২৪ এপ্রিল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর ৭১তম প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রাক্কালে দলের প্রতিষ্ঠাতা মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের ১৯৬৯ সালের ৩০ জুলাই প্রদত্ত অমূল্য ভাষণের একটি অংশ দেওয়া হল৷
ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় কাজ বড় কঠিন৷ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে ব্যক্তিসত্তাটাকে আমরা ফাইট করতে চাই, সেই ব্যক্তিসত্তাটির কারণেই দেখা যায় একজন ব্যক্তি যে খানিকটা ভাসভাসাভাবে হলেও বিপ্লব বোঝে এবং অনেক সময়ে লড়তে চায়, কিন্তু লড়তে চায় সে নিজের নিয়মে৷ একদিকে সে লড়তেও চায় বিপ্লবের জন্য, আর একদিকে সে তার স্বাধীন, স্বেচ্ছাচারী ঝোঁকটিকেও বাদ দিতে পারে না৷ অথচ সে জানে না এই লড়াইয়ের সত্যিকারের প্রয়োজনবোধের উপলব্ধির সঙ্গে আরেকটি উপলব্ধিও জড়িয়ে আছে– সেটি হচ্ছে স্বাধীন স্বেচ্ছাচারিতাকেও বর্জন করতে হবে৷ স্বাধীন স্বেচ্ছাচারিতার লড়াইটা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে কখনোই ঈপ্সিত ফল এনে দিতে পারে না৷ কারণ তা সমষ্টির পরিকল্পনাধীন নয়৷ তাই মার্কসবাদী বিপ্লবীদের সংগ্রামের অ্যাপ্রোচ বা দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে ‘টু স্ট্রাগল বোথ ইনডিভিজুয়ালি অ্যান্ড কালেকটিভলি’ (ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে সংগ্রাম করা)৷ কারণ একা লড়ে কেউ বিপ্লব করতে পারবে না৷ তাই কালেকটিভলি কী করে লড়তে হয়, বিপ্লবীদের তা জানতে হবে, শিখতে হবে৷ একজনকে একা একটা জায়গায় সংগঠনের কাজ করতে দিলে যদি তার লড়াই করার একটা আকাঙক্ষা এবং ‘স্যাক্রিফাইস’ (ত্যাগ স্বীকার) করবার একটু প্রেরণা থাকে তাহলেই দেখা যায় সাধারণ মানুষগুলিকে নিয়ে নিজের নেতৃত্বে সে খুব ভাল কাজ করে৷ কারণ তার নেতৃত্ব সেখানে ‘আনডিসপিউটেড’ (অবিসংবাদিত), তার ব্যক্তিসত্তায় সেখানে বিশেষ ঘা লাগে না, তার ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে কারোর টক্কর লাগে না, সে ‘হিউমিলিয়েটেড’ (অপমানিত) ফিল করে না, তার ইগোতে কোথাও আঘাত লাগে না৷ কিন্তু আর পাঁচটা কমরেড যারা ‘প্যারালাল পার্সোনালিটি’ (সমান্তরাল ব্যক্তিত্ব) তাদের সঙ্গে একটা পরিকল্পনায় মিলে একত্রে কাজ করতে গেলেই দেখা যায় পরস্পর ব্যক্তিসত্তায় টক্কর লাগছে– আর তেমন কাজ হচ্ছে না, নানা গণ্ডগোল হচ্ছে৷ ফলে সকলে মিলে একত্রে পরিকল্পনা নিজের মতো হয় ভাল, যদি অপরের মত অনুযায়ীও পরিকল্পনাটি হয় সেই পরিকল্পনায় স্বেচ্ছায় এবং খুশিমনে কী করে কাজ করতে হয় সেটি শিখতে হয়৷ এবং সেটি শিখতে গেলে নিজের স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব বিসর্জন দিতে হয়– না পারলে সেটি শেখা যায় না৷ এই স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব বিসর্জন দিতে পারাটা শেখা যাবে কী করে? শিখতে গেলে একত্রে কাজ করতে করতে কালেকটিভকে মেনে কাজ করার অভ্যাসটি ‘ডেভেলাপ’ করাতে হবে৷ …
তা হলে মূল কথা হচ্ছে, প্রত্যেককে কালেকটিভের মধ্যে থেকে সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে৷ রুটিন ওয়ার্ক– যা বিপ্লবী সংগ্রামের একটা অপরিহার্য অঙ্গ তা বিপ্লবী কর্মীদের এই কালেকটিভের মধ্যে থেকে কাজ করবার অভ্যাস শেখায়, ধৈর্য শেখায়৷ তাদের মধ্যে যে ব্যক্তিসত্তা, যে অহম প্রতিনিয়ত তাদের ‘ডিসিভ’ করে (ঠকায়), ভুলপথের নির্দেশ দেয় তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাদের সাহায্য করে৷ প্রত্যেকের মধ্যে তার যে নিজস্ব বুদ্ধি–বিচার তা তাকে একটা জিনিস করতে বলে, অন্য দিকে তার ব্যক্তিসত্তা তাকে তা করতে আটকায়, তাকে অন্য দিকে নিতে চায়৷ এই হচ্ছে প্রত্যেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব৷ এই যে প্রত্যেকের মধ্যে দু’টি জিনিসের লড়াই– এটাও আজকের সমাজের বুর্জোয়া এবং শ্রমিকের লড়াইয়ের প্রতিফলন৷ এই অবস্থায় হয় নিজের মতটাকে কালেকটিভের মতে পরিণত করতে হবে, না হয় কালেকটিভের মতটা নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলেও সেই মতটাকেই খুশি মনে মেনে নিয়ে চলতে হবে৷ এ মানসিকতা যদি না থাকে তাহলে একত্রে চলতে চলতেই নিজের মনের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হবে, নিজের মধ্যে যে বুর্জোয়া সত্তা যেটা ব্যক্তিসত্তার রূপে, ‘আলট্রা’ (উগ্র) স্বাধীনতার রূপে, স্বাধীনচেতা মনোভাবের রূপে আত্মপ্রকাশ করছে তাকেই একজন লালনপালন করবে৷ শুধু তত্ত্ব করে মনে মনে ভেবে একজনের মধ্যে যে কুসংস্কার, ব্যক্তিসত্তা, ইনডিভিজুয়ালিটি বা অহম আছে তা দূর করা যায় না৷ মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের মধ্যে যে চেতনসত্ত্বাটি পারিপার্শ্বিকের সাথে সংঘাতের মধ্য থেকে গড়ে উঠেছে, আবার বিরাজও করছে সেই সংঘাতের মধ্যে– সেই সংঘাতের স্বরূপ নির্ধারণ করে যে সঠিক পথটি পাওয়া গেল সেই পথে যদি চেতনসত্ত্বাটি নিজের কর্মকে নিযুক্ত করতে পারে তবে সে যেমন বস্তুকেও প্রভাবিত করে, নিজেকেও উন্নততর করে৷ আর তা না হলে সে অধঃপতিত হয়৷ …
যে কোনো ভাবনাধারণা– অর্থাৎ যে কোনও চিন্তা, ভাব, ধারণা, কল্পনা– সমস্ত কিছুই মানুষের মনে গড়ে উঠছে বাস্তবের সঙ্গে সংঘাতের প্রতিফলনে৷ মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে বিশ্লেষণ করবার, চিন্তা করবার যে ক্ষমতা রয়েছে– যে প্রক্রিয়াটি জন্তু–জানোয়ারের মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যে নেই, শুধু মানুষের মস্তিষ্কের গঠনে আছে, সেই প্রক্রিয়াটি থাকার ফলে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংঘাতের মধ্য দিয়ে মানুষের মননজগৎ গড়ে উঠেছে৷ বস্তুজগতের সঙ্গে জন্তু–জানোয়ারদেরও সংঘাত হচ্ছে, কিন্তু তাদের মস্তিষ্কের গঠনে এই প্রক্রিয়াটি না থাকার ফলে তারা ‘সাবজেক্ট টু ন্যাচারাল ল’ অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মের বশীভূতই থেকে গেছে৷ তাদের সমস্ত কার্যকলাপ ও আচার আচরণই ‘রিফ্লেক্স অ্যাকশন’ (পরাবর্ত ক্রিয়া)– অর্থাৎ ‘কন্ডিশনড রিফ্লেক্স’ (শর্তাধীন পরাবর্ত) এবং ‘আনকন্ডিশনড রিফ্লেক্সে’র (শর্তহীন পরাবর্ত) দ্বারা পরিচালিত৷ তার দ্বারাই তারা সব কিছু করে৷ তাদের ‘ইনটেলিজেন্স’ (বুদ্ধিশুদ্ধি) সম্পর্কে যাই বলা হোক, তা কন্ডিশনড রিফ্লেক্সেরই ভিন্ন ভিন্ন রূপ ছাড়া কিছু নয়৷ মানুষের মধ্যে সেখান থেকে আরেকটা প্রক্রিয়া ফলো করে৷ মানুষের মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে– যেটা ‘সেনসেশন টু মোটর অ্যাকশন’–এ (সংবেদন থেকে পেশী সঞ্চালন) এসে ‘রিফ্লেক্স অ্যাকশনে’ই শেষ হয়ে যাচ্ছে না– আর একটা ‘সিগন্যাল’ (সংকেত) দ্বারা, দ্বিতীয় সিগন্যাল সিসটেম দ্বারা একটা নতুন ‘ট্র্যাক’ সৃষ্টি হচ্ছে– সেই ট্র্যাকটি ‘লিডিং টু পারসেপশন, কনসেপসন অ্যান্ড দেন টু ইমোশন’ (গতিপথটি ভাব, উন্নততর ভাব ও তারপর আবেগের সৃষ্টি করে)৷ জন্তু–জানোয়ারের যেখানে শুধু ‘ফিজিক্যাল ব্লাইন্ড ইমোশন’(অন্ধ শারীরিক ক্রিয়া)– অর্থাৎ ‘ইমোশনাল নার্ভাস অ্যাকটিভিটি ইজ দি ওনলি পসিবল অ্যাকটিভিটি’ (অন্ধ স্নায়ু ক্রিয়াই একমাত্র সম্ভাব্য ক্রিয়া), সেখানে মানুষের ক্ষেত্রে এই অ্যাকটিভিটি আরও উচ্চস্তরে কাজ করে৷ মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, ‘ফ্রম ব্লাইন্ড ইমোশন টু রিজনিং থ্রু প্রসেস অব ট্রানশ্লেসন’(চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্ধ স্নায়ুক্রিয়া থেকে যুক্তিতে পৌঁছানো)– সেখান থেকে ‘পারসেপচুয়াল নলেজ’, তার থেকে ‘কনসেপচুয়াল নলেজ’ এবং শেষপর্যন্ত আবার একটা উন্নত ধরনের ইমোশন৷
সুতরাং মানুষের মধ্যে আমরা দু’ধরনের ইমোশন দেখতে পাই৷ একটা হচ্ছে ব্লাইন্ড টাইপ অব ইমোশন– যেটা ‘নট টিউনড অর গাইডেড বাই রিজন অর কনসেপচুয়াল নলেজ’ (যুক্তি বা উন্নততর ভাব ও জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত নয়)৷ এই ব্লাইন্ড ইমোশনও মানুষকে চালায়৷ এই ব্লাইন্ড ইমোশন হচ্ছে অন্ধের মতন৷ এখানে মানুষের আচরণ খানিকটা জানোয়ারের মতোই, অবস্থার ওপর নির্ভরশীল, পরিবেশের দাস৷ এই ইমোশনাল মুভমেন্টটা মানুষকে হঠাৎ বড়ও করে দিতে পারে, মানুষকে একদম নিচেও নামিয়ে দিতে পারে৷ সুতরাং এই ইমোশন অন্ধ৷ এর ওপর নির্ভর করা চলে না৷ এই ব্লাইন্ড ইমোশন থেকে ট্রানশ্লেসন–এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে যে পারসেপচুয়াল নলেজ গড়ে ওঠে সেও ভাসাভাসা জ্ঞান৷ তার দ্বারাও মানুষ এই ‘ইমোশনাল কারভেচার’টিকে (অন্ধ স্নায়ুক্রিয়ার বিশেষ গতিকে) পুরোপুরি কনট্রোল করতে পারে না৷ তার থেকে যে