Breaking News

সন্ত্রাসবাদীদের রুখতে পারে দুই দেশের জনগণের ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্য

শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় এসইউসিআই(সি) সহ দশটি বামপন্থী দলের যৌথ মিছিল। ধর্মতলার লেনিন মূর্তি থেকে শিয়ালদহ। ১৩ মে

আপাতত শান্তি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। যুদ্ধ বিরতিতে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও এই শান্তির মেয়াদ কত দিন জানা নেই। চার দিনের যুদ্ধেই শিশু সহ বেশ কিছু মানুষের প্রাণ গিয়েছে সীমান্তের দুই পারেই। বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে বহু পরিবারকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছে। তাঁরা কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তার নিশ্চয়তা নেই। পাকিস্তানের হাতে বন্দি বিএসএফ জওয়ান কবে বাড়ি ফিরবেন তারও কোনও নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তাঁর স্ত্রী। যুদ্ধে সম্পত্তি এবং প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের– যে কোনও যুদ্ধের জন্যই এটা সত্য। এই যুদ্ধেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু পহেলগাঁওয়ে সাধারণ পর্যটকদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করল যে সন্ত্রাসবাদীরা তাদের খুঁজে বার করা এবং শাস্তি দেওয়ার বিষয়টির কী হল? যুদ্ধের ডামাডোলে কি চাপা পড়ে গেল এই প্রশ্নটাই!

প্রশ্ন আরও থাকছে– এই যু্দ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে। ভারত সরকারের ঘোষণার আগেই ট্রাম্প সাহেব যু্দ্ধবিরতি ঘোষণা করে দিলেন কী করে? যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সারা দুনিয়াতে যুদ্ধ-ব্যবসার মূল হোতা, যারা প্যালেস্টাইনকে ধ্বংস করার কাজে ইজরায়েলকে অস্ত্র এবং অর্থ দুই-ই জুগিয়ে চলেছে, তারা হঠাৎ ভারত-পাক যুদ্ধ বন্ধে এত উদ্যোগী কী করে হল– তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকছেই। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বিদেশ সচিব জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত এবং পাকিস্তান একত্রে আলোচনায় বসবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার বলেছেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তিনি সাহায্য করবেন এবং তিনি দুই দেশেই বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। তিনি বলেছেন, ‘আমি গর্বিত যে আমেরিকা আপনাদের এই সাহসী ও নায়কোচিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছে’ (আনন্দবাজার পত্রিকা ১২ মে ‘২৫)। তা হলে দেখা যাচ্ছে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কর্ণধাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরিবর্তে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি নাক গলাতে সুযোগ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প সাহেব কাশ্মীর নিয়ে আলোচনাতেও নাক গলাতে আগ্রহী। আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে এই সুযোগকে কাজে লাগাবে, যা শান্তি নয়, উত্তেজনাই বাড়তে সাহায্য করবে। ভারতের জনগণের দীর্ঘ দিনের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থানের সাথে কোনও মতেই তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন আরও থাকছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য হয়ে থাকলে তা কতটুকু পূরিত হল? এর আগেও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার কথা বলে যুদ্ধ হয়েছে, সে যুদ্ধ কখনও মার্কিন সরকার করেছে আফগানিস্তানে, কখনও ভারত করেছে পাকিস্তানে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের গায়ে কতটা আঁচড় কাটা গেছে? সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ২৫ জন পর্যটক ও ১জন স্থানীয় মানুষকে হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনা– সাধারণ ভারতবাসীর মধ্যে প্রবল যন্ত্রণা এবং ক্ষোভ তৈরি করেছে। কিন্তু এর আগেও ২০১৯-এ পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪৪ জন সেনার মৃত্যু, ২০১৬-তে উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা, ২০১৮-তে ‘রাইজিং কাশ্মীর’ পত্রিকার সম্পাদককে হত্যা ছাড়াও প্রতি বছরই একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদী কিংবা সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটেই চলেছে। এ ছাড়াও কার্গিল যুদ্ধ সহ একাধিক ভারত-পাকিস্তান যু্দ্ধ হয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসে একাধিক সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে। এ বারেও পহেলগাঁও হামলার পরেই পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় ভারতীয় সেনা জঙ্গি ঘাঁটি হিসাবে চিহ্নিত করে কিছু ইমারতে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করেছে। মানুষকে সরকার বুঝিয়েছে সন্ত্রাসবাদ এতে নির্মূল হবে। কিন্তু সত্যিই এই লক্ষ্য কতটা অর্জিত হল তা ঠাণ্ডা মাথায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করা দরকার।

