Breaking News

কেরালায় আশাকর্মীদের ধর্মঘট, বানচাল করার অপচেষ্টা সিটু নেতাদের

সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর কেরালা রাজ্য শাখা আশাকর্মীদের চলমান ধর্মঘটে বেজায় চটেছে। আশাকর্মীরা তাদের ন্যায্য কিছু দাবিতে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট করে চলেছেন। রাজ্যের সিপিএম সরকারের কাছে তাঁদের দাবি, চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধির সাপেক্ষে সাম্মানিক ভাতা বাড়াতে হবে এবং প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে তা দিতে হবে। অবসরকালীন সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। রয়েছে আরও কিছু অর্থনৈতিক দাবি। সবটাই তাঁরা দাবি করেছেন শ্রমের ন্যায্য পাওনা হিসেবে, কোনও দয়ার দান হিসেবে নয়। কিন্তু রাজ্যের সিপিএম সরকার দাবি মানতে নারাজ। উল্টে তারা ধর্মঘট বানচাল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চলছে ভয় দেখানো ও হুমকি।

আশাকর্মীরা দেশব্যাপী স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সরকারই এঁদের নিয়োগপত্র দিয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি আজও কেন্দ্রের বা রাজ্যের কোনও সরকারই দেয়নি। বিজেপি, কংগ্রেস পুঁজিপতি শ্রেণির বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য স্বার্থরক্ষাকারী দল। তাদের দলের নীতি এবং শাসন পরিচালনা শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থবিরোধী। সে কারণে আশাকর্মীদের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করতে, তাদের শ্রম নিংড়ে নিয়ে ভাতা নামের ছিটেফোঁটা ধরিয়ে দিয়ে ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করতে এদের নৈতিকতায় আটকায় না।

কিন্তু সিপিএম সরকার তো নিজেকে জনগণের সরকার বলে দাবি করে! সিপিএম তো নিজেদের শ্রমিক শ্রেণির দল বলে! তা হলে আশাকর্মীদের অতি সাধারণ কয়েকটি দাবি তারা উপেক্ষা করে কী করে? আর সিটু নেতারা শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের কথা বলতে বলতে আশাকর্মীদের এই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে দাঁড়ান কী করে?

সিটুর রাজ্য সম্পাদক ইলামারন করিম ধর্মঘটকে কটাক্ষ করে বলেছেন, এই ধর্মঘট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেন তিনি এ কথা বললেন? আসলে আশাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই থাকতে পারেন যাঁরা সরাসরি কোনও রাজনীতি করেন না। কিন্তু তাঁরা এটুকু অনুভব করতে পারেন, তাঁদের যে ন্যায্য বেতন দেওয়া হয় না, সেটা সরকারের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাঁদের যে সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না সেটাও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তাই আশাকর্মীদের এই বঞ্চনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ স্পষ্ট। অথচ এই বঞ্চনার মোকাবিলার সংগ্রামকে শাসকদলের ধুরন্ধর নেতা-মন্ত্রীরা রাজনৈতিক মদতপুষ্ট আখ্যা দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে এই আন্দোলনকে দুর্বল করতে চাইছে। অর্থাৎ আশাকর্মীদের ধর্মঘটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলার পিছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক অভিসন্ধি। করিম সাহেবের এই ধূর্তামি শ্রমিকরা, আশাকর্মীরা ধরে ফেলেছেন এবং ধর্মঘটে অবিচল রয়েছেন।

এতে ওদের রাগ আরও বেড়েছে। আসরে নেমেছেন সিটুর রাজ্য সহ-সভাপতি হর্ষকুমার। তিনি সমস্ত সৌজন্য বিসর্জন দিয়ে আশাকর্মীদের তুলনা করেছেন রোগ-জীবাণুবাহক কীটপতঙ্গের সাথে। যে আশাকর্মীরা কোভিড সংক্রমণকালে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে চিকিৎসা পরিষেবায় নিয়োজিত ছিলেন, সরকার যাঁদের ওই আপৎকালীন পরিষেবার জন্য ঘোষিত অনুদানটুকুও ঠিকমতো দেয়নি, তাঁদের এ ভাবে অবজ্ঞা ও হেনস্থা করার মধ্য দিয়ে এই ‘শ্রমিক সংগঠনে’র চরিত্রটাই স্পষ্ট হয়ে গেল।

কেন এ ধরনের অবস্থান সিটুর? এর মধ্য দিয়ে ওরা শ্রমিক এবং মালিক উভয়কেই দুটি ভিন্ন বার্তা দিল। মালিককে দিল অভয় বার্তা। শ্রমিককে দিতে চাইল ভয়ের বাতাবরণ। রাজ্যের পুঁজিপতিদের বিপুল মুনাফার স্বার্থে সমস্ত রকম সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সরকার নিয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে মালিকদের আরও মদত পেতে এই ধরনের শ্রমিক বিরোধী অবস্থানের উদ্যোগ নেয় তারা।

পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম শাসনের শেষ লগ্নে তাদের মন্ত্রীরা শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে এ ভাবে প্রকাশ্যেই তাচ্ছিল্যের সাথে কথা বলতেন। এ রাজ্যের মানুষ যে তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল তা বিনা কারণে ছিল না। সেই একই দম্ভ আজ কেরালার নেতাদের আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে।