আমাদের দেশে বেকার সমস্যা একটা বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্য, কাজ দেওয়া তাদের কাজ নয়। আর একটি সমস্যা হল, লাফিয়ে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আসলে সরকারের কাজটা কী তা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের বাইরে। শিল্পপতিদের যেমন উপাদানের বাজারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকে, ফলে কম ব্যয়ে তারা উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। আবার গড় মুনাফা মার্জিন ঠিক করার ক্ষেত্রে তারাই একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী। এ ক্ষেত্রেও তাদেরই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ। তাদের মুনাফা বৃদ্ধি গত ১৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বেড়েছে তীব্র আয় বৈষম্য। দেশে মানুষ পিছু উৎপাদন প্রায় ২.৫ গুণ বেশি হয়। অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হলে দাম কমে কিন্তু এত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। আবার মূল্যবৃদ্ধি থেকে পিছিয়ে বেতন। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের বাস্তবিকই ক্রয়ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বারের বাজেটে অন্যতম লক্ষ্য জনগণের পকেট ভরানো। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে এবং তীব্র বাজার সংকট অব্যাহত। তাই কোনও রকমে বাজারকে টিকিয়ে রাখার জন্য মধ্যবিত্তদের কর ছাড় দিয়ে বাজারে কিছুটা টাকা আনার চেষ্টা করছেন।
বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট বেসরকারি নার্সিংহোম কিছু দিনের মধ্যে তার শাখা বিস্তার করেছে বিভিন্ন জায়গায়। বিনিয়োগের এত টাকা আসে কোথা থেকে? আসে শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে। চারজন কর্মীর কাজ তারা একজনকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে, বেশি সময় খাটিয়ে নেয়। টেস্টগুলোর দাম নিজেদের মতো ঠিক করে। একটি ইউএসজি করতে ১৪০০ টাকা নেয়। এর কোনও হিসেব জনসাধারণের কাছে নেই। একটি ইউএসজি করতে কী কী জিনিস লাগে? ডাক্তারি ফি সহ এর উৎপাদন খরচ কত তার হিসাব কাউকেই দিতে হয় না। নিজের মতো করে তারা দাম ঠিক করে এবং মুনাফা লোটে। অন্য দিকে আবার ব্যবসা চালানোর জন্য সরকারের কাছ থেকে কর ছাড় পায়, ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের টাকা পায়। আবার শোধ করতে না পারলে তা ‘রাইট অফ’ হয়ে যায় অর্থাৎ ঋণ মকুব। এমনি করেই চলছে এই পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের এই মনোভাব যতদিন না বন্ধ হয় ততদিন পর্যন্ত শুধু সরকার বদলে বদলে ভোটের মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সমাধান হবে না। আর এখন ভোটের ইস্যু তো বেকার সমস্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা নয়, খয়রাতি হিসাবে জনগণকে কে কত টাকা দিতে পারবে এই প্রতিযোগিতাতেই ভোট হয়ে যাচ্ছে। আর এই টাকার জোগান যারা করে দেয় নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তাদের প্রতি ‘দরদ’ সরকারকে তো দেখাতেই হবে। ফলে তারা ইচ্ছামতো দাম ঠিক করবে, মুনাফার পাহাড় তৈরি করবে, আয় বৈষম্য বাড়াবে, আর সরকার চুপ করে থাকবে। অন্য দিকে সাধারণ মানুষকে বলবে, বর্ধিত দামের জিনিস কেনার জন্য আরও পরিশ্রম করো, আরও পরিশ্রম করো।
গৌতম দাস, মালদা