দেখা যাচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশের শাসকের দিক থেকে এই লড়াইগুলির সাথে বেশি জড়িয়ে আছে আভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা। পাকিস্তানের জনসাধারণের তীব্র দারিদ্র, দেশটির অর্থনৈতিকভাবে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার বিরুদ্ধে সে দেশের জনগণের তীব্র ক্ষোভকে অন্য দিকে চালিত করার জন্য সে দেশের কায়েমি স্বার্থের প্রতিভূ শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির সেবাদাসদের প্রধান হাতিয়ার ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদের মোহে মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখা। এই কাজে তাদের প্রয়োজন ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরে প্রবল ভারত বিরোধিতার জিগির তোলা। এটাই তাদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাগুলির একেবারে প্রথম সারিতে আছে। অন্য দিকে, ভারতের শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির দলগুলিও বিশেষত বর্তমান শাসক বিজেপি একই ভাবে শোষণের মূল কারণ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রসার এবং দেশ জুড়ে মুসলিম বিরোধী মানসিকতা প্রসারে ব্যস্ত। এই কাজ করতে গিয়ে তাদের হাতিয়ার উগ্র পাকিস্তান বিরোধিতা। পহেলগাঁও হামলার পরেও দেখা গেছে সারা দেশ জুড়ে বিজেপির প্রধান চেষ্টা ছিল সামগ্রিকভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদের হোতা বলে দাগিয়ে দিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক সংহত করা। যদিও সারা দেশের খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ তাদের এই চক্রান্তে পা দেননি। তাঁরা ঐক্য সংহতি বিনষ্ট হতে দেননি। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ এবং ঘৃণা নিয়ে মানুষ দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে এই সন্ত্রাসবাদীদের গ্রেপ্তার ও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার কাজে কোনও ঢিলে দেওয়া চলবে না। কাশ্মীরের জনগণ যাঁদের অধিকাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী, তাঁরা ব্যাপক সংখ্যায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বনধ পালন করেছেন। তাঁরা এই জঘন্য অপরাধীদের চরম শাস্তি চেয়েছেন। আবার সন্ত্রাসবাদী হানায় প্রাণ হারানো সেনা অফিসারের স্ত্রী কাশ্মীরের জনগণ ও মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে বিষোদগার বন্ধ করতে আবেদন জানিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষাক্ত চিন্তার ধারকদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, সন্ত্রাসবাদীরা যদি ধর্ম জেনে খুন করে জঘন্য অপরাধ করে থাকে, যারা ধর্মের ভিত্তিতেই বিষাক্ত বিভেদ ছড়িয়ে মুসলিম বিরোধী জিগির তুলছেন তাঁরা কি একই মানসিকতার শিকার নন? পুলওয়ামার হামলার পরেও একই দাবি মানুষ তুলেছিল, এই সন্ত্রাসবাদীদের গ্রেপ্তার করে তাদের পরিচয় দেশের মানুষের কাছে প্রকাশ করা হোক, তাদের কঠোরতম শাস্তি হোক। কিন্তু তা হয়নি, প্রধানমন্ত্রী সার্জিকাল স্ট্রাইকের কৃতিত্ব নিয়েছেন, কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের ধরার কী হল, সে প্রশ্ন অমীমাংসিতই থেকে গেছে। মৌলবাদী চিন্তার জঠরে যে সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয় তার বীজ পাকিস্তানের মাটিতে যেমন আছে, ভারতেও কম নেই। এ ক্ষেত্রে উগ্র ইসলামী মতবাদ কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদ এর কোনওটির ভূমিকাই কম নয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দুই দিকের উগ্র ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদী চিন্তার বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। পাকিস্তানের উগ্র ইসলামী মতবাদের পৃষ্ঠপোষকরা যেমন এই কাজ করতে অক্ষম, তেমনই হিন্দুত্ববাদের কারবারি বিজেপিও কি তা পারে? যে কারণে মালেগাঁও বিস্ফোরণের মতো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞা বিজেপির নেতায় পরিণত হন! ভারত পাকিস্তান উভয় দেশের হিন্দু-মুসলিম মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি পরস্পরের পরিপূরক– এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। যত বিজেপি হিন্দুত্ববাদের জিগির তোলে, তত মুসলিম মৌলবাদের জিগির তুলতে অপর পক্ষের সুবিধা হয়। আবার পাকিস্তানী শাসকরা মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদের জিগির তুললে এ দেশের হিন্দুত্ববাদের পালে হাওয়া লাগে। আরও প্রশ্ন থাকে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সমস্ত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর স্রষ্টা এবং মদতদাতা মার্কিন শাসকরাই। সেই শক্তির মধ্যস্থতায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব? ভারত সরকার পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আফগানিস্তানের যে তালিবান শাসকদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে, তারা কারা? সন্ত্রাসবাদী এবং মৌলবাদী নয়?

