গাজায় আমরা যা দেখছি, তা ভীষণ কষ্টদায়ক। এটা আমার শরীরে ও মনে ভীষণ আঘাত করছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই এটা কোনও আদর্শবাদ নয়। এটা ‘আমি ঠিক, তুমি ভুল” নয়। এটা শুধুমাত্র জীবনের প্রতি ভালোবাসা। এটা আপনার প্রতিবেশীর যত্ন নেওয়া। আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে চার বছরের ছেলেমেয়েরা বোমায় মারা যাচ্ছে অথবা হাসপাতালে মারা যাচ্ছে যেটা এখন আর হাসপাতালই নয় এবং আমরা ভাবতে পারি ওটা আমাদের ব্যাপার নয়। ঠিক আছে, আমরা সেটা ভাবতেই পারি যে এটা হয়তো আমাদের ব্যাপার নয়। কিন্তু সাবধান, পরেরটা আমাদেরই হবে। পরেরটা আমাদেরই চার-পাঁচ বছরের শিশুরাই হবে। গাজার দুঃস্বপ্ন শুরু হওয়ার পর থেকে আমি যখন আমার সন্তান মারিয়া, ম্যারিয়াস আর ভ্যালেন্টিনাকে প্রতিদিন সকালে দেখি, আমার সত্যিই ভয় হয়।
একটা গল্প মনে পড়ে যায়। একটা জঙ্গলে আগুন লেগেছে। সব প্রাণীই আতঙ্কিত, অসহায়। কিন্তু একটা ছোট্ট পাখি বারবার সমুদ্রে আসা যাওয়া করছে, সমুদ্র থেকে একফোঁটা করে জল তার ঠোঁটে করে নিয়ে আসছে। একটা সাপ হেসে বলে, ‘কেন ভাই? তুমি তো আগুন নেভাতে পারবে না।” পাখিটা উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ, আমি জানি।” সাপটা আবার জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে তুমি বারবার এটা কেন করছ”? পাখিটা শেষবারের মতো বলে, ‘আমি কেবল আমার দায়িত্ব পালন করছি।” পাখিটা জানে, সে আগুন নেভাতে পারবে না। কিন্তু সে কিছু না করেও থাকতে পারবে না। এমন এক জগতে, যা প্রায়ই বলে যে কোনও বদল আনার জন্য আমরা খুবই ছোট, সেই গল্প আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে একজনের শক্তি তার ব্যাপ্তিতে নয়, তার সিদ্ধান্তে। তার উপস্থিতিতে, তার নীরবতা ও স্থিরতাকে অস্বীকার করাই যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
(ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের পর ভাষণে বিশ্বখ্যাত ফুটবলার ও কোচ পেপ গার্দিওলা)
এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা ২৭ জুন – ৩ জুলাই ২০২৫ এ প্রকাশিত