয়েছে৷ কিন্তু তারপরও প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে এই নৃশংস বর্বরতার খবর৷
এই পৈশাচিক কাণ্ডের মূল কারণ নারীকে ভোগের বস্তু হিসাবে মনে করা৷ শত শত বছরের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিন্তায় ‘মেয়ে মানেই ভোগ্য বস্তু’৷ প্রচলিত নানা ধর্মও বিভিন্ন সময়ে এই চিন্তাই সমাজ মননে গেঁথে দিয়েছে৷ পুঁজিবাদী সমাজে বিজ্ঞাপনে–সিনেমায় নারী শরীরকে তুলে ধরা হচ্ছে৷ গল্প–উপন্যাসেও যৌনতার ছড়াছড়ি৷ নারী শরীরকে উন্মুক্ত করা হয়েছে ইন্টারনেটের পর্নো সাইটে৷ তাতে কৌতূহল বাড়ছে এমনকী অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোদেরও৷ সেই কৌতূহল মেটাতে গিয়েই বহু সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে৷
নিদারুণ বঞ্চনা ও শোষণই হল বর্তমান সমাজের ভিত্তি৷ এই সরল সত্যটা যাতে জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ ধরে ফেলতে না পারে, শোষণের ভিত উপড়ে ফেলতে যাতে এগিয়ে না আসে– তাই শাসক শ্রেণি তাদের ডুবিয়ে রাখতে চায় বীভৎস যৌনতা আর মদ–মাদকের পাঁকে৷
কোনও মানুষই ধর্ষক হয়ে জন্মায় না৷ এইভাবে পরিকল্পিত উপায়ে নারীর প্রতি সম্মানহীন, বিকৃতকাম নরপশু বানানো হয়৷ তাই ধর্ষকদের শাস্তির দাবি করার সাথে সাথে শাসক শ্রেণির এই ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ধ্বংস করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে৷
আব্দুল জলিল সরকার
বক্সীগঞ্জ, হলদিবাড়ি, কোচবিহার
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)