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী শাসকই আজ যথার্থ আন্তরিক নয়। মার্কিন শাসকরা তো কোনও মতেই নয়, কারণ সারা দুনিয়া জুড়ে সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র এবং অর্থ নানা পথে তারাই জোগায়, আবার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধতার নামে দেশে দেশে তারা হস্তক্ষেপ করে এবং অস্ত্র বেচে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হলে এই অস্ত্র ব্যবসার বাজারটাই যে ঘা খাবে! অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীরাও একই রকম কাজ করে। এমনকি নিজের দেশেও সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে নির্মূল করলে এই সব শাসকদেরই ক্ষতি। ভারত সহ অন্যান্য শক্তির ক্ষেত্রেও এই কথাটা প্রযোজ্য।

পহেলগাঁও হামলার পর দেখা গেল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বামপন্থার বিরুদ্ধে আরএসএস-বিজেপির মদতপুষ্ট শক্তিগুলি অশালীন আক্রমণ চালিয়ে গেছে। এমনকি মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের কবিতাকেও অতি নিম্নরুচির আক্রমণ করেছে এই অসুস্থ মানসিকতার শরিক মানুষজন। কিন্তু এই সত্য কি কোনও সচেতন মানুষ অস্বীকার করতে পারেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সবচেয়ে বেশি দরকার ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক যুক্তিবাদী মনন গড়ে তোলা। প্রয়োজন, ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-প্রাদেশিকতা নির্বিশেষে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের সমস্যা যে একই সেই বোধ গড়ে তোলা এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়া। এ কথা শুধু আমরাই বলছি না, যে কোনও যুক্তিবাদী মানুষই বলে থাকেন। ১৯৫০-এ মুম্বইয়ের ‘কারেন্ট’ পত্রিকায় ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার খাজা মহম্মদ আব্বাস লিখেছিলেন, কাশ্মীরের কিছু মানুষ পাকিস্তানের ‘ইসলাম বিপন্ন’ স্লোগানে মাঝে মাঝে প্রভাবিত হলেও জীবনের বাস্তবতার বোধ থেকে তারা ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার দিকেই বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে ভারত সরকার যদি কাশ্মীরের মন জয় করতে চায়, তা হলে নীতিনিষ্ঠ ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখাই তাদের কর্তব্য (রামচন্দ্র গুহ, গান্ধী উত্তর ভারত)। বাস্তব হল, একমাত্র এই কাজটা ছাড়া কোনও সামরিক তাকত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে অক্ষম। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরাও আসলে ভালই জানেন যে, এই কাজটা করতে পারে একমাত্র যথার্থ বামপন্থী শক্তিই, তাই বোধহয় বামপন্থার বিরুদ্ধে তাঁদের এত বিষোদগার!

সন্ত্রাসবাদ এবং তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে যু্দ্ধ যে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে কত লোভনীয় তা এবারের ভারত-পাকিস্তান লড়াই চলাকালীন আবারও বোঝা গেল। যখন দেখা গেল চিন, রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইজরায়েলের তৈরি নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ লড়ছে। ভারতীয় ধনকুবেররাও এখন অস্ত্র ব্যবসায়ে যথেষ্ট এগিয়ে তারাও তাই উল্লসিত। যত সেই অস্ত্র ধ্বংস হয়েছে, তত অস্ত্র কোম্পানিগুলির শেয়ার বাজারের দর চড়চড় করে বাড়তে দেখা গেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ধনকুবের আম্বানি গোষ্ঠী ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামটির স্বত্ত্ব কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশের মানুষের প্রবল সমালোচনার ফলে তারা এর থেকে অবশ্য হাত গুটিয়ে নিয়েছে। দেখা গেল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হঠাৎ পাওয়া সুযোগকে হাতছাড়া না করে কাশ্মীর সহ ভারত-পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে নেমে পড়ল। সাম্রাজ্যবাদী চিনও তাই তড়িঘড়ি শান্তির পায়রা ওড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান রাস্তা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খেটে-খাওয়া মানুষের ঐক্য রক্ষা ও সমস্ত মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন করা। পাকিস্তানের মানুষেরও আজ এটাই কর্তব্য। না হলে বারে বারে সাধারণ মানুষেরই প্রাণ যাবে, আর শাসকরা তা থেকে ফয়দা লোটার হিসাব কষবে।

লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ১৮ এপ্রিল ২০২৫ এ প্রকাশিত