কনসেপচুয়াল নলেজ, অর্থাৎ কংক্রিট নলেজ মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় যেটা ‘গাইডেন্স প্রোভাইড’ (পথ প্রদর্শনের) করার ক্ষমতা রাখে, সেই কংক্রিট নলেজ–ই ব্লাইন্ড ইমোশনকে ‘প্যাটার্ন’ করে (একটি আদলে গড়ে তোলে), ‘টিউন’ করে (একটি বিশেষ সুরে বেঁধে দেয়)৷ ফলে এর থেকে যে ইমোশন রিলিজড হয় সেটা বেসড অন নলেজ (জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে) – অর্থাৎ চেতনার ওপর, নলেজ–এর ওপর আবার ইমোশন৷ বিপ্লবীদের যে ইমোশন আমরা দেখতে পাই সেটা এই চেতনার ওপর ইমোশন৷ তাই একে রাশ টেনে ধরতেও তারা পারে৷ এই ইমোশন তাদের বিপথগামী করে দেয় না, তাদের বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে না৷ যে আবেগ বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে তা হল সেই প্রথম আবেগ যেটা ব্লাইন্ড ইমোশন৷ কিন্তু যে আবেগ বেসড অন নলেজ অ্যান্ড রিজন সেটা ব্লাইন্ড ইমোশন–এর থেকেও আরও কার্যকরী, আরও ‘ডিসিসিভ’৷ …
বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে প্রতিটি মানুষের সমাজচেতনার ক্যাটিগরিটাকে অ্যানালিসিস করলে দেখা যাবে, কারোর মধ্যে এটা পুরোপুরি বুর্জোয়া ভাবনাধারণা, কারোর মধ্যে প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী ভাবনাধারণা, আবার কারোর মধ্যে বুর্জোয়া এবং শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী ভাবনাধারণার একটা আধাখিচুড়ি হয়ে আছে– অর্থাৎ কিছুটা বুর্জোয়া ভাবনাধারণার প্রভাব, কিছুটা শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী ভাবনাধারণার প্রভাব– এই দিয়ে তার বিবেকটির গঠন৷ যার মধ্যে এইভাবে কিছুটা বুর্জোয়া ভাবনাধারণার প্রভাব, কিছুটা শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী ভাবনাধারণা মিশে আছে, দেখা যায়, কখনও তার বিবেক বলে বুর্জোয়ার পক্ষ নিতে, কখনও তার বিবেক বলে শ্রমিক আন্দোলন সমর্থন করতে৷ কিন্তু সবসময়ই প্রত্যেকের বিবেক তার ব্যক্তিস্বার্থ বা ইগোকে খারাপ কিছু না করতে নির্দেশ করছে৷ এইভাবে ইগো এবং সুপার ইগোর দ্বন্দ্ব প্রতিটি মানুষের মধ্যে সবসময়ই হচ্ছে এবং এটা চলতেই থাকবে৷ যতক্ষণ না উৎপাদনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যে সংঘর্ষ সেই সংঘর্ষের বীজ সমাজজীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে চলে যাচ্ছে ততক্ষণ ‘ইনডিভিজুয়াল সাইকোলজি’র, অর্থাৎ ইনডিভিজুয়ালিটি বা ব্যক্তিসত্তার এই ‘ফেনোমেনন’ ‘এলিমিনেটেড’ হবে না৷ আজকের পুঁজিবাদী সমাজে সমস্ত মানুষেরই ইগো গড়ে উঠছে কমবেশি বুর্জোয়া ভাবাদর্শের প্রাধান্যে অথবা শ্রমিক ভাবাদর্শের প্রাধান্যে৷ ফিউডাল ভাবধারা যদি তার মধ্যে মিশ্রিত থেকেও থাকে তবুও তার মধ্যে বুর্জোয়া ভাবধারা প্রধান, কি শ্রমিক শ্রেণির ভাবধারা প্রধান তা দিয়ে তার চরিত্র নির্ধারণ করতে হবে অর্থাৎ ‘ডমিনেন্ট’ (প্রধান) চরিত্র দিয়েই তা নির্ধারিত করতে হবে৷ পুরোপুরি সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারায় আজ আর কারোরই চলার উপায় নেই৷
