২৩ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে রাজ্যের জেলাগুলিতে দলের কর্মীদের উপর যে ব্যাপক আক্রমণ হয় তার উল্লেখ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে সেদিনই নিম্ন–লিখিত প্রতিবাদ–পত্রটি পাঠানো হয়৷
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ২১ এপ্রিলের নির্দেশনামার ভিত্তিতে ২৩ এপ্রিল রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) প্রার্থীরা ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হন৷ মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রভৃতি জেলায় বিডিও এবং এসডিও অফিসে শাসকদলের মস্তানবাহিনীর আক্রমণ ও হামলার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি৷ পুলিশ–প্রশাসন নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে শাসক দলের গুন্ডাদেরই মদত দিয়েছে৷ জেলাগুলিতে দলের কর্মীদের উপর যে সব আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তারই কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি৷
১) পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে মস্তানবাহিনীর বাধার সামনে পড়ে প্রার্থীরা ময়না থানার ওসির কাছে সাহায্য চাইলে থানার কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি৷ আরও বেশি সংখ্যায় দুর্বৃত্তরা এসে জড়ো হয় এবং প্রার্থী সহ উপস্থিত এস ইড সি আই (কমিডনিস্ট) কর্মীদের আক্রমণ করে৷ বুদ্ধদেব দাস, বাসুদেব দাস, মৃন্ময় উত্থাসিনী, সিদ্ধার্থ রায় গুরুতর আহত হন৷
২) বীরভূমের রামপুরহাটে আমাদের প্রার্থীরা দলের কর্মীদের সাথে দলবদ্ধভাবে বিডিও/এসডিও অফিসে নমিনেশন দিতে গেলে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করে৷ প্রায় ২০ জন গুরুতর আহত হন৷ সিডড়িতেও তৃণমূলের আক্রমণে আমাদের ২জন মহিলা প্রার্থী গুরুতর আহত হন৷
৩) পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রার্থী কাটোয়া এসডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাধা দেয়, ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে এবং এসডিও অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়৷
৪) মুর্শিদাবাদ জেলার ক) লালগোলা ব্লক অফিসের ভিতরে বিরোধী প্রার্থীদের ডিসিআর ছিঁড়ে দিয়েছে, ভিতরে ও বাইরে ব্যাপক মারধর করেছে৷ খ) লালবাগ ব্লক অফিসেও মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে৷ গ) কান্দি এসডিও অফিসে সকাল থেকেই আমাদের দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো জেলা পরিষদের প্রার্থী দিলীপ শেখ সহ সমস্ত প্রার্থীদের ব্যাপক মারধোর করে এবং তাড়িয়ে দেয়৷ মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া যায়নি৷ ঘ) হরিহরপাড়া ব্লক অফিসে ভোর ৬–৩০টায় নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল প্রার্থীদের উপর ব্যাপক হামলা চালায় তৃণমূল দুষ্কৃতীবাহিনী৷ গোটা বিডিও অফিস জ্যাম করে রেখে কাউকে ঢুকতে দেয়নি৷ এখানে আমাদের পার্টি অফিসও তৃণমূল গুন্ডারা ভাঙচুর করে৷ পুলিশকে জানিয়েও কোনও ফল পাওয়া যায়নি৷
৫) পশ্চিম বর্ধমান জেলার সালানপুরে ওসি’র কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য৷ সাহায্য না করে ওসি আমাদের দলের প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীকে লেলিয়ে দেয়৷ এই আক্রমণে নির্মল পাল, মৃণাল সামন্ত, আনন্দরূপ রায় সহ আর বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়৷
৬) কোচবিহারের হলদিবাড়ি ব্লকে আমাদের লোকাল সম্পাদক কমরেড রুহুল আমিন আমাদের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে যখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য ব্লক অফিসে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর ওপর তৃণমূল লেঠেলবাহিনী ব্যাপক আক্রমণ চালায়৷ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ তার সাথে অন্যান্যদের ওপরও হামলা চালানো হয়৷ তুফানগঞ্জে নমিনেশন জমা দিতে সরকারি অফিস গেলে অফিসাররা তৃণমূল নেতাদের সাহায্য নেওয়ার জন্য বলতে থাকেন৷
৭) জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে এবং রাজগঞ্জ ব্লকেও একইভাবে তৃণমূলের লেঠেলবাহিনী দলের প্রার্থী ও কর্মীদের ওপর ব্লক অফিসেই পুলিশের সামনে ব্যাপক হামলা চালায়৷ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে৷
৮) দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ড হারবার এসডিও অফিসে দলের সকল প্রার্থী ও কর্মীদের মারধর করে অফিস চত্বর থেকে বার করে দেয়৷ শ্রীকান্ত নস্কর সহ অনেকেই আহত৷ মন্দিরবাজারে অনুকূল মণ্ডলকে মেরে অফিস থেকে বের করে দেয়৷ বজবজ–২ ব্লকে তৃণমূল লেঠেলবাহিনী বোমা, বন্দুক, টাঙ্গি নিয়ে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়৷ হামলার প্রতিবাদে আমাদের কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করলে তৃণমূল বাহিনী আমাদের লোকাল সম্পাদক এবং জেলার নেতা অজয় ঘোষকে ব্যাপক মারধোর করে৷ অজয় ঘোষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ জয়নগর–২ ব্লকে চণ্ডীপুরে দলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীকে টিএমসি দুষ্কৃতিবাহিনী জোর করে তুলে নিয়ে যেতে গেলে দলের কর্মী ও জনগণের প্রবল প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হয়৷
এমতাবস্থায় আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং অবিলম্বে বিকল্প স্থানে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করার আবেদন জানাচ্ছি৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)