সুতরাং সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ, ব্যক্তিবাদী প্রবণতা, অহম ইত্যাদির ঊর্ধ্বে ওঠার জন্য একজন ব্যক্তির যে সংগ্রাম তা যদি বৃহত্তর সামাজিক সংগ্রামের সঙ্গে, শ্রমিক শ্রেণির মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত না হয় তাহলে উদ্দেশ্য যতই সৎ হোক না কেন তার পক্ষে আকাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷ তাই ব্যক্তির সংগ্রামকে সবসময় সমষ্টির সংগ্রামের সাথে মেলাতে হবে৷ কিন্তু এই সমষ্টিগত সংগ্রামকেও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য এবং ভুলত্রুটি থেকে তাকে মুক্ত রাখার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তা চালানো প্রয়োজন৷ তাই জনসাধারণের মধ্যে পড়ে থেকে দলের রুটিন ওয়ার্ক চালানোর মধ্যে কর্মীদের যে একটা ঢিলেঢালা গতানুগতিক মনোভাব আছে তাকে দূর করে কাজের গতিকে যেমন আপনাদের বাড়াতে হবে, তেমনি সাথে সাথে তা সুপরিকল্পিতভাবে করতে হবে৷ যদি দেখা যায়, কাজের গতি দ্রুত হচ্ছে কিন্তু তা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না তাহলে তাতে হবে না৷ হয়তো ছোটাছুটি করে আপনারা একটা কিছু করে ফেললেন, কিন্তু দেখা গেল সেই করার পেছনে কোনও পরিকল্পনা নেই, আদর্শগত ভিত্তি নেই, তা সমষ্টিগত পরিকল্পনায় করা হয়নি তাহলে তা দাঁড়াবে না৷ তাতে অযথা সময়ের অপব্যবহার হবে৷ কাজেই আমার বক্তব্য এটা নয় যে, কাজের ক্ষেত্রে আপনারা লাফিয়ে লাফিয়ে কতটা এগিয়ে যেতে পারলেন৷ আমার বক্তব্য হচ্ছে, আপনারা হেঁটেই যাবেন বা সামর্থ্য অনুযায়ী দৌড়েই যাবেন, কিন্তু যাবেন পরিকল্পনার ভিত্তিতে, সুষ্ঠু নেতৃত্বের অধীনে৷ ব্যক্তিগত আচরণ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার যে ঝোঁক প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে তাকে সমাজচেতনার দ্বারা প্যাটার্ন করে, টিউন করে আপনাদের চলতে হবে৷
এইভাবে পরিকল্পনার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নেতৃত্বের অধীনে পার্টির কর্মসূচিগুলি যদি আপনারা রূপায়িত করতে থাকেন এবং সাথে সাথে পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে কোথায় কী ত্রুটি আছে সমষ্টিগতভাবে আলোচনা করে কীভাবে তাকে আরও সুন্দর করা যায় সেই চেষ্টা করতে থাকেন তাহলে দ্রুত সংগঠনকে প্রয়োজন অনুযায়ী শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করাতে আপনারা সক্ষম হবেন৷…
যুক্তফ্রন্ট রাজনীতি ও পার্টির সাংগঠনিক কাজকর্মের কয়েকটি দিক
নির্বাচিত রচনাবলি, তৃতীয় খণ্ড
(৭০ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা ২০ এপ্রিল, ২০১৮)